সফলতার সঙ্গে দীর্ঘদিন চাকরি করা একটা বিরাট চ্যালেঞ্জের বিষয়। দেখা যায়, দীর্ঘদিন চাকরির সঙ্গে যুক্ত থাকা বেশির ভাগ মানুষ হতাশা প্রকাশ করেন, বিষণ্নতায় ভোগেন। এর বিভিন্ন কারণ আছে—অন্তত মনোবিদদের সে রকমই ধারণা। চাকরি দীর্ঘদিন করতে হবে, এটিই স্বাভাবিক ব্যাপার। অন্যদিকে দীর্ঘদিন একই কাজ করতে করতে একঘেয়েমি আর ক্লান্তি ঘিরে ধরতে পারে, সেটাও স্বাভাবিক ব্যাপার। এই স্বাভাবিক ব্যাপারগুলোকে নিয়েই চলতে হবে চাকরিজীবনে। ধাপে ধাপে উন্নতিও করতে হবে। দীর্ঘদিন ভালোভাবে চাকরি করতে হলে কিছু নিয়ম মেনে চলতে পারেন। এই নিয়মগুলো সবার জন্য সমানভাবে কাজ করবে সে রকম ভাবার কোনো কারণ নেই। ব্যক্তিবিশেষে নিয়মের ব্যতিক্রমও হতে পারে। দীর্ঘদিন সফলভাবে চাকরি করার জন্য যা যা করতে পারেন:
ইতিবাচক থাকুন
চাকরি বেশির ভাগ সময় মনের মতো হয় না। সে জন্য বেশির ভাগ চাকরিজীবীর একধরনের মানসিক অস্বস্তি থাকে। এ ছাড়া প্রতিদিনের রুটিন ওয়ার্কও একঘেয়ে হয়ে যেতে পারে। একঘেয়ে কাজ দীর্ঘদিন করতে কারোই ভালো লাগার কথা নয়। এসব বিষয় থেকে মুক্ত থাকতে ইতিবাচক থাকতে হবে। সবকিছুতে ইতিবাচক থাকুন। যে কাজটি করছেন সেখান থেকে আনন্দ খুঁজে নিতে শিখুন। কাজের ধরন অনুসারে কীভাবে কাজ করে আপনি আনন্দ পাচ্ছেন, সেটা খুঁজে বের করার জন্য নির্দিষ্ট সময়ের একটা প্রকল্প নিতে পারেন নিজে নিজে। যে পদ্ধতিটিতে নিজের আরাম খুঁজে পাবেন, সেটি প্রতিদিন ব্যবহার করুন। নির্দিষ্ট সময় পরপর নতুন পদ্ধতি খুঁজে নিন।
প্রতিদিন শিখুন
আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে একটি বিষয় স্পষ্ট যে চাকরিজীবীরা নতুন কিছু শেখার চেষ্টা করেন না, সেটা প্রযুক্তিগত কিছু হোক বা কাজ করার নতুন থিওরি হোক। এই মানসিকতা থেকে বের হয়ে আসুন। নিজের কাজকে সহজ করার জন্য প্রতিদিন কিছু একটা শেখার চেষ্টা করুন। এ জন্য আপনি কাজের ফাঁকে নিজের কাজ বিষয়ে কিছু পড়ার চেষ্টা করুন। গুগলে খুঁজলেই পড়ার জন্য আপনি কিছু না কিছু পেয়ে যাবেন। সেগুলো পড়তে থাকুন। টেকনিক্যাল জ্ঞান বাড়াবার জন্য বর্তমানের প্রযুক্তি বিষয়ে খোঁজখবর রাখুন। খুঁজে দেখুন আপনার কাজের ধরন অনুসারে কোন প্রযুক্তি আপনাকে সহায়তা করতে পারে। সেগুলো শিখে নিন দ্রুত। যত শিখবেন ততই বৈচিত্র্যপূর্ণভাবে আপনি আপনার কাজ করতে পারবেন।
নিজের সুকুমারবৃত্তির চর্চা করতে থাকুন
প্রত্যেক মানুষ তাঁর মতো করে সৃষ্টিশীল। চাকরি শুরু করার আগে আপনি সৃষ্টিশীল যা করতেন, চাকরির ফাঁকে ফাঁকে সেগুলোর চর্চা অব্যাহত রাখুন। হতে পারে আপনি গিটার, বাঁশি বা এ রকম বাদ্যযন্ত্র বাজাতে পারেন, তাহলে অবসরে সেগুলো বাজান। গান করতে পারলে অবসরে গান করুন, লেখালেখি করতে পারলে তার চর্চা করুন। অবসর সময় খুঁজে বের করুন।
পরিবার-পরিজনকে সময় দিন
‘কোয়ালিটি টাইম’ বলে একটি কথা আছে। নিজের জন্য কোয়ালিটি টাইম পার করা খুব জরুরি। আপনি যদি বিবাহিত হয়ে থাকেন, তাহলে নিজের পরিবারকে সময় দিন। ব্যাচেলর হলে আপনার বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে নিয়ম করে মিশুন, আড্ডা দিন, বাইরে ঘুরুন। বাবা-মা থাকলে তাঁদের সঙ্গে দেখা করুন। আর যদি তাঁদের থেকে দূরে থাকেন, তাহলে অবশ্যই নিয়ম করে তাঁদের সঙ্গে কথা বলুন। দেখবেন মানসিকভাবে বেশ ফুরফুরে লাগছে আপনাকে। চাকরির একঘেয়েমি থেকে বাঁচতে এই কাজগুলো আপনার ‘ব্রিদিং স্পেস’ হিসেবে কাজ করবে।
অফিস এবং ব্যক্তিগত জীবন এক করবেন না
অফিস জীবন এবং ব্যক্তিগত জীবনকে এক করবেন না কখনোই। মনে রাখবেন, অফিসে আপনি কাজ করতে যান। সেখানে আপনার সবকিছুই অফিস এবং কাজকে কেন্দ্র করেই ঘটতে থাকে। কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনে আপনার যা কিছু, সেটা একান্তই আপনার। এখানে আপনি যা করেন, সেটা মাস শেষে বেতন পাওয়ার জন্য নয়, ভালোবেসে করেন। কাজেই অফিসের কাজকর্মকে যত দূর সম্ভব অফিসে রেখে বাসায় ফিরুন। এতে আপনার মানসিক শান্তি অটুট থাকবে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে সচেতন থাকুন
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যেমন ফেসবুক, টুইটারের মতো সোশ্যাল মিডিয়া এখন জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে। কিন্তু খেয়াল করেছেন কি যে এই সোশ্যাল মিডিয়া আপনার কর্মঘণ্টার একটা বড় অংশ নষ্ট করে? আর এখান থেকে যে তথ্যগুলো আপনি পান, তার কতটুকুইবা আপনার কাজে লাগে? তাই এটি ব্যবহারে সচেতন থাকুন। সবচেয়ে ভালো হয় অফিসে কাজ করার সময় সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার না করা। এখানে প্রচুর তথ্য পাবেন যেগুলো আপনাকে মানসিকভাবে ভালো থাকতে দেবে না। আর মানসিকভাবে আপনি ফিট না থাকলে মন দিয়ে কাজও করতে পারবেন না। অফিসে শুধু যোগাযোগ বা গুরুত্বপূর্ণ কাজ করার জন্য সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করুন।
ছুটি ফেলে রাখবেন না
অফিসের প্রয়োজনে আপনাকে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বেশি সময় কাজ করতে হতে পারে। এটি যেমন সত্য, তেমনি নিজের নির্ধারিত ছুটিগুলো সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে চেষ্টা করুন। বোনাস কিংবা ওভারটাইমের ফাঁদে নিজের ছুটি নষ্ট করবেন না। নিজের পাওনা ছুটি কীভাবে ব্যবহার করবেন, তা নিয়ে নতুন করে ভাবুন। নতুন কোনো জায়গায় ঘুরতে যেতে পারেন, নিজের প্রয়োজনীয় কাজগুলো ঠিকভাবে শেষ করতে পারেন, পরিবারকে সময় দিতে পারেন, পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে পারেন কিংবা কিছু না করে স্রেফ ঘুমিয়েও কাটাতে পারেন। যা–ই করুন না কেন, নিজের ছুটিগুলোকে অর্থবহ করে তোলার চেষ্টা করুন। দেখবেন ছুটি শেষে আপনি তরতাজা, কর্মচঞ্চল হয়ে উঠেছেন আগের চেয়েও বেশি।
বিভিন্ন চাকরির ওয়েবসাইট অবলম্বনে