করনাভাইরাস সংক্রমণ বাড়তে থাকায় দ্রুত চিকিৎসক নিয়োগে উদ্যোগ নিয়েছে সরকারে। এ জন্য ৩৯তম বিশেষ বিসিএসে উত্তীর্ণদের থেকে চিকিৎসক নিয়োগের বিষয়টি ভাবা হচ্ছে। পিএসসি ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্র বলছে, দ্রুততম সময়ের মধ্যে চিকিৎসক নিয়োগ দিতে হলে এটিই তাদের কাছে একমাত্র মনে হচ্ছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে তাঁরা নিয়োগের কাজ দ্রুত শেষ করতে চায়। বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) বলছে, সরকার চাইলে বিশেষ এই উদ্যোগ নিয়ে কাজ করতে প্রস্তুত পিএসসি। আর চিকিৎসকদের সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ) ৩৯তম বিশেষ বিসিএস থেকে নতুন চিকিৎসক নেওয়ার পক্ষে মত দিয়ে ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে চিঠি দিয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি পেয়েছেন তাঁরা। এটি নিয়ে কাজ করছেন।
করনাভাইরাসের বিস্তারের পর চিকিৎসক সংকটের কারণে আক্রান্তদের চিকিৎসা ও অন্যান্য রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতালগুলো। এ অবস্থায় পরিস্থিতি মোকাবিলের জন্য নতুন ২ হাজার চিকিৎসক নিয়োগের কথা জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, 'আমরা লক্ষ করেছি বেশ কিছু হাসপাতালে রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে আমাদের চিকিৎসক, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা আক্রান্ত হয়েছেন। এর জন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করি এবং তাদের সুস্থতা কামনা করি। এ অবস্থায় যেহেতু নতুন নতুন হাসপাতাল করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য প্রস্তুত করছি এবং বেশ কিছু চিকিৎসককে কোয়ারেন্টিনে যেতে হয়েছে, তাই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে নতুন দুই হাজার চিকিৎসক এবং ছয় হাজার নার্স আমরা নিয়োগের ব্যবস্থা করছি। আমরা আশা করি এই নিয়োগের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা আরও জোরদার হবে।'গত বৃহস্পতিবার করোনা পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রতিদিনের স্বাস্থ্য বুলেটিনে তিনি এসব কথা বলেন।
চিকিৎসকদের সংগঠন বাংলাদেশ ডক্টরস ফাউন্ডেশনের তথ্যমতে, গতকাল শনিবার পর্যন্ত দেশের ২৮৭ জন চিকিৎসক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁদের অধিকাংশই সরকারি হাসপাতালে কর্মরত। পিএসসি সূত্র জানায়, ৩৯তম বিশেষ বিসিএসে পিএসসি থেকে ৪ হাজার ৭৯২ জন চিকিৎসক নিয়োগের সুপারিশ করা হয়। ওই বিসিএসে উত্তীর্ণ ৮ হাজার ৩৬০ জনের নাম ঘোষণা করা হয়। সুপারিশ পাওয়ার পর অপেক্ষমান তালিকা থেকে দুই হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া সম্ভব বলে মনে করে পিএসসি।
জানতে চাইলে পিএসসি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, নতুন ভাবে চিকিৎসক নিয়োগ দিতে গেলে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, কয়েক দফা পরীক্ষার আয়োজন করতে হবে। যা সময় সাপেক্ষ। সেই অবস্থাও এখন নেই। তিনি জানান, দেশে এখন চিকিৎসক সংকট। এই বিশেষ সংকটের সময় জাতীয় স্বার্থের কথা বিবেচনা করে ৩৯তম বিশেষ বিসিএসের অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে মেধার ভিত্তিতে ২ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া সম্ভব। এরা সবাই পররীক্ষিত। সবাই পাশ করেছেন। পদ কম থাকার কারণে আমরা তাদের নিয়োগের সুপারিশ করতে পারি নি, তাই অপেক্ষমাণ তালিকায় রেখেছি। সরকার এখন ২ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ করতে চাইলে আমাদের সেই প্রস্তুতি আছে। চাহিদা পেলেই আমরা এ বিষয়ে দ্রুত সময়ে কাজ করতে পারি।
পিএসসি জানায়, ২০১৮ সালে ১০ এপ্রিল ৩৯তম বিশেষ বিসিএসের আবেদন কার্যক্রম শুরু হয়, শেষ হয় ৩০ এপ্রিল। পরে ওই বছরের ৩ আগস্ট এই বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়, এতে ৩৭ হাজার ৫৮৩ জন অংশ নেন। পরীক্ষায় পাস করেন মোট ১৩ হাজার ৭৫০ জন চিকিৎসক। এর মধ্যে সহকারী সার্জন পদে ১৩ হাজার ২১৯ চিকিৎসক ও ৫৩১ জন সহকারী ডেন্টাল সার্জন পদে উত্তীর্ণ হন।
জানতে চাইলে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব হাবিবুর রহমান খান প্রথম আলোকে বলেন, আমরা দ্রুত চিকিৎসক নিয়োগের কাজ শেষ করতে চাই। ৩৯তম বিশেষ বিসিএসের অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে ২ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে কাজ করছে সরকার। আমরা কিছু আনুষ্ঠানিকতার কাজ করছি। এসব কাজ দ্রুত সময়ে করা হচ্ছে। শিগগিরই তাঁদের নিয়োগ করা হবে। তিনি জানান, স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়োগ করতে জনপ্রসাশন মন্ত্রনালয়ের কাছে একটি তালিকা চাওয়া হয়েছে, এমন চিঠি পেয়েছেন তিনি। বর্তমানে করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রচুর স্বাস্থ্যকর্মী দরকার বলেও জানান তিনি।
চিকিৎসক নিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে জনপ্রসাশনের একজন দায়িত্বশিল কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, এই কাজটা মূলত স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় ও পিএসসি করবে। তাঁদের কাছে এ সংক্রান্ত অনুমতি চাওয়া হলে তারা এটি দ্রুত অনুমোদনের ব্যবস্থা নেবেন।
৩৯ বিশেষ বিসিএস থেকে চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া প্রস্তাব করেছে চিকিৎসকদর সংসঠন বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ)। সংগঠনটির মহাসচিব ইহতেশামুল হক চৌধুরী সম্পতি এ সংক্রান্ত প্রস্তাবনা সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে দিয়েছেন। তিনি জানান, ৩৯তম বিশেষ বিসিএস থেকে মেধার ভিত্তিতে চিকিৎসক নেওয়া যেতে পারে। তাঁদের নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি সহজ বলে মনে করেন তিনি।
৩৯তম বিশেষ বিসিএসে পাশ করে অপেক্ষমাণ তালিকায় থাকা চিকিৎসক রাফা বিনতে নূর বলেন, আমরা ৩৯তম বিশেষ বিসিএসে পাশ করেছি। দেশের এই পরিস্থিতিতে নিয়োগ দেওয়া অন্য চিকিৎসকদের ওপর চাপ কমে আসবে ও মানুষ চিকিৎসা বঞ্চিত হবে না। এছাড়া আমাদের কর্ম সংস্থান হলে অনেক পরিবার উপকৃত হবে।
নিয়োগ পায়নি ৬২ জন:
৩৯তম বিসিএসে পিএসি থেকে নিয়োগের সুপারিশ পেয়েছেন কিন্তু পুলিশ প্রতিবেদনে ত্রুটি থাকার কারণে নিয়োগ পাননি এমন চিকিৎসক আছেন ৬২ জন। তাঁরা দ্রুত তাঁদের নিয়োগের বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
এমন কয়েকজন চিকিৎসক প্রথম আলোকে বলেন, অনেকের প্রতিবেদনে ত্রুটি ছিল কিন্তু তাঁদের অনেকের নিয়োগ হয়েছে। এ পর্যন্ত ৭ বার গেজেট হয়েেছে। কিন্তু আমাদের নিয়োগ হয় নি। আমাদের কথা বিবেচনা করার জন্য আমারা সরকারের প্রতি আবেদন জানাচ্ছি।