স্থানীয় আড়তদার সমিতি আরপিডিএর পক্ষ থেকে একটি ফেসবুক গ্রুপে প্রতিদিন ডিমের দাম ঘোষণা করা হয়।
রাজশাহীতে প্রতিদিন কত টাকায় ডিম বিক্রি হবে, সেই দাম ঠিক করেন রাজশাহী পোলট্রি ডিলার অ্যাসোসিয়েশন বা আরপিডিএ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ‘আরপিডিএ’ নামে একটি গ্রুপ রয়েছে। এ গ্রুপের ফলোয়ারের সংখ্যা আড়াই হাজার। এ গ্রুপের মাধ্যমে বা মুঠোফোনে খুদে বার্তার মাধ্যমে সমিতি থেকে জানিয়ে দেওয়া হয় প্রতিদিনের ডিমের দাম। আর এই দাম ঘোষণা করেন আরপিডিএ সভাপতি মো. জয়নাল আবেদীন।
রাজশাহীর প্রান্তিক খামারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ডিমের উৎপাদন খরচ যা–ই হোক না কেন, ডিম বিক্রি হয় আরপিডিএ নির্ধারিত দামে। সেই দামে কখনো লাভে, কখনো লোকসানে বিক্রি করতে হয় খামারিদের। ডিমের বাজারমূল্য নির্ধারণের বিষয়ে এসব খামারি কিছুই জানেন না। তাই ডিমের দৈনিক দাম নির্ধারণের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন খামারিরা।
রাজশাহীর তানোর উপজেলার সুফিয়া স্টোরের স্বত্বাধিকারী সোহেল রানা। প্রান্তিক পর্যায়ের ছোট এক খামারি তিনি। তাঁর খামারে প্রতিদিন ৮০০ থেকে ৮৫০ ডিম উৎপাদিত হয়। তিনি ডিম ব্যবসায়ীদের কোনো সমিতির সঙ্গেই যুক্ত নন। অথচ তাঁকে সমিতির বেঁধে দেওয়া দামেই ডিম বিক্রি করতে হয় প্রতিদিন। সোহেল রানা প্রথম আলোকে বলেন, মুরগির খাবার বা ওষুধপত্রের দাম প্রতিদিন বাড়ে না। তাহলে প্রতিদিন কেন ডিমের দাম বেঁধে দিতে হয়। আমাদের মতো খামারিরা ডিমের দৈনিক দর বেঁধে দেওয়ার বিষয়ে কিছুই জানি না। কিন্তু বেঁধে দেওয়া দামেই আমাদের ডিম বিক্রি করতে হয়। তিনি জানান, ‘আরপিডিএ’ নামের ফেসবুক গ্রুপ থেকে তাঁরা প্রতিদিন ডিমের নতুন দর জানতে পারেন। তা ছাড়া সমিতির সদস্যদের মুঠোফোনেও নতুন দর জানিয়ে দেওয়া হয়।
খামারি, আড়তদার ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজশাহীর পবা উপজেলার মোসলেমের মোড় এলাকায় অবস্থিত ডিমের আড়তদার সমিতি তথা আরপিডিএর কার্যালয় থেকেই মূলত পরিচালনা করা হয় এ জেলার ডিমের কারবার। মোসলেমের মোড় এলাকায় সমিতির কার্যালয়ের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি বড় ডিমের আড়তও রয়েছে। এ এলাকা থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ডিম পাঠানো হয়।
আরপিডিএর সভাপতি মো. জয়নাল আবেদীন একাধারে খামারি ও আড়তদার। তাঁর খামারে প্রতিদিন ৩০ হাজার ডিম উৎপাদিত হয়। তিনিই প্রতিদিন রাজশাহীতে ডিমের দাম ঘোষণা করেন। গতকাল শনিবার সাদা ডিমের ক্রয়মূল্য ১০ টাকা ১০ পয়সা ও বিক্রয়মূল্য ১০ টাকা ৪০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়। আর লাল ডিমের ক্রয়মূল্য ১০ টাকা ৬০ পয়সা ও বিক্রয়মূল্য ১১ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। জয়নাল আবেদীন প্রথম আলোকে বলেন, প্রান্তিক খামারিদের স্বার্থের কথা চিন্তা করেই তিনি প্রতিদিন ডিমের দর বেঁধে দেন। কিন্তু সম্প্রতি বিভিন্ন ধরনের অভিযানের কারণে কেউ কেউ বেঁধে দেওয়া দামের চেয়েও কম দামে ডিম বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।
১১ আগস্ট রাজশাহীতে ডিমের হালি ৫২ টাকা হওয়ার পর বাজারে অভিযান শুরু করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। ওই দিন তিনটি প্রতিষ্ঠানকে ১৩ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ভোক্তা অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহাম্মদ সেলিম বলেন, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ঘোষণা দিয়েছে, কোনো অবস্থাতেই খুচরা পর্যায়ে একটি ডিমের দাম ১২ টাকার বেশি বিক্রি করা যাবে না। এরপর ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে আমরা জানিয়ে দিয়েছি, ডিম কেনাবেচার ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের রসিদ সংরক্ষণ করতে হবে। কেনাবেচার দুই ধরনের রসিদ দেখাতে না পারলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার কমলাপুরের খামারি এ এইচ এম আরিফুজ্জামানের খামারে প্রতিদিন তিন হাজার ডিম উৎপাদিত হয়। তিনি বলেন, আড়তদারেরা তাদের খেয়াল-খুশিমতো দাম বেঁধে দেয়। মাঠপর্যায়ের খামারিরা এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। তাই আমরা খামারিরা বুঝতে পারি না কেন প্রতিদিন ডিমের দাম বেঁধে দেওয়া হয়। বড় বড় কিছু কোম্পানিও এখন ডিম উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। তারাও দামের ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করে।
নগরীর মোসলেমের মোড়ের ডিমের বড় আড়তদার হাফিজুর রহমান। বিভিন্ন কোম্পানির পরিবেশকও তিনি, প্রতিদিন গড়ে দুই থেকে আড়াই লাখ ডিম কেনাবেচা করেন। তিনিও বললেন, আড়তদার সমিতি তাদের খেয়াল-খুশিমতো প্রতিদিন ডিমের দাম বেঁধে দেয়। কিন্তু তিনি সেই বেঁধে দেওয়া দামের নিয়মে চলেন না। তিনি নিজের মতো বাজার দেখে দাম ঠিক করেন।