ঢাকার পূর্বাচলে ৩০০ ফুট রাস্তার শেষ প্রান্তে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্রের (বিবিসিএফইসি) আবহাওয়া ছিল বেশ আরামদায়ক। না গরম, না ঠান্ডা। এ আরাম চোখেও অনুভব করবেন, যদি আপনি থাকেন নাদিয়া ফার্নিচারের প্যাভিলিয়নে। নজরকাড়া সব ডিজাইনের পণ্য নিয়ে বাণিজ্য মেলায় অংশ নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ফার্নিচারগুলো দেখলেই যে কারও মন জুড়িয়ে যাবে।
নাদিয়া ফার্নিচারের প্যাভিলিয়নের সামনে গেলেই মনে হবে ‘যাই, ভেতরটা একটু ঘুরে আসি’। প্যাভিলিয়নটি সাজানো হয়েছে গৃহে ব্যবহৃত ফার্নিচার দিয়ে। প্রবেশপথের পাশে দুটো চেয়ার আর একটি টি-টেবিল রাখা। দেখেই মনে হবে প্রিয়জনের সঙ্গে বসে আরাম করে এক কাপ চা খাই। নান্দনিক চেয়ার আর টি-টেবিলের ডিজাইনগুলো দেবে ভালো লাগার অনুভূতি।
জানুয়ারির শেষ সপ্তাহের একদিন। শীতের সকালে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় নাদিয়া ফার্নিচারের প্যাভিলিয়নে ছিল বেশ ভিড়। কেউ নিজের পছন্দের ফার্নিচার ছুঁয়ে আবার কেউ চেয়ার বা সোফায় আরাম করে বসে মান যাচাই করে নিচ্ছেন। অনেকেই ছবি তুলে অন্তর্জালের মাধ্যমে পাঠাচ্ছেন দূরে থাকা প্রিয়জনের কাছে।
প্যাভিলিয়নে দায়িত্বরত কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন শরীফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘরে ব্যবহার করা যায়—মেলায় নাদিয়া ফার্নিচারের এমন ফার্নিচারগুলোই প্রদর্শিত হচ্ছে। ক্রেতারা নিজেদের পছন্দমতো ফার্নিচার দেখে বাছাই করছেন।’
মো. মহিউদ্দিন শরীফ হোসেন আরও বলেন, ‘আমাদের প্যাভিলিয়নে পর্যায়ক্রমে শতাধিক নতুন এবং বিশ্বমানের ফার্নিচার দৃশ্যমান করা হবে। মেলার পাশাপাশি রাজধানীসহ সারা দেশে থাকা শোরুমেও ফার্নিচারগুলো পাওয়া যাবে।
নাদিয়া ফার্নিচারের প্যাভিলিয়নে সোফায় বসে ফার্নিচারটি দেখছিলেন ব্যবসায়ী মিনহাজ মিয়া ও তাঁর স্ত্রী সালমা বেগম। আয়েশিভাবে বসে থাকার ভঙ্গি দেখেই বোঝা যাচ্ছিল সোফাটি ওই দম্পতির পছন্দ হয়েছে। জানতে চাইলে সালমা বেগম বলেন, ‘সোফাটি দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনি বসেও বেশ আরাম।’ আর ঘরের কোন পাশে সোফাটি রাখবেন, সেই চিন্তাই করছিলেন মিনহাজ মিয়া।
প্যাভিলিয়নে ফার্নিচার দেখতে পরিবার নিয়ে মেলায় এসেছেন চাকরিজীবী আকিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘মা–বাবার জন্য একটি আরামদায়ক বেড কিনতে এসেছি। বাচ্চারা তাদের দাদা-দাদির জন্য নিজেরা পছন্দ করে ফার্নিচার কিনবে। তাই সবাই মিলে আসা।’ এরই মধ্যে দেখা গেল, প্যাভিলিয়নে থাকা প্রতিটি বেড দাদা-দাদিকে দেখাতে নিয়ে যাচ্ছে দুই নাতনি।
প্যাভিলিয়নে প্রতিটি ফার্নিচারের একটি বা দুটি ডিজাইন প্রদর্শন করা হলেও নাদিয়ার সংগ্রহে রয়েছে আরও বেশি ডিজাইন। মো. মহিউদ্দিন শরীফ হোসেন জানান, নাদিয়া ফার্নিচারে সোফা ক্যাটাগরিতে রয়েছে ২০ থেকে ২৫টি ডিজাইন। দুই-দুই-এক সংখ্যার সোফাগুলোর দাম ৭০ হাজার থেকে ১ লাখ ৬৬ হাজার টাকা। বেডরুমের আলমারি রয়েছে ১৫ থেকে ১৮টি ডিজাইনের। দাম ৩৮ হাজার ৫০০ থেকে ৮৮ হাজার টাকা। ডাইনিং টেবিল রয়েছে ১২ থেকে ১৫টি ডিজাইনের। এর মধ্যে কয়েকটি রয়েছে মার্বেল পাথর দিয়ে তৈরি। এগুলোর দাম ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ ৯৩ হাজার টাকা। ৩৬ হাজার থেকে শুরু করে ৮৩ হাজার টাকা দামের ৮ থেকে ১০টি শোকেস রয়েছে। চারটি ডিজাইনের বুক শেলফের দাম ৩২ হাজার থেকে ৩৫ হাজার টাকা। টি-টেবিল সেট আছে পাঁচ-ছয়টি ডিজাইনের। এগুলোর দাম ১৩ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৩৯ হাজার টাকা। এ ছাড়া নাদিয়া ফার্নিচারের রয়েছে অফিস ও স্কুল ফার্নিচারও।
ক্রেতারা চাইলে নিজস্ব ইন্টেরিয়র ডিজাইনার দিয়ে বাসা বা অফিস সাজিয়ে দেবে নাদিয়া ফার্নিচার। এ বিষয় মো. মহিউদ্দিন শরীফ হোসেন বলেন, ‘অনেক ক্রেতা নিজেদের নতুন বাসা বা প্রতিষ্ঠান কীভাবে সাজাবেন, সেটা ভালোভাবে বুঝতে পারেন না। তাঁদের জন্য নাদিয়া ফার্নিচার নিজস্ব ইন্টেরিয়র ডিজাইনার দিয়ে তাঁদের পছন্দমতো সাজিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থাও রেখেছে। এ ছাড়া নাদিয়া ফার্নিচার ক্রেতাদের পছন্দ অনুযায়ী নিজস্ব ডিজাইনের দরজা তৈরি করে দেয়।’
মেলা উপলক্ষে নাদিয়া ফার্নিচার দিচ্ছে বিশেষ ছাড়। মেলা চলাকালীন প্রতিষ্ঠানটির যেকোনো ফার্নিচার কিনলে থাকছে সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ ছাড়। নতুন আসবাব কিনতে হিমশিম খান অনেক মধ্যবিত্ত দম্পতি। সাধ আর সাধ্যের মধ্যে সমন্বয় ঘটাতে নাদিয়া ফার্নিচার সারা বছরই ‘ইকুয়েটেড মান্থলি ইনস্টলমেন্ট (ইএমআই)’ সুবিধা দিয়ে থাকে ক্রেতাদের।
জানা গেছে, ২২টি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে ক্রেতারা নাদিয়া ফার্নিচার থেকে পছন্দের পণ্যটি কিনতে পারবেন। মূল্য পরিশোধের জন্য ক্রেতারা পাবেন ১২ মাস। অর্ডার দেওয়ার ১৫ কর্মদিবসের মধ্যেই পণ্য পৌঁছে দেওয়া হবে বাংলাদেশে যেকোনো প্রান্তে।
নাদিয়া ফার্নিচারের পণ্যে দুই ধরনের বিক্রয়োত্তর সেবা পাবেন গ্রাহকেরা। প্রস্তুতকৃত ত্রুটি বা ‘ম্যানুফ্যাকচারিং ডিফেক্টে’র জন্য রয়েছে এক বছরের ওয়ারেন্টি এবং ঘুনে ধরাজনিত সমস্যায় রয়েছে পাঁচ বছরের রিপ্লেসমেন্ট গ্যারান্টি। ক্রেতারা চাইলে অনলাইন ও ফেসবুক পেজে নাদিয়া ফার্নিচারের পণ্য পছন্দ ও অর্ডার করতে পারেন।
নাদিয়া ফার্নিচারের যাত্রা শুরু ১৯৯১ সালে। ঢাকার অন্যতম প্রধান এলাকা বারিধারা, উত্তরা, ধানমন্ডি, খিলগাঁও, মোহাম্মদপুরসহ সব বিভাগীয় শহরে প্রতিষ্ঠানটির রয়েছে শোরুম। তিন দশক পেরিয়ে ইতিমধ্যে ক্রেতাদের আস্থা ও নির্ভরতার নাম হয়ে উঠেছে ফার্নিচার ব্র্যান্ডটি।