দেশি পেঁয়াজ, রসুন, শুকনা মরিচ, হলুদ, আদা, দারুচিনিসহ বেশির ভাগ মসলার দাম বেড়েছে।
পুরান ঢাকার শ্যামবাজারের একটি দোকান থেকে বৃহস্পতিবার দুপুরে এক কেজি হলুদ কেনেন বেসরকারি চাকরিজীবী মো. শফিকুল ইসলাম। তারপর আধা কেজি জিরা কেনার জন্য দাম জিজ্ঞেস করেন তিনি। ৮৫০ টাকা কেজি জিরা—দোকানদার এমনটা বলতেই শফিকুল আনমনে বলে ওঠেন, ‘ওরে বাবা, এত দাম!’
বাড়তি দামের কারণে শফিকুল ইসলাম আর জিরা কেনেননি। চলে যাওয়ার সময় তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ৫০০ টাকা দরে পেলে আধা কেজি কিনতাম। কিন্তু এত টাকা দিয়ে তো কেনা সম্ভব নয়। ২০, ৩০ টাকায় অল্প অল্প করে কিনে খেতে হবে।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যমতে, ২০২২ সালের ২২ জুন প্রতি কেজি জিরা সর্বনিম্ন ৩৮০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৪৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে জিরার দাম বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি।
কোরবানির ঈদের আগে অন্যান্য মসলাও স্বল্প আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে। দেশি পেঁয়াজ, রসুন, শুকনা মরিচ, হলুদ, আদা, দারুচিনিসহ বেশির ভাগ মসলার দাম বেড়েছে। তার মধ্যে ক্ষেত্রভেদে আদা ও রসুনের দাম দ্বিগুণ হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর শ্যামবাজার, সূত্রাপুর ও কারওয়ান বাজার ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই বাজারে মসলার দাম বাড়ায় কোরবানির ঈদে মানুষের ওপর চাপ আরও বাড়বে।
গত কোরবানির চেয়ে এবার বেশির ভাগ মসলার দাম বেশি। ব্যবসায়ীরা ঠিকমতো এলসি (ঋণপত্র) খুলতে পারলে মসলার দাম এত বেশি হতো না।গোলাম মোস্তফা, পরিচালক, দীঘিরপাড় বাণিজ্যালয়, শ্যামবাজার
মসলার পাইকারি বড় বাজার রাজধানীর শ্যামবাজার। বৃহস্পতিবার শ্যামবাজার ঘুরে মিয়ানমার, ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়ার আদা পাওয়া গেল। মানভেদে এসব আদার দাম পাইকারি ১২০ থেকে ২৫০ টাকা। আর কারওয়ান বাজারে তা খুচরায় প্রতি কেজি ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা। অথচ টিসিবি বলছে, এক বছর আগেও এসব আদা ৬০ থেকে ১০০ টাকা দরে খুচরায় বিক্রি হয়েছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশে আদার বড় জোগানদার চীন। কিন্তু বেশি দাম হওয়ায় চীনের আদা এখন দেশে নেই। ভারতের আদাও এখন বাজারে কম। মূলত এ কারণে বছরের ব্যবধানে আদার দাম দ্বিগুণের বেশি।
বেড়েছে শুকনা মরিচের দামও। এক বছর আগে দেশি শুকনা মরিচ যেখানে ২২০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, সেই মরিচ শ্যামবাজারে ৩০০ থেকে ৩৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভারতীয় শুকনা মরিচ বিক্রি হচ্ছে আরও বাড়তি দামে ৩৮০ টাকা কেজি। খুচরা বাজারে, যেমন কারওয়ান বাজারে বিদেশি শুকনা মরিচ ৪৮০ টাকা দাম হাকাতেও দেখা গেছে।
গাজীপুরের টঙ্গীর শান ফুড নামের একটি গুঁড়া মসলা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানে ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করেন রাশেদুজ্জামান। শ্যামবাজারে তিনি ১০০ কেজি শুকনা মরিচ কেনার জন্য আসেন বৃহস্পতিবার। সেগুলো গুঁড়া করার পর প্যাকেটজাত করে তারা বিক্রি করবেন। রাশেদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘শুকনা মরিচ ৩০০ টাকার নিচে আশা করেছিলাম। কিন্তু ৩৮০ টাকা পর্যন্ত দাম চাইছে। এত দাম দিয়ে মরিচ কিনলে আমাদের পক্ষে ব্যবসা করা কঠিন হয়ে যাবে।’
সরকার আমদানির অনুমতি দেওয়ায় ভারতীয় পেঁয়াজ মানুষের নাগালের মধ্যে চলে এসেছে। তবে দেশি পেঁয়াজের জন্য এখনো বাড়তি দাম গুনতে হচ্ছে। শ্যামবাজারে দেশি পেঁয়াজ ৫৫ থেকে ৬১ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। খুচরা বাজারগুলোয় তা ৭৫ থেকে ৮০ টাকা। টিসিবির হিসাবে তার এক বছর আগে দেশি পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে।
বৃহস্পতিবার কারওয়ানবাজারে দেশি রসুন ১৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এক বছর আগে ২০২২ সালের ২২ জুন টিসিবির হিসাবে দেশি রসুন বিক্রি হয় সর্বনিম্ন ৫০ থেকে সর্বোচ্চ ৮০ টাকায়। অর্থাৎ ক্ষেত্রভেদে দ্বিগুণের বেশি হয়েছে রসুনের দামও।
কারওয়ান বাজার, শ্যামপুর ও সূত্রাপুর বাজারে প্রতি কেজি ধনিয়া ১৬৫ থেকে ২২০ টাকায়, লবঙ্গ ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকায় এবং দারুচিনি ৪১০ থেকে ৪৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর টিসিবির হিসাবে বছরখানেক আগে ধনিয়া ১২০ থেকে ১৫০ টাকায়, লবঙ্গ ১ হাজার ৫০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় এবং দারুচিনি ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডলার–সংকটের কারণে আমদানিকারকেরা পর্যাপ্ত পরিমাণে মসলা আমদানি করতে পারছেন না। আন্তর্জাতিক বাজারেও কিছু কিছু মসলার দাম বেশি। আমদানি খরচও বেড়েছে। তা ছাড়া সার, জ্বালানি ও শ্রমিক খরচ বাড়ায় দেশেও মসলার উৎপাদন খরচ বেড়েছে। সেই সঙ্গে পরিবহন খরচও বেশি। মূলত এসব কারণে বেড়েছে মসলার দাম।
শ্যামবাজারের দীঘিরপাড় বাণিজ্যালয়ের পরিচালক গোলাম মোস্তফা বলেন, গত কোরবানির চেয়ে এবার বেশির ভাগ মসলার দাম বেশি। ব্যবসায়ীরা ঠিকমতো এলসি (ঋণপত্র) খুলতে পারলে মসলার দাম এত বেশি হতো না।