বাংলাদেশের শিক্ষিত যুবকদের বেশির ভাগই সরকারি চাকরি চান। অপরদিকে শিক্ষাবঞ্চিত বা স্বল্পশিক্ষিত অতিদরিদ্র আর নিম্নবিত্তরা জীবিকার তাগিদে চান বিদেশে পাড়ি জমাতে। যুবসমাজের মাত্র এক-পঞ্চমাংশ বিশ্বাস করেন যে তাদের শিক্ষা চাকরি পেতে সহায়তা করবে।
ব্র্যাক, ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথভাবে সম্প্রতি পরিচালিত জাতীয়ভাবে প্রতিনিধিত্বমূলক একটি যুব-জরিপ থেকে উঠে এসেছে এসব তথ্য।
আজ বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে জরিপের ফল প্রকাশ করা হয়।
ব্র্যাক যুব জরিপ ২০১৮ শীর্ষক জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে বাংলাদেশের জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ হচ্ছে যুব। দেশে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর (১৫ থেকে ৫৯ বছর বয়সী) সংখ্যা কর্ম সক্ষমতাহীন ব্যক্তির (১৫ বছরের নিচে এবং ৬০ বছরের ওপরে) সংখ্যার চেয়ে বেশি। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে সমৃদ্ধ করতে এই যুবরা মূল চালিকাশক্তি হতে পারে। এই পরিপ্রেক্ষিতে যুবদের দৃষ্টিভঙ্গি জানতেই এই যুব-জরিপ পরিচালনা করা হয়।
জরিপে পুরো দেশকে পাঁচটি অঞ্চলে ভাগ করে প্রতিটি অঞ্চল থেকে দৈবচয়নের ভিত্তিতে ৩০টি উপজেলা/থানা নির্বাচন করা হয়। সেখান থেকে দুটি ইউনিয়ন/ওয়ার্ড নিয়ে আবার একটি করে গ্রাম/মহল্লা নির্বাচন করা হয়। তারপর আবার দৈবচয়নের ভিত্তিতে নির্বাচন করা হয় ১৪ জনকে (সাতজন পুরুষ, সাতজন নারী)। এভাবে ১৫-৩৫ বছর বয়সী মোট ৪ হাজার ২০০ জনের অভিমত সংগ্রহ করা হয়েছে।
এই জরিপে প্রথমত যুবদের আত্মপরিচয় ও তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করা হয়। এরপর নজর দেওয়া হয় তাদের শিক্ষা ও দক্ষতার নিরিখে উপার্জনমূলক কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার প্রস্তুতি ও পছন্দের বিষয়ে।
ইংরেজি এবং কম্পিউটারে দক্ষতা মাত্র ১৬%
জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৭% পুরুষ এবং ৪% নারী ছিলেন উচ্চশিক্ষিত, বৃত্তিমূলক শিক্ষা ছিল ১৪%-এর। ইংরেজি ভাষা এবং কম্পিউটার দক্ষতা বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী পাওয়া গেছে মাত্র ১৬%। নারী ও স্বল্পশিক্ষিতদের মধ্যে এই সংখ্যা আরও কম। ৪০%-এর ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ থাকলেও, শহরের তুলনায় গ্রামে এ সুযোগ অনেক কম।
শিক্ষিত যুবকদের মধ্যে ৫৭% নারী ও ৪২% পুরুষ সরকারি চাকরি চান
শিক্ষিত যুবদের মধ্যে ৫৭% নারী এবং ৪২% পুরুষ সরকারি চাকরি করতে চান। এইচএসসি অথবা এর নিচে শিক্ষাগত যোগ্যতার পুরুষদের মধ্যে প্রায় ৯০% উপার্জনমূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত। যাদের লেখাপড়া যত বেশি, তারা উপার্জনমূলক কাজের সঙ্গে বেশি দেরিতে যুক্ত হন। নারীদের ক্ষেত্রে পঞ্চম শ্রেণি থেকে এইচএসসি পর্যন্ত শিক্ষিতদের মাত্র ৫% উপার্জনমূলক কাজে যুক্ত। যারা লেখাপড়া করেন না, উপার্জনমূলক কাজে যুক্ত নেই, এমনকি কোনো প্রশিক্ষণও (এনইইটি) গ্রহণ করছেন না, এদের প্রায় ৯০ ভাগই নারী। প্রায় ২০% অংশগ্রহণকারী বিদেশে কাজ করতে আগ্রহী হলেও তাদের মধ্যে মাত্র এক-তৃতীয়াংশ এ ব্যাপারে সক্রিয়ভাবে পরিকল্পনা করছে।
যুরারা উদ্বিগ্ন লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা এবং মাদক সমস্যা নিয়ে
পছন্দের স্বাধীনতা অনুযায়ী, পুরুষ যুবরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বন্ধু ও পেশা নির্বাচন, স্বাধীনভাবে চলাফেরা ও এবং অর্থ ব্যয়ে অধিক স্বাধীনতা উপভোগ করছেন। নারীরা বলছেন এই সকল ক্ষেত্রে স্বাধীনতার অভাব রয়েছে। মাত্র ৪০% নারী স্বাধীনভাবে চলাচলের সুযোগ পায়, যা পুরুষের অর্ধেক। তবে সবাই প্রধানত দুটি বিষয় নিয়ে উদ্বিগ্ন: লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা (যেমন বাল্যবিয়ে, যৌতুক, যৌন হয়রানি এবং ধর্ষণ) এবং মাদক সম্পর্কিত সমস্যা।
যুব জরিপ ২০১৮-কে স্বাগত জানিয়ে অনুষ্ঠানে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল বলেন, এ ধরনের কাজ আমাদের অভিজ্ঞতাকে সমৃদ্ধ করবে, কর্মক্ষেত্র চিহ্নিত করতে সহায়ক হবে। তবে সমস্যাগুলো ক্রমান্বয়ে কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি আমরা। কর্মক্ষেত্রে নারীর সংখ্যা বাড়ছে, প্রাথমিক শিক্ষক পদে ৬০%-এর ওপরে নারীদের নিয়োগ দেওয়া হয়। যুবসমাজের উন্নয়নে দেশের বিভিন্ন স্থানে যুব গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যুবকদের সমস্যা, সম্ভাবনা ও চাহিদা নিরূপণ করে এসব কেন্দ্র থেকে সহায়তা দেওয়া হবে।
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব ড. জাফর উদ্দিন বলেন, জরিপে উঠে আসা কিছু বিষয়কে আপাতদৃষ্টিতে সমস্যা মনে হতে পারে। কিন্তু আমি বলব, এগুলো সমস্যা নয়, চ্যালেঞ্জ। আমরা সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের যৌথ চেষ্টায় এই সমস্যাগুলো মোকাবিলা করে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাব।
ব্র্যাকের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ বলেন, তরুণদের দক্ষতা উন্নয়নে ব্র্যাক অনেক দিন ধরেই কাজ করছে। আমরা স্কুলভিত্তিক কর্মসূচি চালু করতে যাচ্ছি, যাতে এখানকার শিক্ষা পরববর্তীতে তাদের দক্ষতা উন্নয়নে সহায়ক হয়।
বিআইজিডি-এর নির্বাহী পরিচালক ইমরান মতিনসহ প্রমুখেরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
ব্র্যাকের যুব জরিপ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে