জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নন-ক্যাডারের ৯০ জন সহকারী প্রকৌশলীকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়ম না মেনে ক্যাডারভুক্ত করার জন্য বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনে (পিএসসি) প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এ ৯০ জনের ক্যাডারভুক্ত করার প্রস্তাবে কোন তারিখ থেকে ক্যাডারভুক্ত করা হবে, তা উল্লেখ করা হয়নি। এর ফলে বাকি কর্মকর্তাদের পদোন্নতি ও বেতন স্কেলের ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। সিনিয়র ক্যাডাররা জ্যেষ্ঠতার দিক থেকে নতুন ক্যাডারভুক্তদের পেছনে পড়ে যেতে পারেন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি-৫ শাখা কর্তৃক ২২ অক্টোবর, ২০২০-এ প্রণীত ক্যাডারভুক্ত করার প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের চেকলিস্টের নিয়ম অনুযায়ী, কতজন কর্মকর্তাকে কোন তারিখ থেকে ক্যাডারভুক্ত করা হবে, তা খসড়া প্রস্তাবে উল্লেখ করতে হবে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তিনটি সমাপ্ত প্রকল্প থেকে ৩৪টি সহকারী প্রকৌশলীর পদকে রাজস্ব খাতে স্থায়ী করা হয়। উন্নয়ন প্রকল্প তিনটি বিভিন্ন সময়ে শেষ হওয়ায় সেখানে কর্মরত সহকারী প্রকৌশলীদের ভিন্ন ভিন্ন তারিখে রাজস্ব খাতে নিয়মিতকরণ করা হয়। এ ছাড়া ২৮তম, ২৯তম, ৩০তম, ৩২তম, ৩৩তম বিসিএস (নন-ক্যাডার) ও সরাসরি পিএসসির মাধ্যমে নিয়োগকৃত নন-ক্যাডার থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত নন-ক্যাডার সহকারী প্রকৌশলীদের চাকরিতে যোগ দেওয়ার তারিখও ভিন্ন। কিন্তু বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনে (পিএসসি) পাঠানো প্রস্তাবে তিনটি প্রকল্প থেকে রাজস্ব খাতে স্থানান্তরিত কর্মকর্তা ও নন-ক্যাডার সহকারী প্রকৌশলীসহ মোট ৯০ জনকে কোন তারিখ থেকে ক্যাডারভুক্ত করা হবে, তা উল্লেখ করা হয়নি। ফলে ক্যাডার হওয়ার দিন থেকে নয়, সরকারি চাকরিতে যোগদানের দিন থেকেই ক্যাডার হিসেবে গণ্য করা হলে ক্যাডার পদ সৃষ্টির পূর্বেই ওই পদে কর্মকর্তারা যোগদানের মতো নজিরবিহীন পরিস্থিতির সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। এতে কর্মকর্তাদের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ নিয়ে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, এই ৯০ জন কর্মকর্তাকে ক্যাডারভুক্ত করার প্রস্তাবে তারিখ উল্লেখ না করার পেছনে অসৎ উদ্দেশ্য রয়েছে। প্রস্তাবে তারিখ উল্লেখ না করার অর্থ হলো—সহকারী প্রকৌশলীর ক্যাডার পদ সৃষ্টির আগের তারিখে এই ৯০ জন সহকারী প্রকৌশলীকে ক্যাডারভুক্ত করার তারিখ দেখানো হবে। নতুন সহকারী প্রকৌশলীর ক্যাডার পদগুলো তৈরি করা হয়েছিল ২০১৯ সালে। কিন্তু প্রকল্পে বা নন–ক্যাডারদের চাকরিতে যোগদান এই পদ সৃষ্টির আগেই। ক্যাডার পদ সৃষ্টির আগের তারিখে এসব কর্মকর্তাদের ক্যাডারভুক্ত করা হলে তা একটি খারাপ নজির হিসেবে গণ্য হবে এবং অন্যান্য ক্যাডার সার্ভিসের ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করবে।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস নিয়োগ বিধিমালা, ১৯৮১ অনুযায়ী সহকারী প্রকৌশলী থেকে নির্বাহী প্রকৌশলী পদে পদোন্নতির জন্য সহকারী প্রকৌশলী ক্যাডার পদে কমপক্ষে ৭ বছর চাকরি করতে হয়।
বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস নিয়োগ বিধিমালা, ১৯৮১ অনুযায়ী সহকারী প্রকৌশলী থেকে নির্বাহী প্রকৌশলী পদে পদোন্নতির জন্য সহকারী প্রকৌশলী ক্যাডার পদে কমপক্ষে ৭ বছর চাকরি করতে হয়। এই ৯০ জন কর্মকর্তা যে তারিখ থেকে ক্যাডারভুক্ত হবেন, সে তারিখ থেকে তাঁদের ৭ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা দেখিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী পদে পদোন্নতি দেওয়া হতে পারে। এ কারণে ক্যাডারভুক্ত করার তারিখটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাঁরা এভাবে ক্যাডারভুক্ত হলে নতুন করে সহকারী প্রকৌশলী পদে লোক নেওয়া সম্ভব হবে না। ইতিমধ্যে ৪৪তম বিসিএসে এর প্রভাব পড়েছে। এ বিসিএসে জনস্বাস্থ্যের সহকারী প্রকৌশলী পদে চাহিদাপত্র দেওয়া হয়নি। এ ছাড়া তারিখ উল্লেখ না করে ক্যাডারভুক্ত করা হলে এটা একটা উদাহরণ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। তখন অন্যান্য অধিদপ্তর বা মন্ত্রণালয় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরকে উদাহরণ হিসেবে দেখাবে যে প্রস্তাবে তারিখ উল্লেখ না করেও ক্যাডারভুক্ত হওয়া যায়।
এদিকে ওই ৯০ জনের এনক্যাডারমেন্টের বিষয়ে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের সংগঠন ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক শামসুর রহমান মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে বিভিন্ন অনিয়ম বিশেষ করে ৩৩ ভাগ পদোন্নতি কোটায় প্রাপ্য ৭৯টি ক্যাডার পদ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের না দিয়ে ৪৪টি শূন্য ক্যাডার পদে কীভাবে ৯০ জন নন-ক্যাডারকে ক্যাডারে অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ করা হয়েছে, সে বিষয়ে আপত্তি উত্থাপন করে পত্র দিয়েছেন। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল ডিপ্লোমা প্রকৌশলী সমিতি মাসুদুর রহমানকে আহ্বায়ক করে একটি সংগ্রাম কমিটি গঠন করেছে বলে জানা যায়।
এ বিষয়ে পিএসসির সংশ্লিষ্ট শাখার একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কোনো প্রস্তাব পাশ করার আগে এটির কোনো নিয়মের ব্যত্যয় হয় কিনা, তা খতিয়ে দেখব। যদি কোনো অন্যায় হয়, সেটি বিবেচনায় আনা হবে ও সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’
উল্লেখ্য, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ২০১৮ সালের ২৪ ডিসেম্বর প্রকাশিত এক প্রজ্ঞাপনে দেখা যায়, রাজস্ব খাতে নিয়মিতকৃত ৫৯ জন নন-ক্যাডার সহকারী বন সংরক্ষক কর্মকর্তাকে তারিখ উল্লেখ করে ক্যাডারভুক্ত করা হয়। এ ছাড়া জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ২০২০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত আরেকটি প্রজ্ঞাপনে দেখা যায়, ৯৪ জন নন-ক্যাডার পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে তারিখ উল্লেখপূর্বক বিসিএস পরিবার পরিকল্পনা ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এসব প্রজ্ঞাপনে ক্যাডারভুক্ত করার তারিখ উল্লেখ করার নিয়ম মানা হলেও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ৯০ জনের ক্যাডারভুক্ত করার প্রস্তাবে সে নিয়ম মানা হয়নি