দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

শ্বেতপত্র কমিটি পারিশ্রমিক নেয়নি, নিলে ‘অন্তত ২৫ কোটি টাকা’ খরচ হতো

দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিবিষয়ক শ্বেতপত্র তৈরি করতে কমিটির সদস্য কিংবা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা কোনো পারিশ্রমিক নেননি। তবে তাঁদের পারিশ্রমিকসহ প্রতিবেদনটি তৈরির বিভিন্ন ব্যয় বিবেচনায় নিলে মোট খরচ অন্তত ২৫ কোটি টাকা হতো।

আজ সোমবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলনকক্ষে অর্থনৈতিক পরিস্থিতিবিষয়ক শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির সংবাদ সম্মেলনে কমিটির প্রধান ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এ কথা জানান। কমিটির অপর ১১ সদস্যও সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘শ্বেতপত্র তৈরির কাজটি করার ক্ষেত্রে আমাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, খরচ কত হবে। আমি বলেছিলাম, বাংলাদেশের এ রকম একটি পরিবর্তনকালে আমরা যদি কোনো অবদান রাখতে পারি, সেটার কোনো আর্থিক মূল্যায়ন করা ঠিক হবে না।’

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, শ্বেতপত্র কমিটি নব্বই দিনের মধ্যে মোট ৬০টি সভা করেছে। এর মধ্যে কমিটির সদস্যরা নিজেরা ১৮ বার বৈঠক করেছেন। প্রথাগত গবেষণা পদ্ধতির বাইরে গিয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও আলোচনাভিত্তিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে প্রতিবেদনের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। দলিলটি তৈরি করার ক্ষেত্রে গবেষকদের অর্জিত জ্ঞান এখানে প্রতিফলিত হয়েছে। একই সঙ্গে প্রাসঙ্গিক সাম্প্রতিক তথ্য-উপাত্ত যুক্ত করা হয়েছে এবং দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞর পরামর্শ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকার বাইরে গণশুনানির মাধ্যমে জনগণের মতামতও নেওয়া হয়েছে। দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য জানান, তাঁর সহকর্মীরা সবাই বিনা পারিশ্রমিকে কাজটি করেছেন। এমনকি কাউকে এক পয়সা সিটিং অ্যালাউন্সও দেওয়া হয়নি।

শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান বলেন, ‘আমরা মূল্যায়ন করার চেষ্টা করেছিলাম যে এ রকম একটি কাজ পরামর্শক দিয়ে করালে কী হতো। এ বিষয়ে আমাদের মূল্যায়ন হলো, এই কাজটিকে (শ্বেতপত্র তৈরি) একটি উপযুক্ত প্রকল্প বানিয়ে যথাযথ প্রক্রিয়ায় করা হলে ন্যূনতম ২৫ কোটি টাকা ব্যয় হতো। তবে আমরা কাজটিকে দেশের জন্য নিঃস্বার্থ অবদান হিসেবে দেখতে চাই। এর ভেতর দিয়ে উদাহরণ ও দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাই।’

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরও বলেন, এ কাজের ভেতর দিয়ে বাংলাদেশের পেশাজীবী, বিশেষ করে অর্থনীতির চর্চায় যাঁরা যুক্ত রয়েছেন, তাঁদের সক্ষমতা ও কৃতিত্ব প্রদর্শন করা গেছে। পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে যে বিদেশি পরামর্শক এনে দেশীয় সক্ষমতাকে ছোট করে দেখানো হয়, তাঁরও একটি উচিত জবাব দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।

‘একটি উন্নয়ন বয়ানের ব্যবচ্ছেদ’ শীর্ষক শ্বেতপত্রটি খসড়া আকারে গতকাল রোববার প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে হস্তান্তর দেওয়া হয়েছে। এটি সম্পাদনা করে ছাপাতে আরও এক থেকে দেড় মাসের মতো সময় লাগবে বলে জানান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, এটির গ্রন্থস্বত্ব সরকারের। অর্থাৎ দলিলটির মালিকানা সরকার গ্রহণ করেছে। তবে এখানে প্রদত্ত মতামত ও বিশ্লেষণ কমিটির সদস্যদের।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরও বলেন, ‘শ্বেতপত্র প্রতিবেদনে আমরা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান নিয়ে আলোচনা করিনি; বরং প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করছি। অর্থাৎ এ ঘটনা (দুর্নীতি ও অনিয়ম) কীভাবে ঘটল, তা জানার চেষ্টা করেছি। আমাদের কাজ চোর ধরা না, আমাদের কাজ চুরির বর্ণনা দেওয়া। আমরা চুরির বর্ণনা দিয়েছি।’