বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক (এডি) পদে ২০২৫ ব্যাচে চূড়ান্ত ফলাফলে প্রথম হয়েছেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী মোছা. জান্নাতুল ফেরদৌস। সহকারী পরিচালক (সাধারণ) পদে প্রস্তুতির সার্বিক বিষয়ে কথা বলেছেন প্রথম আলোর প্রতিবেদক আব্দুর রাজ্জাক সরকারের সঙ্গে।
অভিনন্দন আপনাকে। সহকারী পরিচালক (সাধারণ) পদে প্রথম হবেন আগেই মনে হয়েছিল কি?
জান্নাতুল ফেরদৌস: চূড়ান্ত ফলাফলের তালিকায় প্রথম রোলটাই যে নিজের হবে, সেটা কখনোই ভাবিনি। চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে শুনে ভেবেছি, শেষ থেকে রোলটা খুঁজে দেখি। প্রথম রোলটাই নিজের দেখে অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে ছিলাম। বারবার প্রবেশপত্রের সঙ্গে মিলিয়ে দেখছিলাম। অন্য রকম এক অনুভূতি কাজ করেছে, যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকে এটাই প্রথম চাকরির পরীক্ষা, নাকি আগেও দিয়েছিলেন?
জান্নাতুল ফেরদৌস: এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক পদে ২০২২ ও ২০২৩ সালে পরপর দুবার প্রিলিমিনারি ও লিখিত পাস করে ভাইভায় অংশগ্রহণ করি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে দুবারই শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছিল। একই সঙ্গে ২০২৪ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের অফিসার (সাধারণ) পদে ভাইভায় অংশগ্রহণ করি ও চূড়ান্ত ফলাফলে উত্তীর্ণ হয়ে যোগ দিই।
অনেক চাকরিপ্রার্থীর কাছে স্বপ্নের চাকরি এডি। এমন স্বপ্ন আগে থেকে ছিল কি?
জান্নাতুল ফেরদৌস: স্নাতক পাস করে ক্যারিয়ার নিয়ে কিছুটা দোদুল্যমান ছিলাম। টেক্সটাইল খাতে কিছুদিন চাকরি করার পর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে যোগ দিই। পরে করোনাভাইরাসের ছুটিতে সরকারি চাকরির প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করি। আমার স্বামী প্রস্তুতির সার্বিক দিকনির্দেশনা দিয়ে সাহায্য করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকার হওয়ার স্বপ্ন নিয়েই আমি প্রস্তুতি শুরু করি।
প্রতিটি প্রশ্নের ধরন সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করে এগিয়েছি। প্রিলির জন্য আগের বছরগুলোর প্রশ্ন সমাধানের পাশাপাশি বাসায় মডেল টেস্ট দিয়েছি। অনলাইনে আইইএলটিএসের আর্গুমেন্টগুলো দেখে পরীক্ষায় কীভাবে উপস্থাপন করব, সে বিষয়ে ধারণা নিয়েছি।
স্কুল ও কলেজ কোথায় পড়েছেন, স্নাতক করেছেন কোথায়?
জান্নাতুল ফেরদৌস: কুড়িগ্রামের চর রাজিবপুর উপজেলার কলেজপাড়া গ্রামে আমার বেড়ে ওঠা। রাজিবপুর পাইলট উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ময়মনসিংহের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করি। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ–৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হই। এরপর বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১৮ সালে ওয়েট প্রসেসিং বিভাগ থেকে সিজিপিএ-৩.৮৭ পেয়ে স্নাতক পাস করি।। চাকরি শুরু করায় স্নাতকোত্তর করা হয়ে ওঠেনি।
এডি পদে পরীক্ষার প্রস্তুতি কীভাবে নিয়েছেন?
জান্নাতুল ফেরদৌস: প্রতিটি প্রশ্নের ধরন সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করে এগিয়েছি। প্রিলির জন্য আগের বছরগুলোর প্রশ্ন সমাধানের পাশাপাশি বাসায় মডেল টেস্ট দিয়ে প্রস্তুতি যাচাই করেছি। লিখিত পরীক্ষার জন্য আমার আগের ভুলগুলো সময় নিয়ে খুঁজে বের করেছি। ফ্রি হ্যান্ড রাইটিংয়ে দক্ষতা বাড়ানোর জন্য বাংলা ও ইংরেজিতে নিয়মিত লিখেছি। অনলাইনে আইইএলটিএসের আর্গুমেন্টগুলো দেখে পরীক্ষায় কীভাবে উপস্থাপন করব, সে বিষয়ে ধারণা নিয়েছি। দুই ঘণ্টা সময়ের মধ্যে সব গুছিয়ে খাতায় উপস্থাপন করা বড় চ্যালেঞ্জ। এ জন্য নির্দিষ্ট সময় বরাদ্দ করে বাসায় অনুশীলন করেছি।
এডির প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার মধ্যে কোন ধাপটি বেশি কঠিন মনে হয়?
জান্নাতুল ফেরদৌস: এখানে প্রতিটি ধাপই গুরুত্বপূর্ণ। এবারের পরীক্ষায় প্রিলিমিনারির প্রশ্ন বেশ কঠিন হয়েছিল। প্রিলিতে নেগেটিভ মার্কিং থাকায় খুব সতর্কভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। তবে ব্যাংকের পরীক্ষায় লিখিত অংশে ভালো নম্বর চূড়ান্ত চাকরি প্রাপ্তিতে বড় ভূমিকা রাখে। সব মিলিয়ে আমার কাছে প্রতিটি ধাপই চ্যালেঞ্জিং মনে হয়েছে।
নতুন যাঁরা এডি পদের জন্য পড়ছেন, তাঁরা কীভাবে প্রস্তুতি নিলে সফল হবেন? তাঁদের জন্য কোনো পরামর্শ?
জান্নাতুল ফেরদৌস: প্রিলিমিনারিতে ভালো করার জন্য মডেল টেস্ট দিয়ে নিজেকে যাচাই করতে হবে। নিজের দুর্বল দিকগুলোয় বেশি সময় দিতে হবে। দ্রুত গণিত সমাধানের জন্য নিয়মিত অনুশীলন করতে হবে। ফ্রি হ্যান্ড রাইটিংয়ে ভালো করার জন্য নিয়মিত লেখার বিকল্প নেই। লিখিত পরীক্ষায় বরাদ্দকৃত দুই ঘণ্টা সময়ের ব্যবস্থাপনা খুব সতর্কভাবে করতে হবে। সম্পূর্ণ নিজের মতো করেই পরিকল্পনা গ্রহণ করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। তবে সফলতা সব সময় অল্পতেই আসে না, ব্যর্থ হলেও নিজের ভুলগুলো খুঁজে বের করে শুধরে নিয়ে আবার চেষ্টা করতে হবে।