গাজীপুর 

তিতাসের গ্যাসলাইনে ফাটল, কারখানার উৎপাদন ব্যাহত 

তিতাস গ্যাসের স্থানীয় কার্যালয়ে বারবার অভিযোগ জানালেও তারা তা আমলে নেয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয় শিল্পমালিকদের।

তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড
ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা পল্লী বিদ্যুৎ এলাকায় মহাসড়কের সার্ভিস লাইনে তিতাসের অফিসের পাশে ভূগর্ভস্থ গ্যাস লাইন ফেটে গ্যাস বের হচ্ছে। এমন আরও কয়েকটি স্থানে এক বছরের বেশি সময় ধরে লাইন ফেটে গ্যাস বের হওয়ায় আশপাশের শিল্পকারখানাগুলোয় গ্যাসের চাপ কমে গেছে। এতে কারখানাগুলোর উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।

শিল্পমালিকেরা বলছেন, তিতাস গ্যাসের স্থানীয় কার্যালয়ে বারবার অভিযোগ জানালেও তারা তা আমলে নেয়নি। গ্যাসের চাপ কম থাকায় ডিজেলচালিত জেনারেটর ব্যবহার করে উৎপাদন কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে। এতে তাঁদের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে।

এলাকাবাসী ও কয়েকটি কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কালিয়াকৈর উপজেলার সফিপুরের ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের পাশে, আনসার একাডেমির ৩ নম্বর গেট এলাকায় এবং চন্দ্রা পল্লী বিদ্যুৎ সাবস্টেশনের সামনে এক বছরের বেশি সময় ধরে তিতাসের ভূগর্ভস্থ গ্যাস লাইন ফেটে গ্যাস বের হচ্ছে। এই তিন এলাকায় এ পর্যন্ত বেশ কয়েকবার আগুন ধরার ঘটনাও ঘটেছে। এতে বড় কোনো ক্ষতি না হলেও তা নিয়ে এলাকায় বেশ আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে চন্দ্রা পল্লী বিদ্যুৎ সাবস্টেশনের সামনে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ১০–১২ বার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে স্থানীয় লোকজন জানান। এ ছাড়া এলাকাটিতে গ্যাসের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে।

গ্যাসের চাপ কমার কারণে কারখানার উৎপাদন খরচ যেমন বাড়ছে, তেমনি উৎপাদনও কমে গেছে। তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষকে বারবার বলা সত্ত্বেও তারা কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
এম শাহাদাৎ হোসেন, চেয়ারম্যান, টাওয়েল টেক্স লিমিটেড

এলাকাবাসী ও শিল্পমালিকদের অভিযোগ, বিষয়টি তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষকে বারবার জানালেও তারা এখন পর্যন্ত ফাটল ধরা লাইন মেরামতের কোনো উদ্যোগ নেয়নি। যে কারণে বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। ফাটল মেরামতের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান না করে তিতাস কর্তৃপক্ষ গ্যাসের চাপ কমিয়ে রেখেছে। এ কারণে বেশ কয়েকটি কারখানায় গ্যাসের চাপ কমে গেছে। এতে কারখানাগুলোর উৎপাদন কর্মকাণ্ড ব্যাহত হচ্ছে এবং খরচ বেড়ে যাচ্ছে।

চন্দ্রা পল্লী বিদ্যুৎ এলাকার একটি মার্কেটে দোকান রয়েছে ব্যবসায়ী মাহফুজুর রহমানের। তিনি বলেন, রাস্তা দিয়ে মানুষ হেঁটে যাওয়ার সময় সিগারেট খেয়ে তা পাশেই ফেলে থাকেন। তা থেকে বিদ্যুতের সাবস্টেশনে কখনো আগুন ধরে ছড়িয়ে পড়লে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। 

চন্দ্রা পল্লী বিদ্যুৎ ও চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকার শিল্পকারখানার মালিকেরা প্রথম আলোকে জানান, মহাসড়ক ঘেঁষে কয়েকটি স্থানে তিতাসের ভূগর্ভস্থ গ্যাসলাইনের ফাটল থেকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তা মেরামতের কোনো উদ্যোগ নেয়নি। তারা পাইপ মেরামত না করে গ্যাসের চাপ কমিয়ে রেখেছে, যাতে দুর্ঘটনা না ঘটে। এদিকে গ্যাসের চাপ কমিয়ে রাখায় কারখানাগুলোতে যে পরিমাণ চাপ প্রয়োজন, তা পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে তাঁরা গ্যাসের জেনারেটর চালাতে না পেরে বাধ্য হয়ে ডিজেলের জেনারেটর চালাচ্ছেন। ফলে এসব কারখানার উৎপাদন যেমন কমছে, তেমনি উৎপাদন খরচও বেড়ে যাচ্ছে।

সম্প্রতি তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষকে চন্দ্রা এলাকার টাওয়েল টেক্স লিমিটেড নামের একটি কারখানা চিঠি দিয়েছে। সেখানে তারা উল্লেখ করেছে, গ্যাসের চাপ না থাকার কারণে প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। তাদের প্রেসার মেশিনে কখনো শূন্য বা কখনো এক বা দুই পিএসআই গ্যাসের চাপ থাকছে, যা দিয়ে কোনো কাজ করা যাচ্ছে না।

ওই কারখানার চেয়ারম্যান এম শাহাদাৎ হোসেন বলেন, গ্যাসের চাপ কমার কারণে কারখানার উৎপাদন খরচ যেমন বাড়ছে, তেমনি উৎপাদনও কমে গেছে। তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষকে বারবার বলা সত্ত্বেও তারা কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।

সরেজমিনে দেখা গেছে, চন্দ্রা পল্লী বিদ্যুৎ এলাকায় যেসব স্থান দিয়ে গ্যাস বের হচ্ছে, সেখানে তিতাসের লোকজন বাঁশের বেড়া দিয়ে রেখেছেন। বাঁশের খুঁটিতে লাল কাপড় ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। সেসব জায়গায় সড়কের কার্পেটিংও ফেটে গেছে।

কালিয়াকৈর ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ওয়্যার হাউস পরিদর্শক সাইফুল ইসলাম জানান, তিতাস গ্যাসের ভূগর্ভস্থ সরবরাহ লাইনের লিকেজ থেকে কয়েকটি স্থানে প্রায়ই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। 

তিতাস গ্যাসের চন্দ্রা জোনাল অফিসের ব্যবস্থাপক মোস্তফা মাহবুব বলেন, ‘বিষয়টি আমরা মেরামত বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। শিগগিরই ছিদ্রগুলো মেরামতের আশা করছি। মেরামত করা হয়ে গেলে গ্যাসের চাপ আগের মতো বেড়ে যাবে।’