করোনাভাইরাস মোকাবিলায় দ্রুত সময়ের মধ্যে ৩ হাজার স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ দেওয়ার কথা চূড়ান্ত করেছে সরকার। মূলত তিনটি পদে এসব স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ দেওয়া হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে করনোর এই সময়ে বিশেষ বিবেচনায় তাঁদের নিয়োগ দেওয়া হবে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, যে তিনটি পদে নিয়োগ দেওয়া হবে সে তিনটি পদ হচ্ছে, মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট, মেডিক্যাল টেকনেশিয়ান ও কার্ডিওগ্রাফার।
তিন হাজারের মধ্যে এক হাজার ২০০ জন মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট, এক হাজার ৬৫০ জন মেডিক্যাল টেকনেশিয়ান এবং কার্ডিওগ্রাফার ১৫০ জন নিয়োগ দেওয়া হবে।
দেশে এখন দিন দিন করোনা আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। স্বাস্থ্য কর্মীও অনেকে আক্রান্ত হচ্ছেন। এই অবস্থায় জোড়ালো হয়ে উঠেছে স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগের বিষয়টি।
অথচ মেডিকেল টেকনোলজিস্ট পদে দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ১১ বছর ধরে নিয়োগই বন্ধ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সুপারিশ অনুযায়ী যেখানে প্রতি চিকিৎসকের বিপরীতে ৫ জন করে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট থাকা উচিত, সেখানে বাংলাদেশে এই হার প্রতি চারজন চিকিৎসকের বিপরীতে একজন। আর প্রতি ১০ হাজার মানুষের বিপরীতে শূন্য দশমিক ৩২ জন।
সর্বশেষ হেলথ বুলেটিনের (নভেম্বর, ২০১৮) তথ্য বলছে, বিভিন্ন পর্যায়ের হাসপাতালে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট পদ রয়েছে ৭ হাজার ৯২০টি। কিন্তু আছেন ৫ হাজার ১৮৪ জন। ২ হাজার ৭৩৬টি পদে কোনো লোকবল নেই। মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ফার্মেসি) পদ সবচেয়ে বেশি ফাঁকা রয়েছে। এর পরই রয়েছে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) এর পদ।
বুলেটিনের তথ্য অনুযায়ী, ২ হাজার ২৩৭টি পদের বিপরীতে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) আছেন ১ হাজার ৪৮৮ জন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মেডিকেল টেকনোলজি বিষয়ে কে পড়াবে— স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ না কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে এই টানাপড়েনেই কেটে গেছে ১১ বছর। এর মধ্যে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শীর্ষস্থানীয়দের দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে, নতুন দুটি আইন হয়েছে, উচ্চ আদালতে মামলা চলেছে, রায়ও হয়েছে সাড়ে তিন বছর আগে— কিন্তু হয়নি শুধু নিয়োগ।
বাংলাদেশ মেডিকেল টেকনোলজিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক মহাসচিব মো. সেলিম মোল্লা সম্প্রতি এক বিবৃতিতে বলেছেন, 'বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে জনস্বার্থে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে পাস করা প্রায় ১৫ হাজার বেকার মেডিকেল টেকনোলজিস্টকে (ল্যাবরেটরি) এ কাজে নিযুক্ত করলে নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা সহজ হবে।'
করোনাভাইরাসের প্রকপ মোকাবিলায় এই স্বাস্থ্যকর্মী নিয়গের বিষয়টি জোড়ালো হয়ে উঠে। এই সময়ে এসে সরকার এই তিন হাজার স্বাস্থ্যকর্মী নেওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত করে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) ভাইরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সুলতানা শাহানা বানু বলেন, করোনা পরীক্ষার জন্য যে ল্যাবগুলো নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে সেখানে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম এবং দক্ষ ও পর্যাপ্ত মেডিকেল টেকনোলজিস্টের অভাব রয়েছে। সরকারি হাসপাতালগুলোতে গত এক দশকে কোনো মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগ দেওয়া হয়নি। দেশে কেবলমাত্র কয়েকজন ভাইরোলজিস্ট রয়েছেন এবং তারা বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় অন্য চিকিৎসকদের (ভাইরোলজিস্ট নন) সহায়তায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
তিন হাজার স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) হাবিবুর রহমান খান প্রথম আলোকে বলেন, দ্রুতই তিন হাজার স্বাস্থ্যকর্মী নেওয়া হবে। এক হাজার ২০০ জন মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট, এক হাজার ৬৫০ জন মেডিক্যাল টেকনেশিয়ান এবং কার্ডিওগ্রাফার ১৫০ জন নিয়োগ দেওয়া হবে।
এই সময়ে কীভাবে এই নিয়োগ বাস্তবায়ন করা হবে জানতে চাইলে হাবিবুর রহমান খান বলেন, এখন বিজ্ঞপ্তি দিয়ে পরীক্ষা নিয়ে নিয়োগ দেওয়ার অবস্থা নেই। কীভাবে কারিগরি পরীক্ষা নিয়ে কম সময়ে নিয়োগ দেওয়া যায় তা নিয়ে আমরা কাজ করছি। আমাদের যেমন লোক নিয়োগ দিতে হবে তেমনি দক্ষ লোক যাতে নিয়োগ পায় সে দিকটিও দেখতে হচ্ছে। আশা করি দ্রুত সময়েই এই নিয়োগ সম্পন্ন হবে।