৪৪তম বিসিএসে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ১১ হাজার ৭৩২ জন প্রার্থীর মৌখিক পরীক্ষা চলছে। পরীক্ষা চলবে ৩১ জুলাই পর্যন্ত। এখন প্রতিদিন ৯০ জন করে প্রার্থীর ভাইভা হচ্ছে। ৯ জুলাই থেকে প্রতিদিন ১৮০ জন প্রার্থীর ভাইভা নেবে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। প্রার্থীদের প্রস্তুতির সুবিধার জন্য আগে যাঁরা মৌখিক পরীক্ষা দিয়ে সফল হয়েছেন, তাঁদের অভিজ্ঞতা প্রথম আলোয় প্রকাশ করা হচ্ছে। নিয়মিত আয়োজনের আজ পঞ্চম পর্বে মৌখিক পরীক্ষার অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন ৪৩তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে (পঞ্চম) সুপারিশপ্রাপ্ত আবদুল বাছিত মোল্লা।
বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার, বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক (এডি) ও বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিসের (বিজেএস) সহকারী জজ পদ—এই শীর্ষ তিন চাকরিই পেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে পাস করা আবদুল বাছিত মোল্লা। ৪৩তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে (পঞ্চম) সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন তিনি। গত ১৪ সেপ্টেম্বর বিসিএসের ভাইভা দেন। প্রায় ২৮ মিনিটের ভাইভায় ২৫টি প্রশ্ন করা হয়েছিল। দু-তিনটি প্রশ্ন বাদে সবগুলোর উত্তর দিয়েছিলেন।
বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার, বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক (এডি) ও বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিসের (বিজেএস) সহকারী জজ পদ—এই তিন চাকরির ভাইভার মধ্যে কোনটি কঠিন মনে হয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে আবদুল বাছিত মোল্লা বলেন, ‘তিনটি ভাইভার মধ্যে সহকারী জজ পদের ভাইভা তুলনামূলক কঠিন মনে হয়েছে। কারণ, এখানে আইনের অনেক খুঁটিনাটি বিষয় জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। মুখস্থ করা বিষয়। এ কারণে কঠিন মনে হয়েছে। ব্যাংকের সহকারী পরিচালক ও বিসিএস ভাইভা ছিল অনেকটা ভাইভা বোর্ডে গিয়ে গল্প করার মতো। বিভিন্ন বিষয়ে বিশ্লেষণ বা মতামত দেওয়া। মুখস্থ বিষয় কম ছিল। এ দুই ভাইভায় বোর্ডও আমার অনেক প্রশংসা করেছিল। এডির ভাইভা ছিল ২৩ মিনিট আর বিসিএসের ভাইভা ২৮ মিনিট। কিন্তু ভাইভা দুটি এতটাই উপভোগ করেছি যে এত সময় পেরিয়ে গেছে বুঝতেই পারিনি। সহকারী জজ পদের ভাইভা মাত্র ৮-৯ মিনিট হয়েছিল, কিন্তু এটাই বেশি কঠিন মনে হয়েছে।’
আবদুল বাছিত মোল্লা বলেন, ‘৪৩তম বিসিএসে মৌখিক পরীক্ষার কক্ষে প্রবেশের আগে মনে হচ্ছিল এটা আমার যে কোনো চাকরির শেষ ভাইভা। আর কোনো পরীক্ষা আমি দেব না। যথাসম্ভব শান্ত থাকার চেষ্টা করেছি। লিখিত পরীক্ষা খুব ভালো দিয়েছি মনে হয়নি, আবার আমি তো ইতিমধ্যে ভালো একটা চাকরিতে আছি। এ কারণে এটাও মনে হয়েছে যে বোর্ড এতটা অ্যাপ্রিশিয়েট না–ও করতে পারে। আমি নার্ভাস ছিলাম না। বোর্ডে গিয়ে দেখি পুরোই উল্টো। আমাকে খুবই উৎসাহ দিয়েছেন স্যাররা।’
মৌখিক পরীক্ষার কক্ষে প্রবেশের পর আবদুল বাছিত মোল্লাকে প্রশ্ন করা হয়—এখন কী করছেন? বিসিএসে প্রথম পছন্দ কী? উত্তরে বলেন, সহকারী জজ পদে কর্মরত আছি। বিসিএসে আমার প্রথম পছন্দ প্রশাসন ক্যাডার।
সহকারী জজ হিসেবে কী কী মামলা দেখেন, আদালতে কাজ করতে গিয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলে কী কী সমস্যা দেখতে পান, এমন প্রশ্নের উত্তরে বাছিত বলেন, জমিজমা, পারিবারিক আদালতে নারীদের দুরবস্থা ইত্যাদি ব্যাখ্যা করেন।
‘যে শিক্ষা মানুষের কোনো উপকারে আসে না, সেই শিক্ষা প্রকৃত শিক্ষা নয়’—এ বিষয়ে তিন মিনিট বক্তৃতা দিতে বলা হয়। বিভিন্ন মনীষীদের উদাহরণ দিয়ে দুই মিনিট বলার পর রিপিট হচ্ছিলের বাছিতের। তিনি বলেন, ‘যেহেতু আর বিসিএস দেব না, তাই সর্বোচ্চ চেষ্টা করে তিন মিনিট, যা পারি বললাম।’
চীনের কনফুসিয়াস ও দর্শন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে জানতে চাওয়া হলে বাছিত বলেন, ‘আমাদের পররাষ্ট্রনীতি হলো, ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’। সংবিধানে পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে কী বলা আছে, সে সম্পর্কেও প্রশ্ন করা হয়।
আবদুল বাছিত মোল্লা যে সময় ভাইভা দেন, তখন ভারতে জি–২০ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। জি–২০ সম্মেলনে বাংলাদেশের অর্জন নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। উত্তরে বলেন, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে প্রতিবেশী দেশগুলোর সরকারপ্রধানদের মধ্যে একমাত্র আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। এ ছাড়া শুধু জো বাইডেন ও আমাদের প্রধানমন্ত্রী ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাসভবনে আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন।’
জি–২০ সম্মেলনে কি নতুন কোনো জোট গঠিত হয়েছে? এমন প্রশ্নে বাছিত উত্তর দেন, ভারত থেকে ইসরায়েল পর্যন্ত একটি বাণিজ্য রুটের প্রস্তাবনার কথা বলা হয়েছে। বিভিন্ন বিশ্লেষণে পড়েছি, এটা চীনের বিআরআইয়ের পাল্টা উদ্যোগ। কারণ, এই উদ্যোগ থেকে চীন ও পাকিস্তানকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
এসব তথ্য কোথায় পেয়েছেন, এমন প্রশ্ন করা হলে বাছিত বলেন, প্রথম আলোতে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা আ ন ম মুনীরুজ্জামানের লেখা থেকে পড়েছি। তিনি একটি গবেষণাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতি।
সহকারী জজের চাকরি থেকে এনওসি এনেছেন কি না এবং সহকারী জজের চাকরি ছেড়ে প্রশাসন ক্যাডারে কেন আসবেন, এমন প্রশ্নও করা হয়েছিল। জীবনের লক্ষ্য কী? এটাও জানতে চাওয়া হয়েছিল।