৪৩তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা চলবে ১২ অক্টোবর পর্যন্ত। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ৯ হাজার ৮৪১ প্রার্থী মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেবেন। প্রতিদিন ১৮০ জনের ভাইভা নিচ্ছে পিএসসি। প্রার্থীদের প্রস্তুতির সুবিধার জন্য আগে যাঁরা মৌখিক পরীক্ষা দিয়ে সফল হয়েছেন, তাঁদের অভিজ্ঞতা প্রথম আলোয় প্রকাশ করা হচ্ছে। নিয়মিত আয়োজনের আজ ১৫তম পর্বে মৌখিক পরীক্ষার অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন ৪১তম বিসিএসে পররাষ্ট্র ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত মো. শাহাদাত হোসেন।
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট (আইবিএ) থেকে স্নাতকোত্তর করেন মো. শাহাদাত হোসেন। ৪১তম বিসিএসেই প্রথম বিসিএস তাঁর। এ বিসিএসে তাঁর প্রথম পছন্দ ছিল পররাষ্ট্র ক্যাডার, দ্বিতীয় প্রশাসন ক্যাডার ও তৃতীয় শুল্ক ও আবগারি ক্যাডার। নিজের প্রথম বিসিএসেই পেয়েছেন পছন্দের ক্যাডার।
গত ২১ মার্চ মৌখিক পরীক্ষা দেন মো. শাহাদাত হোসেন। তাঁকে ১৫-১৮টি প্রশ্ন করা হয়। একটি বাদে সব প্রশ্নের উত্তর পেরেছিলেন তিনি। যেহেতু শাহাদাত হোসেনের প্রথম পছন্দ ছিল পররাষ্ট্র ক্যাডার, তাই ভাইভা বোর্ডে তাঁকে সব প্রশ্ন ইংরেজিতে করা হয়।
মৌখিক পরীক্ষার কক্ষে প্রবেশের পর শাহাদাত হোসেনের কাছে জানতে চাওয়া হয়, কোন ক্যাডার পছন্দক্রমের প্রথমে। এরপর ব্লু ইকোনমি ব্যাখ্যা করতে বলা হয়। উত্তরে তিনি বলেন, ব্লু ইকোনোমি বলতে আমরা সব সামুদ্রিক সম্পদের টেকসই ব্যবহার এবং ব্যবস্থাপনা বুঝি, যা আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করবে, জীবনযাত্রার মান উন্নত করবে এবং সামুদ্রিক বাস্তুসংস্থানকে সংরক্ষণ করবে। ম্যারিন ফিসারিজ, শিপিং, জাহাজভাঙা শিল্প, পর্যটন ইত্যাদি ব্লু ইকোনোমির অন্তর্ভুক্ত। ২০১২ এবং ২০১৪ সালে যাথাক্রমে ইটলস এবং পিসিএ-এর রায়ে মিয়ানমার এবং ভারত থেকে বাংলাদেশ ১ লাখ ১১ হাজার ৬৩১ এবং ১৯ হাজার ৪৬৭ বর্গ কিলোমিটার সমুদ্র এলাকা জয় করে। এর মাধ্যমে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে ব্লু ইকোনোমি বা সুনীল অর্থনীতির দ্বার উন্মোচিত হয় বাংলাদেশের।
জাহাজভাঙা শিল্প পরিবেশের কোনো ক্ষতি করছে কি না, এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাহাদাত হোসেন বলেন, জাহাজভাঙা শিল্প বিষাক্ত পদার্থ যেমন লেড, মার্কারি ইত্যাদি ছড়াচ্ছে। এর মাধ্যমে বায়ু, পানি ও মাটি দূষিত হচ্ছে। শব্দদূষণ হচ্ছে। জাহাজের বর্জ্য সমুদ্রের জলজ এবং জীবজ ভারসাম্য নষ্ট করছে।
জাহাজভাঙা শিল্প বন্ধ করে দেওয়া উচিত কি না, এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাহাদাত হোসেন বলেন, বন্ধ করে দেওয়া উচিত না। কারণ, ছয় বছর ধরে বাংলাদেশ এই শিল্পে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে, যা আমাদের অর্থনৈতিক গতিকে ত্বরান্বিত করছে। আমরা এ ক্ষেত্রে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং তদারকি বৃদ্ধি করতে পারি। Reduce-reuse-recycle নামে পরিচিত থ্রি-আর পলিসি বাস্তবায়ন করতে পারি। পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি এবং পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়নের মাধ্যমে সম্ভাব্য ঝুঁকি চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে পারে।
ভূরাজনীতি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে শাহাদাত হোসেন বলেন, ভূরাজনীতি হচ্ছে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ওপর ভৌগলিক ক্ষমতার প্রভাবের বিশ্লেষণ এবং নির্দিষ্ট পরিসরে স্বার্থ উদ্ধারে ভৌগোলিক অবস্থানের যথোপুযুক্ত ব্যবহার। বাংলাদেশের ফরেন পলিসি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে সংবিধানের ২৫ নম্বর অনুচ্ছেদের রেফারেন্স দিয়ে এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দর্শনকে ভিত্তি করে উত্তর দেন।
জাতিসংঘে বাংলাদেশের একজন প্রতিনিধি হিসেবে বাংলাদেশের অগ্রগতি নিয়ে বক্তব্য দিতে বলা হয়। মো. শাহাদাত হোসেন দাঁড়িয়ে তিন-চার মিনিট বক্তব্য দেন। এরপর জানতে চাওয়া হয় স্মার্ট বাংলাদেশ বলতে কী বোঝো? এর উত্তরে তিনি বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ হলো বাংলাদেশ সরকারের একটি প্রতিশ্রুতি ও শ্লোগান, যা ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরের পরিকল্পনা। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার চারটি ভিত্তি স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট সোসাইটি, স্মার্ট ইকোনমি ও স্মার্ট গভর্নমেন্ট।