রাজধানীর শ্যামলী ক্লাব মাঠের পাশে নিয়মিত ওএমএসের চাল ও আটা বিক্রি হচ্ছে। বুধবার বেলা ১১টায় দেখা যায়, প্রায় ৮০ জন নারী-পুরুষ ট্রাকের পেছনে দুই সারিতে দাঁড়িয়ে পণ্য কেনার অপেক্ষায় রয়েছেন। তাঁদের একজন গাড়িচালক মো. শাহারাজ মিয়া। জানালেন, সকালে তিনি দুই ঘণ্টার ছুটি নিয়ে এসেছেন। প্রায় এক ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে শেষ পর্যন্ত দুই কেজি আটা ও পাঁচ কেজি চাল কিনতে পেরেছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার খাদ্য ভবনের সামনে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর বিক্রি করছিল আলু, ডিম, পেঁয়াজ, সবজিসহ ১০ ধরনের পণ্য। সেখানে গিয়ে দেখা গেল, পণ্য কেনার জন্য ফুটপাতে সারি করে দাঁড়িয়ে আছেন ৩০ জনের মতো। কিন্তু পণ্য প্রায় শেষের দিকে। অপেক্ষায় থাকা সবাই পাবেন কি না, নিশ্চিত বলতে পারলেন না তদারক কর্মকর্তা সোহরাব আলী।
একই চিত্র ঢাকার বাইরেও। গতকাল বিকেলে চট্টগ্রামের চকবাজার ধনীরপুল এলাকায় থাকা কৃষিপণ্য বিক্রির ট্রাকের সামনে এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে ফিরে যান অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামাল। একই স্থান থেকে খালি হাতে ফেরেন শিক্ষার্থী আবদুল হামিদ, গৃহিণী লাকি শীল, মেহেরা খাতুনসহ অনেকেই। ময়মনসিংহের বাতির কল এলাকায় ডিলার সাদিয়া এন্টারপ্রাইজের সামনে থেকে আনোয়ারা বেগম, সিলেট নগরের সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে ওএমএসের ভ্রাম্যমাণ দোকান থেকে ফিরে গেছেন খুরশিদ আলমসহ ৩০ জন। রাজশাহী শহরের টিকাপাড়া পয়েন্টে ৭০ জন ক্রেতা বেলা একটায় যখন লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন, তখনই ঘোষণাটি এল—চাল শেষ। বরিশাল, খুলনা, কুমিল্লার বিভিন্ন কেন্দ্রে একই চিত্র দেখা গেছে।
পণ্য শেষ, কিন্তু মানুষ তখনো লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন—দেশের বিভিন্ন স্থানে মোটামুটি এমন চিত্র দেখেছেন প্রথম আলোর সাংবাদিকেরা। নিত্যপণ্যের দাম বেশ অনেকটা বেড়ে যাওয়ার মধ্যে স্বল্প আয়ের মানুষকে কিছুটা স্বস্তি দেওয়ার চিন্তা থেকে সাশ্রয়ী দামে পণ্য বিক্রি করছে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়। কিন্তু মানুষের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার। খাদ্য মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের চাল, আটা, ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ বিক্রির উদ্যোগ আগে থেকেই ছিল। অন্তর্বর্তী সরকার নতুন করে ডিম, আলু, সবজি বিক্রির জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়কেও এ কাজে লাগিয়েছে।
কিছুটা সাশ্রয়ের খোঁজে লাজলজ্জা ভুলে লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে।পণ্য কেনার লাইনে দাঁড়িয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খুলনার এক নারী
তবে সরকারের নতুন মাথাব্যথা হচ্ছে সব পণ্যের সরবরাহ ঠিক রাখা। এ জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে যাচ্ছে। কারণ, আমদানিনির্ভর পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক থাকা অনেকটাই নির্ভরশীল বেসরকারি খাতের কয়েকটি গ্রুপের ওপর। বাণিজ্যসচিব মোহাং সেলিম উদ্দিন গত মঙ্গলবার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে পণ্যের দাম ও সরবরাহ ঠিক রাখার অনুরোধ করেছেন। এর আগেও ব্যবসায়ী, ব্যবসায়ী সমিতি, আমদানিকারক ও উৎপাদকদের আলাদা বৈঠক করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তাদের সুপারিশের ভিত্তিতেই সম্প্রতি চাল, ভোজ্যতেল, চিনি ও ডিমের ওপর আমদানি শুল্ক কমানো হয়েছে বলে জানান বাণিজ্যসচিব।
সেলিম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সুপারিশ থাকলেও প্রাতিষ্ঠানিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি পণ্যের শুল্ক কমানো হয়েছে। রমজান উপলক্ষে ছোলা ও খেজুরের আমদানিতে শুল্ক কমানোর চিন্তাও চলছে। আমরা এখন জোর দিচ্ছি আমদানির জন্য ঋণপত্র খোলার কাজটি যেন ঠিকঠাক হয়।’
পণ্য শেষ, কিন্তু মানুষ তখনো লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন—দেশের বিভিন্ন স্থানে মোটামুটি এমন চিত্র দেখেছেন প্রথম আলোর সাংবাদিকেরা। নিত্যপণ্যের দাম বেশ অনেকটা বেড়ে যাওয়ার মধ্যে স্বল্প আয়ের মানুষকে কিছুটা স্বস্তি দেওয়ার চিন্তা থেকে সাশ্রয়ী দামে পণ্য বিক্রি করছে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়। কিন্তু মানুষের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার।
তিন সরকারি দপ্তরের উদ্যোগ
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, গত জুলাই মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল এক যুগের মধ্যে সর্বোচ্চ ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশ, আগস্টে ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশ এবং সেপ্টেম্বরে ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ। এই পরিসংখ্যান সার্বিক মূল্যস্ফীতির। খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার আরও বেশি। বিবিএসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মূল্যস্ফীতি কমার দিকে। তবে মূল্যস্ফীতি যে খুব বেশি কমে যাবে, তেমন আশা করছে না আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। গত মঙ্গলবার আইএমএফ বলেছে, চলতি অর্থবছরের মূল্যস্ফীতি দাঁড়াবে ৯ দশমিক ৭ শতাংশ।
সরকারি পরিসংখ্যান যা–ই হোক না কেন, কয়েক সপ্তাহ ধরে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষ রীতিমতো ক্ষুব্ধ। এ পরিস্থিতিতে সাশ্রয়ী দামে সরাসরি নিত্যপণ্য বিক্রি করছে খাদ্য অধিদপ্তর, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর ও ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। তবে নিম্ন আয়ের মানুষেরা বলছেন, সরকারের উদ্যোগ ঠিক থাকলেও চাহিদা মেটাতে তা যথেষ্ট নয়।
সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান উচ্চ মূল্যস্ফীতির জন্য ছয়টি কারণ চিহ্নিত করেছেন। এগুলো হচ্ছে সরবরাহ-সংকট, চাহিদা ও সরবরাহের তথ্যের ঘাটতি, বাজারে প্রতিযোগিতার অভাব ও ব্যবসায়ীদের কারসাজি, সঠিক মুদ্রা ও রাজস্ব নীতি গ্রহণে ব্যর্থতা, মুদ্রার অবমূল্যায়ন এবং জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়কে নিয়ে সমন্বিত প্ল্যাটফর্ম গঠনের পরামর্শ দেন সেলিম রায়হান। তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে চাঁদাবাজি বন্ধ করা যেমন জরুরি, তেমনি দরকার ব্যবসায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনা। প্রতিযোগিতা কমিশনকে সক্রিয় করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে সরকারের অনেক সংস্কার কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে বাধার সৃষ্টি হতে পারে।
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মইনুল খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিত্যপণ্যের দাম কমানোর কৌশল নির্ধারণে আমরা একটা গবেষণা করছি। গবেষণার সুপারিশ সরকারের কাছে তুলে ধরার পর আশা করা যায় ভালো কিছু পদক্ষেপ আসবে।’
সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান উচ্চ মূল্যস্ফীতির জন্য ছয়টি কারণ চিহ্নিত করেছেন। এগুলো হচ্ছে সরবরাহ-সংকট, চাহিদা ও সরবরাহের তথ্যের ঘাটতি, বাজারে প্রতিযোগিতার অভাব ও ব্যবসায়ীদের কারসাজি, সঠিক মুদ্রা ও রাজস্ব নীতি গ্রহণে ব্যর্থতা, মুদ্রার অবমূল্যায়ন এবং জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি।
চাল কেনার লাইন বড় হচ্ছে
ওএমএস এবং খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি বাস্তবায়ন হচ্ছে খাদ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে। ওএমএস শুধু শহর এলাকার দরিদ্রদের জন্য। বিক্রি করা হচ্ছে ৩০ টাকা কেজি দরে ৫ কেজি করে চাল ও ২৪ টাকা কেজি দরে ৫ কেজি করে খোলা আটা। ঢাকা মহানগর; শ্রমঘন চার জেলা যেমন ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও নরসিংদী; ১০টি সিটি করপোরেশন এবং দেশের সব জেলা সদর ও পৌরসভায় বিক্রি করা হচ্ছে চাল ও আটা। ট্রাক ও দোকান মিলিয়ে মোট কেন্দ্র ৯১২টি।
চাল ও আটা ট্রাক সেলের মাধ্যমে ঢাকায় ৭০টি জায়গায় বিক্রি করা হচ্ছে। এর বাইরে সিলেটে রয়েছে ৫টি ট্রাক সেল। বন্যাকবলিত হওয়ার কারণে চট্টগ্রাম বিভাগের ১১ জেলার ৬৫ উপজেলা এবং সিলেট বিভাগের ৩ জেলার ১৪ উপজেলায়ও ওএমএসের চাল ও আটা বিশেষ বরাদ্দ হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে কর্মসূচির জন্য ৭ লাখ টন চাল ও গম বরাদ্দ রয়েছে।
শহর বাদ দিয়ে শুধু ইউনিয়ন পর্যায়ে রয়েছে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি, ৫০ লাখ পরিবারের জন্য। সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর এবং মার্চ ও এপ্রিল—এই পাঁচ মাস চলে এ কার্যক্রম। এর আওতায় ১৫ টাকা কেজি দরে ৩০ কেজি চাল কিনতে পারে একেকটি পরিবার। চলতি অর্থবছরে ৭ লাখ ৪০ হাজার টন চালের বরাদ্দ রয়েছে।
নিত্যপণ্যের দাম কমানোর কৌশল নির্ধারণে আমরা একটা গবেষণা করছি। গবেষণার সুপারিশ সরকারের কাছে তুলে ধরার পর আশা করা যায় ভালো কিছু পদক্ষেপ আসবে।বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মইনুল খান
সুলভ মূল্যের সব পণ্য থাকছে না
সুলভ মূল্যে ডিম, আলু, পেঁয়াজ, কাঁচা পেঁপে ও বিভিন্ন ধরনের সবুজ শাকসবজিসহ প্যাকেজ আকারে ১০টি কৃষিপণ্য বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। ১৫ অক্টোবর শুরু করা এ কার্যক্রমের নাম দেওয়া হয়েছে কৃষি ওএমএস কর্মসূচি। প্রাথমিকভাবে রাজধানীর ২০টি স্থানে ট্রাক সেলের মাধ্যমে এর বাস্তবায়ন হচ্ছে। সকাল ৯টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত চলার কথা এ কর্মসূচি। একজন গ্রাহকের ৩০ টাকায় এক কেজি আলু, ১৩০ টাকায় এক ডজন ডিম, ৭০ টাকায় এক কেজি পেঁয়াজ, ২০ টাকা করে ২ কেজি কাঁচা পেঁপে ও পাঁচ কেজি বিভিন্ন ধরনের সবুজ শাকসবজি কিনতে পারার কথা।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে সরকারের অনেক সংস্কার কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে বাধার সৃষ্টি হতে পারে।সেলিম রায়হান, নির্বাহী পরিচালক, সানেম
মোহাম্মদপুরের টোকিও স্কয়ারের পাশে গত বুধবার ট্রাকে করে বিক্রির জন্য ১০৫ কেজি পেঁপে, ১৮০ কেজি পটোল, ২০টি লাউ, ১৫০০ কেজি আলু, ৬০০ কেজি পেঁয়াজ ও ১৪০ ডজন ডিম আনা হয়। দাঁড়িয়ে থেকে দেখা যায়, প্রথম ২০ জনকে দেওয়ার পর লাউ শেষ। একইভাবে ৫০ জনের কাছে বিক্রির পর পেঁপে আর ৯০ জনের কাছে বিক্রির পর পটোল শেষ। পণ্যের স্বল্পতার কারণেই এমন পরিস্থিতি হয়েছে। মোটামুটি ২৫০ জন ক্রেতা সেখানে পণ্য কিনতে আসেন।
টোকিও স্কয়ারের সামনে কৃষিপণ্য কিনতে আসা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী আমিনুল হক বলেন, ‘বেলা সাড়ে ১১টায় এখানে এসে পেয়েছি শুধু আলু আর পেঁয়াজ। ডিম, পটোল, পেঁপে পাইনি।’
চাহিদা মিটছে না ঢাকার বাইরেও
নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি বিপাকে ফেলেছে দেশের সব জায়গার মানুষকেই। ঢাকা কিংবা বাইরের শহরগুলোতে এমনকি মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্যরাও সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য কিনতে লাইনে দাঁড়াচ্ছেন।
ময়মনসিংহ শহরের মৃত্যুঞ্জয় স্কুল রোডের বাসিন্দা আনোয়ারা বেগমের (৫৮) স্বামী ছিলেন প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার। তিনি মারা যাওয়ার পর সংসারে অভাব নেমেছে। গতকাল ওএমএসের আটা কিনতে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। বলেন, ‘সকাল সাতটায় এসেছি। নইলে পেছনে পড়তে হয়।’ সেখানে ডিলারের পক্ষ থেকে মোজাম্মেল হোসাইন বলেন, শুরুর দিকে প্রতি ক্রেতার কাছে পাঁচ কেজি করে চাল ও আটা বিক্রি করা হয়। তবে শেষের দিকে যাকে চাল দেওয়া যায়, তাকে আর আটা দেওয়া যায় না।
রংপুরে বুধবার সকালে ওএমএস ও টিসিবির ছয়টি কেন্দ্র সরেজমিনে দেখেছে প্রথম আলো। একটি কেন্দ্রে মনজুয়ারা বলেন, ‘এর আগে একদিন দুপুরে এসে পণ্য পাইনি। তাই আজ সকালেই এসেছি।’ শারমিন আক্তার নামের আরেকজন বলেন, ‘ওএমএসের চালের পরিমাণ বাড়ালে হামারগুলার উপকার হইল হয়। কেননা সংসারোত চাউল বেশি লাগে।’
সিলেটের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে পণ্য কিনতে লাইনে দাঁড়ানো তুতু মিয়া বলেন, তিনি রাতে চৌকিদারের কাজ করেন। সকাল সাড়ে ৭টায় ঘর থেকে বেরিয়ে এসে দেখেন তাঁর আগে ৫০ জন দাঁড়িয়ে আছেন।
খুলনা নগরের ময়লাপোতা আহসানউল্লাহ কলেজের পাশের ফুটপাতে বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় লম্বা লাইনে ছিলেন বিত্তহীন থেকে শুরু করে মধ্যবিত্তরা। তাঁদের একজন কাকলি দাশের (ছদ্মনাম) স্বামী ও দেবরের সেলুনের ব্যবসায় ভর করে চলে আট সদস্যের যৌথ সংসার। ওই নারী বলেন, ‘কিছুটা সাশ্রয়ের খোঁজে লাজলজ্জা ভুলে লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে।’
টিসিবির নতুন উদ্যোগ
দেশে এক কোটি পরিবার কার্ডধারীর মধ্যে ভোজ্যতেল, মসুর ডাল ও পেঁয়াজ বিক্রি করছে টিসিবি। তবে পেঁয়াজ বিক্রি আপাতত বন্ধ। এক পরিবার মাসে একবারই নিতে পারে দুই লিটার তেল ও দুই কেজি ডাল। সংস্থাটি এখন চালও বিক্রি করছে। পরিবার কার্ড না থাকলেও তা কেনার সুযোগ পাবেন যে কেউ। গতকাল থেকে ঢাকা মহানগরের ৫০টি ও চট্টগ্রাম মহানগরের ২০টি স্থানে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে এ বিক্রি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ১০০ টাকা লিটার দরে সর্বোচ্চ দুই লিটার ভোজ্যতেল, ৩০ টাকা কেজি দরে পাঁচ কেজি চাল ও ৬০ টাকা কেজি দরে দুই কেজি মসুর ডাল কিনতে পারবেন ভোক্তারা।
রাজধানীর তেজগাঁও শিল্প এলাকার দক্ষিণ বেগুনবাড়িতে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তিনি বাজার সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে ‘বিকল্প কৃষি বাজার’ চালুর ব্যাপারে জোর দেন।
[প্রতিবেদনের জন্য তথ্য দিয়েছেন ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, ময়মনসিংহ, রংপুর, কুমিল্লার নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা।