চিনি
চিনি

এবার পরিশোধিত চিনি আমদানিতে শুল্ক কমবে, লক্ষ্য বাজারে দ্রুত সরবরাহ বাড়ানো

সরকার পরিশোধিত চিনি আমদানিতে শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেশে চিনির দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে বাজারে পণ্যটির সরবরাহ বাড়াতে আমদানি উৎসাহিত করতে চায় সরকার। সে কারণে পরিশোধিত চিনি আমদানিতে শুল্ক কমাতে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তারা বলেছেন, প্রতি টন পরিশোধিত চিনি আমদানিতে এখন ৬ হাজার টাকা আমদানি শুল্ক আরোপ করা আছে। এই হার কমিয়ে ৪ হাজার ৫০০ টাকা করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। ফলে পরিশোধিত চিনি আমদানি উৎসাহিত হবে এবং বাজারে এর সরবরাহ বাড়বে।

এর আগে গত ৯ অক্টোবর এনবিআর অপরিশোধিত ও পরিশোধিত চিনি আমদানিতে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করে।

বর্তমানে অপরিশোধিত চিনি আমদানিতে প্রতি টনে ৩ হাজার টাকা শুল্ক দিতে হয়। পরিশোধিত চিনির আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্কের হার অপরিশোধিত চিনির ওপর থাকা শুল্কের দ্বিগুণ রাখা হয়েছিল। এর বাইরে উভয় ধরনের চিনি আমদানিতে ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট, ১৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক, ৫ শতাংশ অগ্রিম কর এবং ক্ষেত্রবিশেষে ২-৫ শতাংশ অগ্রিম কর পরিশোধ করতে হয়।

গত পাঁচ বছরের গড় আমদানির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রতিবছর গড়ে ১৯ দশমিক ৬৯ লাখ টন করে চিনি আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে ১৮ দশমিক ৪৩ লাখ টন অপরিশোধিত চিনি এবং ১ লাখ ২৬ টন পরিশোধিত চিনি; অর্থাৎ প্রতিবছর যত চিনি আমদানি হয়, তার প্রায় বেশির ভাগই অপরিশোধিত চিনি, যা দেশে আনার পর পরিশোধন করে বাজারজাত করা হয়।

মূলত বেসরকারি খাতের কয়েকটি কোম্পানি অপরিশোধিত চিনি আমদানি করে এবং পরিশোধনের পর তা বাজারে সরবরাহ করে। ফলে চিনির বাজার গুটিকয় কোম্পানির ওপর নির্ভরশীল।

এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান আজ বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, যাঁরা অপরিশোধিত চিনি আমদানি করেন, তাঁরা চান পরিশোধিত চিনি কম আমদানি হোক। কিন্তু বাজারে চিনির সরবরাহ বাড়াতে পরিশোধিত চিনির আমদানি বৃদ্ধি দরকার। পরিশোধিত চিনির আমদানি হলে তা দ্রুত বাজারে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।

কবে প্রজ্ঞাপন হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, আগামী সপ্তাহের শুরুর দিকে এই প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে।

আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম বৃদ্ধি ও দেশে টাকার বিপরীতে ডলারের মূল্য বৃদ্ধির ফলে স্থানীয় বাজারে চিনির দাম বাড়ছে। তবে চিনি আমদানিতে নানা ধরনের শুল্ক-কর আরোপ থাকায় দেশের বাজারে চিনির দাম প্রতিবেশী ভারতের চেয়ে অনেক বেশি।

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩-২৩ অর্থবছরে অপরিশোধিত চিনি আমদানি গত পাঁচ বছরের গড় আমদানির তুলনায় প্রায় ৪ দশমিক ৫৭ লাখ টন কম হয়েছে। এ সময় পরিশোধিত চিনি আমদানি কম হয়েছে ১৩ হাজার টন। চোরাচালানের মাধ্যমে দেশে চিনি আসে বলেও অনেকে মনে করেন।

ট্যারিফ কমিশন বলছে, ভারতের স্থানীয় বাজারে ৪৫-৫০ টাকায় প্রতি কেজি চিনি পাওয়া যায়। উচ্চ শুল্ক হার থাকায় বাংলাদেশে এই চিনি ভারতের দ্বিগুণের বেশি। মূল্যের এই বড় পার্থক্যের কারণে চোরাচালানের প্রবণতা দেখা দিয়েছে এবং সীমান্তে চিনি আটকের তথ্য এই ধারণাকে প্রতিষ্ঠিত করছে।

সরকারি বিক্রয়কারী সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১২৫ থেকে ১৩৫ টাকা কেজি দরে।