বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক (সাধারণ) পদে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষা আগামী ২ মে শুরু হবে। সহকারী পরিচালক পদে নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে যাঁরা বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরি করছেন, পরীক্ষার্থীদের প্রস্তুতির সুবিধার্থে তাঁদের মৌখিক পরীক্ষার অভিজ্ঞতা প্রকাশ করা হচ্ছে। এ পর্বে নিজের অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন গত বছর বাংলাদেশ ব্যাংকে সহকারী পরিচালক পদে নিয়োগ পাওয়া মো. নিয়ামত আলী খান।
সহকারী পরিচালক পদে নিয়োগ পরীক্ষায় সপ্তম হয়েছিলেন মো. নিয়ামত আলী খান। ৯ থেকে ১০ মিনিটের মতো ভাইভা নেওয়া হয় তাঁর। মৌখিক পরীক্ষার বোর্ডে চারজন সদস্য ছিলেন। ভাইভায় যেসব প্রশ্ন করা হয়েছিল, সব কটির উত্তর দিতে পেরেছিলেন তিনি।
মো. নিয়ামত আলী খান বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকে এডি পদে এটি ছিল আমার প্রথম ভাইভা। এর আগে সমন্বিত ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার পদের জন্য দুটি ভাইভা দিয়েছিলাম। বাংলাদেশ ব্যাংকের এডি পদের ভাইভায় বোর্ড চেয়ারম্যানসহ চারজন সদস্য ছিলেন। করোনার কারণে ভাইভা প্রার্থী আর বোর্ড মেম্বারদের মধ্যে বেশ দূরত্ব ছিল, চারজন সদস্য একে অপরের থেকে বেশ দূরে দূরে বসেছিলেন।
মো. নিয়ামত আলী খান
সহকারী পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক
(দরজা খুলে কক্ষে প্রবেশের অনুমতি নিলাম)
বোর্ড চেয়ারম্যান: আসুন। (হাত দিয়ে আমার বসার স্থান দেখিয়ে দিলেন)।
আমি অনুমতি নিয়ে ভেতরে গিয়ে বসে ধন্যবাদ জানালাম। মুখে মাস্ক ছিল, স্যার খুলতে বলেন।
সদস্য-১: (আমার ডকুমেন্ট ও সার্টিফিকেট দেখতে দেখতে আমার নাম বললেন) আপনি তো অনেক দিন আগে পাস করেছেন, রেজাল্টও বেশ ভালো। এখন কী করছেন?
প্রার্থী: বর্তমানে চাকরির জন্য পড়াশোনা করছি। এর আগে সাড়ে চার বছর প্রাইভেট জবে ছিলাম।
সদস্য-১: (কিছুটা ভ্রু কুচকে) কোথায় চাকরি করতেন?
প্রার্থী: ম্যাডাম, আমি তিনটি কোম্পানিতে চাকরি করেছি। (তিনটি কোম্পানির নাম বললাম।)
সদস্য-১: আপনি তো বেশ ভালো ভালো কোম্পানিতে ছিলেন। চাকরি ছাড়লেন কেন?
প্রার্থী: আমার মনে হয়েছে, স্কিল ও সামগ্রিকভাবে আমার সঙ্গে সরকারি চাকরি আরও মানানসই হবে। আর আমার স্ত্রী চাকরির সুবাদে ঢাকার বাইরে পোস্টেড, তাই তাঁকেও একটু সময় দেওয়া প্রয়োজন ছিল বলে চাকরি থেকে আপাতত বিরতি নিয়েছি।সদস্য-১: (উত্তরে মনে হলো বেশ খুশি হলেন) আপনাদের বেবি আছে?
প্রার্থী: না ম্যাডাম।
সদস্য-১: আপনি বুয়েট থেকে পড়াশোনা করেছেন ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে?
প্রার্থী: হ্যাঁ, ম্যাডাম।
সদস্য-২: আপনি তো আগে চাকরি করেছেন বললেন। আপনি কী কাজ করতেন?
প্রার্থী: স্যার, আমি সাপ্লাই চেইন প্ল্যানিং নিয়ে কাজ করতাম। সেখানে ম্যাটেরিয়ালস রিকোয়ারমেন্ট প্ল্যানিং ও প্রোডাকশন প্ল্যানিং নিয়ে কাজ করতাম।
সদস্য-২: আপনার কাছে আমাদের দেশের করপোরেট সেক্টরে প্রধান সমস্যা কী মনে হয়?
প্রার্থী: স্যার, আমার কাছে মূল সমস্যা মনে হয়, আমাদের করপোরেট সেক্টরে এক জেনারেশন বিজনেস প্রতিষ্ঠা করলেও পরবর্তী জেনারেশন সেটি ধরে রাখতে পারে না। কিংবা জেনারেশন চেঞ্জের সঙ্গে সঙ্গে কোম্পানি আর আগের মতো থাকে না। আর আমাদের দেশে মিড লেভেল ম্যানেজমেন্টে একটা বড় গ্যাপ আছে।
চেয়ারম্যান স্যার: মানে বলতে চাইছেন যে সাকসেসর সেভাবে তৈরি হচ্ছে না?
প্রার্থী: জি স্যার, আপনি ... কোম্পানির (আপাতত নাম উল্লেখ করছি না) কথা ধরুন, বাবার মৃত্যুর পর তাঁ দুই ছেলে নিজেদের মধ্যে বিবাদ করে এখন দেশছাড়া। ফলে কোম্পানির যাবতীয় ক্ষমতা এখন সিনিয়র কিছু সদস্যের হাতে, যাঁরা ক্ষমতা কুক্ষিগত করে এখন যা ইচ্ছা তা-ই করছেন। ফলে অনেক ভালো ভালো কর্মী চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। কোম্পানির বড় একটা লোকসান হয়েছে গত কয়েক বছরে। (এ-সংক্রান্ত একটি নিউজ ভাইভার কিছুদিন আগে প্রকাশিত হয়েছিল)।
সদস্য-৩: আপনি তো ফ্যাক্টরিতে চাকরি করেছেন। বলুন তো, আমাদের দেশের ফ্যাক্টরিগুলো কী পরিবেশদূষণ ঘটায়?
প্রার্থী: স্যার, অনেক কোম্পানি এখন গ্লোবাল কমপ্লায়েন্স মেনে অপারেশন চালায়। সংখ্যাটা আগের চেয়ে বেড়েছে। তবে বেশ কিছু কোম্পানির কারণে আমাদের নদীনালা, কৃষিজমির ক্ষতি হচ্ছে, বাস্তুতন্ত্র নষ্ট হচ্ছে।
সদস্য-৩: কীভাবে ক্ষতি করছে, একটু বলুন তো।
প্রার্থী: স্যার, তাদের বর্জ্য, ব্যবহৃত কেমিক্যাল, ময়লা পানি সরাসরি নদী বা খালে যাচ্ছে। কলকারখানা থেকে ধোঁয়া নির্গত হচ্ছে, যা বাতাসে মিশে যাচ্ছে। কিছু কারখানার ইটিপি নেই বা থাকলেও তার ক্যাপাসিটি প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অল্প।
সদস্য-৩: এগুলো কীভাবে বন্ধ করা যায়?
প্রার্থী: নিয়মিত অডিট, ইন্সপেকশন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারের সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরগুলোর লোকবল বাড়াতে হবে।
চেয়ারম্যান স্যার: আপনি বিসিএস দিয়েছেন?
প্রার্থী: একটি বিসিএস লিখিত পরীক্ষা দিয়েছি, এখনো ফলাফল পাইনি।
চেয়ারম্যান স্যার : বাংলাদেশ ব্যাংকে কেন চাকরি করতে চান?
প্রার্থী: স্যার, বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরিতে দেশে বৃহৎ পরিসরে সরাসরি অবদান রাখার সুযোগ রয়েছে। আর এখানে চাকরিতে বেশ কিছু সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।
সদস্য-১: কিছু সুযোগ-সুবিধার কথা বলুন তো..
প্রার্থী: কাজের পরিবেশ, পোস্টিং, পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে, যা আমার পরিবারের জন্যও ভালো হবে।
সদস্য-২: আচ্ছা, আপনি তো সহকারী পরিচালকে (জেনারেল) ভাইভা দিচ্ছেন। এর বাইরে আর কী কী পদ আছে নিয়োগের?
প্রার্থী: স্যার, সহকারী পরিচালক (সিভিল), সহকারী প্রোগ্রামার।
সদস্য-২: উনি ইঞ্জিনিয়ার তো তাই খালি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কথা বলছেন।
সদস্য-৩: আপনি ক্যাশের কথা শোনেননি, বাংলাদেশ ব্যাংকে সবচেয়ে বেশি তো এ কাজেই মানুষ আসছে। নিচে কাউন্টারে কত ভিড়!
প্রার্থী: জি স্যার, শুনেছি।
সদস্য-১: আচ্ছা, বলুন তো বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রথম গভর্নর কে ছিলেন?
প্রার্থী: এ এন এম হামিদুল্লাহ (শুনে সবাই মাথা নাড়ালেন)।
সদস্য-৩: (চেয়ারম্যান স্যারের দিকে) স্যার, ওকে এবার তাহলে ছেড়ে দিই?
চেয়ারম্যান স্যার: হ্যাঁ, (আমার দিকে তাকিয়ে), আপনি এখন আসতে পারেন।
প্রার্থী: ধন্যবাদ স্যার। আসসালামু আলাইকুম।