সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী, বর্তমানে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য এম এ মান্নান বলেছেন, মন্ত্রী থাকার সময় তাঁর হাত দিয়ে এমন প্রকল্প একনেকে গেছে, যেগুলোর সঙ্গে তিনি মনেপ্রাণে একমত ছিলেন না। তিনি বলেন, ‘আমরা বাস করি ভূতলে (মাটিতে), আর বিনিয়োগ করি পাতালে। এ ধরনের অনেক প্রকল্প বাংলাদেশে আছে।’
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) আয়োজনে ঢাকার একটি হোটেলে আজ বুধবার অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশের অর্থনীতির স্বাধীন পর্যালোচনা: ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটের বিশ্লেষণ’ শীর্ষক সংলাপে এম এ মান্নান এ কথা বলেন। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সৈয়দ মঞ্জুর এলাহীর সঞ্চালনায় এতে মূল পর্যালোচনা তুলে ধরেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।
সংলাপে আরও বক্তব্য দেন সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান ও রাশেদা কে চৌধূরী, সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ, শ্রমিকনেতা রাজেকুজ্জামান রতন, বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ প্রমুখ।
এম এ মান্নান এখন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি। তবে অনুষ্ঠানে তিনি নিজের বক্তব্যে বলেন, ‘রাজনৈতিকভাবে আমি দলে ও সংসদে আছি। প্রতিনিধিত্ব করছি সাধারণ মানুষ ও গ্রামীণ এলাকার। আমরা গ্রামে বিদ্যুৎ পেয়েছি। কমিউনিটি ক্লিনিক পেয়েছি। প্রধানমন্ত্রী এসব দিয়েছেন।’
এম এ মান্নান বলেন, ‘বাজেটে কোথায় ব্যয় করছি, সেখান থেকে আমরা কী পাচ্ছি—এসব বিচার করা দরকার। আদৌ কোনো ফল পাচ্ছি কি না, তা–ও দেখা দরকার।’ প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রায় ১০ বছরের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এখানে কোনো কোনো জায়গায় আমার ভিন্নমত অবশ্যই আছে।’
‘মূল্যস্ফীতি আমাদের কষ্ট দেয়’—স্বীকার করে এম এ মান্নান বলেন, ‘সাধারণ জ্ঞানে বলছি, আমাদের মূল্যস্ফীতি হচ্ছে ক্রিপিং (যা ধীরে ধীরে বাড়ে)। এটা যদি দ্রুতগতির হতো বা বল্গাহীন হতো, তাহলে ছোবল কত বেশি হতো, তা অচিন্তনীয়।’
সাবেক এই পরিকল্পনামন্ত্রী আরও বলেন, ‘প্রবৃদ্ধির একটা বাইপ্রোডাক্ট হচ্ছে মূল্যস্ফীতি। একটাকে ছেড়ে আরেকটা করা যাবে না। প্রবৃদ্ধি না করলে আমাদের জীবনযাত্রা নিচে নেমে আসবে। মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে যাবে, কিন্তু আমাদের সবকিছু নেমে আসবে। এই ঝুঁকি আমাদের নিতে হবে। বড় অর্থনীতির দেশগুলো এ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই গেছে।’
অনুষ্ঠানে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি কাজী নাবিল আহমেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন শিক্ষার ক্ষেত্রে। জেলায় জেলায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করা হয়েছে। ছাত্ররা বিদেশের বিভিন্ন স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে গিয়ে উচ্চ শিক্ষা অর্জন করছে, গবেষণা করছে, তাদের সাক্ষরতার প্রমাণ রাখছে।
কাজী নাবিল আহমেদ আরও বলেন, ‘প্রযুক্তির নির্ভর একটি অর্থনৈতিক পদ্ধতি দাঁড় করানোর চেষ্টা হচ্ছে। তবে আমরা যদি কৃষি খাত, পোশাক খাত ও প্রবাসী আয়ের পাশাপাশি আরও বিভিন্ন খাতে প্রবৃদ্ধি করতে না পারি তাহলে সামনের দিনগুলো আমাদের জন্য কঠিন হবে।’