গতকাল ৩৭টি প্রকল্প পাস হয়েছে, যা এযাবৎকালে এক বৈঠকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এ জন্য ব্যয় হবে ৫২ হাজার কোটি টাকা।
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) এক বৈঠকেই মোট ৩৭টি প্রকল্প পাস হয়েছে, যা এযাবৎকালের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এ জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৫২ হাজার ৬১২ কোটি টাকা। এর আগে ২০১৮ সালে নির্বাচনের আগে এক বৈঠকে ৩৮টি প্রকল্প পাস হয়েছিল।
গতকাল মঙ্গলবার একনেকের এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে সব মিলিয়ে ৪৪টি নতুন প্রকল্প অনুমোদনের জন্য উত্থাপন করা হয়। এর মধ্যে সাতটি প্রকল্প ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া এদিন ছয়টি প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়। নির্বাচনের আগে প্রভাবশালী মন্ত্রী-এমপি ও আমলারা নিজ নিজ এলাকার জন্য প্রকল্প পাস করিয়ে নিচ্ছেন। নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে আরেকটি একনেক সভা হতে পারে বলে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলমসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা গতকাল একনেক সভা শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রকল্পগুলোর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।
সরকারের শেষ সময়ে কেন এত প্রকল্প পাস করা হলো, এমন প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘যদি আমার হাতে ক্ষমতা থাকত, তাহলে বেশি বেশি প্রকল্প পাস করতাম। বেশি প্রকল্প পাস করতে পারলে উৎফুল্ল হতাম।’
এ বিষয়ে পরিকল্পনা বিভাগের সচিব সত্যজিত কর্মকার বলেন, ‘প্রকল্প পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই–বাছাই করে পাস করা হয়। টিক মার্ক দিয়ে প্রকল্প পাস করি না। নির্বাচনকেন্দ্রিক কোনো প্রকল্প পাস করা হয় না।’
একনেক সভায় পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রীর এলাকা চাঁদপুরের মতলবে মেঘনা-ধনাগোদা নদীর ওপর ৪ হাজার ১৭৪ কোটি টাকার একটি ঝুলন্ত সেতু নির্মাণের প্রকল্প পাস হয়। এর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালীর ১ কোটি ৮০ লাখ মানুষ উপকৃত হবেন। ভবিষ্যতে চাঁদপুর-শরীয়তপুর সেতু হলে তা পায়রা বন্দরের সঙ্গে এই অঞ্চলকে যুক্ত করবে।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘জনগণের ওপর আমাদের আস্থা আছে। আমরা ধ্বংসাত্মক কাজে নেই। আমরা আবার ক্ষমতায় আসব, আমরা উন্নয়নকাজ চালিয়ে যাব। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ধ্বংসাত্মক রাজনৈতিক কর্মসূচি অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলছে। আমি নিজেই র্যাডিসন হোটেলের কর্মীদের কাছ থেকে জেনেছি, আগামী বেশ কয়েকটি বুকিং বাতিল হয়েছে।’
পরিকল্পনামন্ত্রী আরও বলেন, রাজনীতির নামে যা চলছে, তা গ্রহণযোগ্য নয়। সম্পদ ধ্বংস, প্রাণহানিসহ অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর যেসব কার্যক্রম এখন চলছে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এসব বিনাশী কার্যক্রম পরিত্যাজ্য। প্রধানমন্ত্রী দ্রুত প্রকল্প শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
সড়ক-মহাসড়ক মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের খরচ জোগাতে টোল বা পথশুল্ক আদায় করা হবে। এ জন্য সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি মূল্যায়নের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একনেক সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন হিসেবে এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘দেশে এত এত সড়ক। আমাদের ভাটির দেশ। সড়ক ভেঙে যায়। আবার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কারণেও সড়কে যানবাহন চলাচল বেড়েছে। এ জন্য রাস্তা মেরামত করতে হয়। এসব সড়ক মেরামতের জন্য টোল আদায় করে জোরালো তহবিল গঠন করা হবে। প্রধানমন্ত্রী এই নির্দেশনা দিয়েছেন।’