ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার বনগজ গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলাম এবার শীত মৌসুমে এক একর জমিতে মুলা চাষ করেছেন। পাশের খাল থেকে খেতে পানি দেন। তাই বিদ্যুৎ বিল দিয়ে সেচ দেওয়ার ঝামেলা নেই। কিন্তু এই মৌসুমে প্রতি কেজি মুলা বিক্রি করছেন ১০ টাকায়। এই দর গত ২০ ডিসেম্বরের। একই সময়ে ভালো মানের এক কেজি মুলা ঢাকার কারওয়ান বাজারে ৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। উৎপাদক থেকে ভোক্তা পর্যায় পর্যন্ত আসতে মুলার দাম বেড়েছে তিন গুণ।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গিয়ে এই চিত্র দেখা গেছে। এ ছাড়া ফুলকপি, লাউ, মিষ্টিকুমড়াসহ বিভিন্ন শাকসবজির দামও গ্রামের চেয়ে শহরে প্রায় দ্বিগুণ থেকে তিন গুণ। অবশ্য শহরের চেয়ে গ্রামে চালের দাম কিছুটা কম। আর মাছের আধার তো গ্রামই।
কৃষিপণ্যের প্রায় পুরোটাই গ্রামে উৎপাদিত হয়। এ জন্য গ্রামের কৃষকেরা উপযুক্ত দাম পান না। ফলে তাঁদের আয় কমে যাচ্ছে। আবার তাঁদের ওপর মূল্যস্ফীতির চাপও বেশি। যেখানে খাদ্যপণ্য উৎপাদিত হয়, সেখানে ভোগ্যপণ্য কিনতেই হিমশিম দশা। গ্রামে কর্মসংস্থানের বড় উৎস হলো কৃষি খাত।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) গত ডিসেম্বর মাসের মূল্যস্ফীতির হিসাবে দেখা গেছে, ওই মাসে গ্রামে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ১১ শতাংশ। অন্যদিকে শহরে এই হার ৭ দশমিক ১১ শতাংশ।
গ্রামে মূল্যস্ফীতির চাপ বেশি। বিশেষ করে খাদ্যপণ্যে শহরের তুলনায় গ্রামে মূল্যস্ফীতি বেশি। শিল্প ও সেবা খাতে যে হারে মজুরি বেড়েছে, তার চেয়ে কম হারে বেড়েছে কৃষি খাতের মজুরি, তাতে গ্রামের মানুষের প্রকৃত আয় কমেছে। গত ডিসেম্বর মাসে গ্রামে কৃষিশ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির হার ছিল ৬ দশমিক ৯৫ শতাংশ। আর গ্রামে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ৮৬ শতাংশ।
শহরের চেয়ে মূল্যস্ফীতির চাপ বেশি থাকার কারণে গ্রামের মানুষ দুভাবে ভুগছেন। প্রথমত, গ্রামেই উৎপাদিত পণ্য কিনতে আগের চেয়ে বেশি টাকা খরচ করতে হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, কৃষক নিজের উৎপাদিত পণ্যের দাম পান না, কিন্তু কয়েক হাত ঘুরে শহরে এসে সেই পণ্যের দাম কয়েক গুণ বেড়ে যায়। এতে শহরের মানুষের ওপরও মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়ছে।
এই বিষয়ে বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান গ্রামের মূল্যস্ফীতির হিসাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, গ্রামে জিনিসপত্রের দাম তুলনামূলক কম। চাল-ডাল, শাকসবজি, মাছ-মাংস সবই গ্রামে উৎপাদিত হয়। কিন্তু কয়েক মাস ধরেই গ্রামের মূল্যস্ফীতি শহরের চেয়ে বেশি। গ্রামে মূল্যস্ফীতি কেন বেশি—এর ব্যাখ্যা বিবিএসের জানানো উচিত।
গ্রামে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে মূল্যস্ফীতি এখনো ১০ শতাংশের বেশি আছে। গত ডিসেম্বর মাসে গ্রামে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে ১০ দশমিক ২৯ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হয়েছে। গ্রামের মানুষের যাতায়াত, পোশাক-আশাক ও চিকিৎসা খরচ বেড়েছে।