ব্যাংকিং খাতে অন্যতম আকর্ষণীয় চাকরি বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক পদ। বিসিএসের মতোই এই চাকরি তরুণ-তরুণীদের কাছে স্বপ্নের। গত ২৫ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংকে সহকারী পরিচালক (সাধারণ) পদে নিয়োগ পেয়েছেন ১৮১ জন। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার ফলাফলে প্রথম হয়েছেন আবদুল্লাহ আল নাঈম। সহকারী পরিচালক পদে এবার প্রথমবার পরীক্ষা দিয়েই প্রথম স্থান অর্জন করেছেন তিনি।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিষয়ে স্নাতক করেন নাঈম। এরপর ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএতে। আবদুল্লাহ আল নাঈম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আইবিএতে পড়ার সময় আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে কাজ করার আগ্রহ তৈরি হয়।
২০২০ সালে আমি প্রকৌশলী হিসেবে টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেডে চাকরি শুরু করলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকার হওয়ার ইচ্ছাটা ছিল। তাই চাকরি করার পাশাপাশি সহকারী পরিচালক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকে যোগদানের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা শুরু করি।’
চাকরির পাশাপাশি প্রস্তুতি নিয়েই সফল হয়েছেন নাঈম। তিনি বলেন, ‘কষ্ট হয়েছে কিন্তু অসম্ভব ছিল না। টেলিটকে চাকরি করার সময় অফিস থেকে আসার পর প্রায় দুই ঘণ্টা আর ভোরে দুই ঘণ্টা প্রস্তুতির জন্য পড়তাম। সময় কম পেলেও যেটুকু পেয়েছি, তার সঠিক ব্যবহার করার চেষ্টা করেছি।
যানজট আর কাজের ফাঁকে নিয়মিত দৈনিক প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার পত্রিকা পড়তাম। এগুলো আমাকে সব সময় দেশ-বিদেশের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ও অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে সাহায্য করেছে। ব্যাংকের পরীক্ষায় সাধারণত সাম্প্রতিক বিষয়গুলো নিয়ে বেশি প্রশ্ন থাকে, তাই দৈনিক পত্রিকা পড়ার অভ্যাস আমার খুবই কাজে লেগেছে। ছুটির দিনগুলোতে একটু বেশি সময় নিয়ে পড়তাম। বিগত বছরের প্রশ্নগুলো সমাধান করতাম।’
সহকারী পরিচালক পদে সাধারণত তিন ধাপে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ধাপগুলো হলো প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা। নম্বর বণ্টনে ভিন্নতা থাকলেও গুরুত্ব বিবেচনায় প্রতিটি ধাপই গুরুত্বপূর্ণ। আবদুল্লাহ আল নাঈমের কাছে প্রিলিমিনারি ধাপটি কঠিন মনে হয়েছে বলে জানান। তিনি বলেন, প্রিলিমিনারিতে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি থাকে। আবার নেগেটিভ মার্কিং থাকার কারণে সামান্য ভুলেই প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
যাঁরা নবীন প্রার্থী বাংলাদেশ ব্যাংকে সহকারী পরিচালক পদে চাকরি করার স্বপ্ন দেখছেন, তাঁদের উদ্দেশে আবদুল্লাহ আল নাঈম বলেন, যেকোনো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় ভালো করার জন্য প্রথম শর্ত পরীক্ষা ও প্রশ্নের ধরন সম্পর্কে আগেই পূর্ণাঙ্গ ধারণা নেওয়া। এরপর দরকার সুন্দর একটি পরিকল্পনা।
তবে এই পরিকল্পনা সবার জন্য যে এক হবে, তা নয়। ব্যক্তিভেদে ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। যার যেভাবে সুবিধা হয়, তার সেভাবে পরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিত। তবে সবারই পরিকল্পনা হওয়া উচিত দীর্ঘমেয়াদি, শর্টকাটে কখনো সফল হওয়া যায় না।
বিগত বছরের প্রশ্নগুলো সমাধানের মাধ্যমে চাকরির প্রস্তুতি শুরু করা উচিত বলে মনে করেন নাঈম। তাঁর মতে, আগেই সব প্রশ্নের সমাধান করলে কয়েকটি উপকার পাওয়া যায়। প্রশ্নের ধরন সম্পর্কে জানা যায়। এতে প্রস্তুতি এবং পরীক্ষার হলে বরাদ্দকৃত সময় নিয়ে পরিকল্পনা করা সহজ হয়। নিজের সবল ও দুর্বল দিকগুলো চিহ্নিত করা যায় এবং আগের প্রশ্নগুলো থেকে পরীক্ষায় প্রশ্ন এলে সহজেই উত্তর করা যায়।
সহকারী পরিচালক পদে সফল হতে গণিতে বেশি জোর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন আবদুল্লাহ আল নাঈম। তিনি বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই আমার গণিতের প্রতি অনেক আগ্রহ ছিল। অষ্টম শ্রেণি থেকে আমি ডাচ্বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো গণিত উৎসবে নিয়মিত অংশগ্রহণ করি।
এখানে অংশগ্রহণ করে গণিতকে নতুনভাবে জেনেছি।’ নাঈম বলেন, গণিত বিষয়ে নিয়মিত অনুশীলন ছাড়া সহকারী পরিচালক পদে সফল হওয়া কঠিন। কারণ, এই অংশে ভালো করতে পারলে সহজেই অন্য প্রতিযোগীদের থেকে এগিয়ে যাওয়া যায়। গণিতের ক্ষেত্রে শুধু সমাধান নয়, বরং কম সময়ে সমাধানের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।