কোভিড-১৯ এর কারণে সব পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। ব্যবসা না হওয়ায় কর্মী ছাঁটাই করছে অনেক প্রতিষ্ঠান। আবার কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান কর্মী ছাঁটাই না করলেও নতুন নিয়োগ বন্ধ রেখেছে। এতে বিপাকে পড়েছেন চাকরি প্রত্যাশীরা।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)-এর তথ্য মতে, করোনা সংকটের কারণে বাংলাদেশে প্রতি চারজন যুবকের মধ্যে একজন কর্মহীন বা বেকার রয়েছেন (২৭.৩৯%)। মার্চের পর থেকে বেড়েছে এই বেকারত্ব।
কোভিড-১৯ এর সময়ে নতুন চাকরির জন্য নিজেকে কীভাবে তৈরি করা যায়, চাকরি পেতে কম ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে—সে বিষয়ে নানান পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এগুলো হচ্ছে—
কোথায় চাকরি খুঁজবেন সেটা অনেক সময়ই ঝামেলার হতে পারে। বিশেষ করে চাকরি বাজারে যদি থেকে বেশ কিছু সময় বাইরে থাকেন তাহলে সেটি আরও বেশি কঠিন মনে হতে পারে। এ ক্ষেত্রে যা করা যেতে পারে তা হচ্ছে, প্রথমেই নিজের একটি আকর্ষণীয় অনলাইন প্রোফাইল তৈরি করে ফেলতে হবে। এতে একদিকে আপনার যেমন চাকরির আবেদনগুলো করা সহজ হবে ঠিক তেমনি অন্যদিকে নিয়োগকর্তারাও আপনাকে সহজে খুঁজে নিতে পারবেন।
প্রোফাইল তৈরি করার সময় যে বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হয় তা হলো নিজের মূল দক্ষতার জায়গাগুলো ভালোভাবে তুলে ধরতে হবে।
জীবনবৃত্তান্ত অথবা জীবন বৃত্তান্ত বানানোর সময় দক্ষতাগুলোকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। আর এর পরে অভিজ্ঞতাগুলোকে স্থান দিতে হবে। সিভিতে বলতে হয় যে, কোনো কোনো প্রজেক্ট আপনি নির্দিষ্ট সময়সীমা এবং বাজেটের মধ্যে করতে পেরেছেন। আপনি আগের প্রতিষ্ঠানকে কীভাবে কতগুলো নতুন ক্লায়েন্ট দিতে পেরেছেন, সে বর্ণনাগুলো বিস্তারিত দেওয়াই ভালো।
আবেদন করার আগে অপর কোনো ব্যক্তিকে সিভি ও আবেদনপত্রটি পড়তে দিতে পারেন। এতে করে কোনো ভুল থাকলে সেগুলো সংশোধন হয়ে যাবে। কারণ সিভি ও আবেদনের ভুলগুলো ওই ব্যক্তির চোখে ধরা পড়তে পারে।
নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান এবং নতুন নতুন পদের জন্য আলাদা আলাদা সিভি এবং আবেদনপত্র তৈরি করতে হবে। এটি একটু সময় সাপেক্ষ হলেও এতে ডাক পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। নির্দিষ্ট সময়ে মধ্যে ডাক না পেলে ফোন করে খোঁজ নিতে পারেন। এতে ওই কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের জন্য আপনাকে এড়িয়ে যাওয়াটা একটু কঠিন হবে।
বিভিন্ন চাকরির ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপন দেওয়া থাকে। আবার অনেক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি নিজেদের ওয়েবসাইট বা পোর্টালে দিয়ে থাকে। সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে নিয়মিত। কোনো নির্দিষ্ট কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতে চাইলে খবর নিতে হবে সেখানে নিয়োগ হচ্ছে কি না।
কোনো একটি নির্দিষ্ট পদে চাকরি করতে চাইলে নিজে উদ্যোগী হয়ে ওই পদে যারা কাজ করছেন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে চেষ্টা করুন যে তারা কীভাবে চাকরি পেয়েছেন। কীভাবে কাজ করেন। প্রফেশনাল নেটওয়ার্ক সাইটগুলো এ ক্ষেত্রে আপনার কাজে দেবে। লিংকডইন, ফেসবুক গ্রুপ ইত্যাদি। এসব জায়গায় বিভিন্ন চাকরির খোঁজ যেমন থাকে ঠিক তেমনি কীভাবে আপনি সেটি অর্জন করবেন তার নির্দেশনাও থাকে।
করোনা পরবর্তী পরিস্থিতিতে চাকরির বাজারে প্রতিযোগিতা সাধারণ সময়ের চেয়ে বেশি। এ ক্ষেত্রে অন্যদের থেকে নিজেকে কীভাবে আলাদা প্রমাণ করা যায় তাই চিন্তা হওয়া উচিত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত পরিচয় অনেকটাই কাজে আসতে পারে। বন্ধু, পরিবারের সদস্যরা কিংবা অন্য পরিচিত যেই হোক না কেন তাদেরও পরিচিত আরও অনেকে থাকে। যাদের মধ্যে কেউ হয়তো নিয়োগকর্তাও হতে পারেন। এ ক্ষেত্রে তাদের চাকরির খোঁজ সম্পর্কে বলে রাখতে পারেন।
আবার পরিচিত থাকলেই যে চাকরি হবে সেটা কিন্তু নয়। কিন্তু অনেক নিয়োগকর্তাই রয়েছেন যারা পরিচিতদের মধ্য থেকে নিয়োগ দিতে বেশি আগ্রহী। এ ছাড়া পরিচিত থাকলে আপনি জানতে পারবেন যে কোথায় চাকরির সুযোগ রয়েছে আর কোথায় নেই।
চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, নিয়োগকর্তা এবং দায়িত্ব সম্পর্কে জানা। যে প্রতিষ্ঠান বা পদের জন্য আবেদন করছেন সে বিষয়ে অবশ্যই জানতে হবে। ওই পদে চাকরি না করেও বাইরে থেকে যতটা জ্ঞান আহরণ করা সম্ভব সেটা করতে হবে। এখন ইন্টারনেটের যুগ এ ছাড়া আরও অনেকভাবে ধারণা নেওয়া যায়। সেই সঙ্গে ওই পদে চাকরি হলে দায়িত্ব কী হবে, তিনি কীভাবে ওই প্রতিষ্ঠানটিকে সহায়তা করতে পারবেন সেটিও জানতে হবে। আগের তুলনায় প্রতিযোগিতা অনেক বেশি হওয়ায় অন্যদের থেকে নিজেকে এগিয়ে রাখতে দক্ষতার প্রমাণ দিতে হবে।
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে চাকরি লাভের ক্ষেত্রে একটি বড় বিষয় হচ্ছে ধৈর্য ধরতে হবে। সবকিছু একদিনে চাইলেই হয়ে যাবে না, সেটি মনে রাখতে হবে। বসে না থেকে যেকোনো কাজে ঢুকে পড়তে হবে। এতে কাজের অভিজ্ঞতা বাড়বে। বেতন পাচ্ছি বা আমার পদটা কি সেটা দিয়ে কোনো কাজের মূল্যায়ন হয় না। আমি কাজে কতটা ভ্যালু অ্যাড করছি বা নতুন কাজের কতটুকু শিখতে পারছি সেটাই বড়। নতুন করে চাকরির আবেদন করতে গেলে এ বিষয়গুলো সামনে এগিয়ে যেতে হবে।
বর্তমান চাকরির বাজারে একজন চাকরি-প্রত্যাশীকে অন্যদের থেকে এগিয়ে থাকতে হলে অবশ্যই মাল্টি-টাস্কিং হতে হবে। আগে যে পদের জন্য নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে শুধু সেই পদের দায়িত্ব এবং যোগ্যতা থাকলেই নিয়োগ দেওয়া হতো। কিন্তু করোনা পরবর্তী পরিস্থিতিতে তা বদলে গেছে বা যাচ্ছে। এখন সংশ্লিষ্ট পদের যোগ্যতা ছাড়াও আইটি বা প্রযুক্তি সম্পর্কিত দক্ষতা থাকাটা খুব জরুরি।
যাদের চাকরি চলে গেছে তাদের নতুন চাকরি পেতে সমস্যাই হবে, এটাই স্বাভাবিক। তবে এ ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত নতুন দক্ষতা বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে নিজে নতুন কিছু করার চেষ্টা করতে হবে। নতুন কোনো প্রতিষ্ঠান বা নতুন সেক্টরে কাজ করার মানসিকতা থাকতে হবে। তথ্যসূত্র : বিবিসি