ব্যবসায়ী সংগঠনে ভোট ‘উধাও’, বছরের পর বছর নেতৃত্বে সরকার–ঘনিষ্ঠরা

অধিকাংশ জেলা কিংবা পণ্যভিত্তিক ব্যবসায়ী সংগঠনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সরকার–ঘনিষ্ঠ কিংবা আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের পদধারী ব্যবসায়ীরা।

নিট পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ, আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাব, প্লাস্টিক পণ্য প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিপিজিএমইসহ অনেক পণ্যভিত্তিক বড় সংগঠনে এখন আর ভোট হচ্ছে না।
নিট পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ, আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাব, প্লাস্টিক পণ্য প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিপিজিএমইসহ অনেক পণ্যভিত্তিক বড় সংগঠনে এখন আর ভোট হচ্ছে না।

ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতা নির্বাচনে ভোট প্রায় ‘নাই’ হয়ে গেছে। জেলা পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের সংগঠন জেলা চেম্বারগুলোর অধিকাংশের কমিটি হয়েছে ভোটাভুটি ছাড়া। পণ্যভিত্তিক সংগঠনগুলোতেও সমঝোতার মাধ্যমে কমিটি হচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, অধিকাংশ জেলা ও পণ্যভিত্তিক ব্যবসায়ী সংগঠনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সরকার–ঘনিষ্ঠ কিংবা আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের পদধারী ব্যবসায়ীরা। তাঁদের মধ্যে অনেকে বছরের পর বছর ধরে আঁকড়ে আছেন পদ। এর ফলে নিজ সংগঠনের নেতা নির্বাচন করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ ব্যবসায়ীরা। আর ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রকৃত চিত্র নিয়েও ব্যবসায়ী সমাজে তেমন আলোচনা হচ্ছে না। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভৈরবসহ দেশের ৬৩টি জেলা চেম্বারের মধ্যে ৪৩টিতে সর্বশেষ কমিটি হয়েছে কোনো রকমের ভোট ছাড়া। আর ভোট হয়েছে ১৭টিতে। ৩টিতে ভোটাভুটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে প্রশাসক বসেছে। ২৮টি জেলা চেম্বারের সভাপতি আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের পদে আছেন। ৬টি চেম্বারের সভাপতি পদে আছেন আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা। আবার ৫টি জেলা চেম্বারের সভাপতি নিকট আত্মীয় আওয়ামী লীগের নেতা। অন্যদিকে তিনটি জেলা চেম্বারের সভাপতি বিএনপির সাবেক নেতা আর দুটির সভাপতি জাতীয় পার্টির সাবেক নেতা।

অন্যদিকে নিট পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ, আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাব, প্লাস্টিক পণ্য প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিপিজিএমইসহ অনেক পণ্যভিত্তিক বড় সংগঠনে এখন আর ভোট হচ্ছে না। এমনকি ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ে টানা দুই মেয়াদে ভোট হয়নি। সর্বশেষ গত জুলাইয়ের নির্বাচনে আংশিক পদে ভোট হয়েছে। শেষ পর্যন্ত যাঁরা পর্ষদে ঠাঁই পেয়েছেন, তাঁরা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।

বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতা হতে পারলে স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়া, রাজনৈতিক দলের পদ পাওয়া, এলাকায় প্রভাব বিস্তার ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিদেশ সফরে যাওয়ার সুযোগ হয়। নিজ নিজ ব্যবসার ক্ষেত্রেও সুবিধা হয়। এসব কারণে ব্যবসায়ীদের একটি অংশের মধ্যে যেকোনোভাবে নেতা হওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন জেলায় রাজনৈতিক দলের নেতারাও ব্যবসায়ী সংগঠনের পদ দখলে রাখতে উদ্যোগী হয়ে উঠেছেন। সরকারি দলের ওপর মহল আবার নিজেদের স্বার্থে তাঁদের ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতা করতে সমর্থন দিচ্ছে। ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সব ধরনের নির্বাচনপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করে সমঝোতার মাধ্যমেই অধিকাংশ কমিটি হচ্ছে।

এফবিসিসিআইয়ের সদ্য বিদায়ী সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, বেশির ভাগ জেলা চেম্বার ও পণ্যভিত্তিক ব্যবসায়িক সংগঠনে দেখা যায়, যাঁরা নেতৃত্বে আছেন, তাঁরাই থাকতে চান। ব্যবসায়ীদের কথা বলার জন্য এসব সংগঠনে নতুন নেতৃত্ব দরকার। সে জন্য দুই মেয়াদের বেশি নেতৃত্ব থাকা উচিত নয়। যোগ্য ব্যক্তিকে নেতৃত্বে আনতে হলে অবশ্যই বর্তমান নিয়মনীতিতে সংস্কার আনতে হবে। তিনি বলেন, নতুন বাণিজ্য সংগঠন আইন হওয়ার এক বছর না যেতেই সংশোধন করা হলো। অথচ আইনটি বাস্তবায়নের জন্য বিধিমালা করা হয়নি। কঠোর বিধিমালার মাধ্যমে ব্যবসায়ী সংগঠনের সংস্কার প্রক্রিয়া শুরু করা প্রয়োজন।

এফবিসিসিআইতে ভোট অনিয়মিত

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি ও সহসভাপতি কে হবেন, তা ঠিক করে দেয় সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে। বিগত বেশ কয়েকটি নির্বাচনে সভাপতি পদে সরকার-সমর্থিত প্রার্থীর বিপরীতে কেউ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি। ফলে ব্যবসায়ী মহলের আলোচনা হচ্ছে, এফবিসিসিআই সরকারের ব্যবসায়ী শাখা।

সর্বশেষ জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত নির্বাচনেও পুরোপুরি ভোটের ধারায় ফিরতে পারেনি এফবিসিসিআই। আংশিক ভোট হয়েছে। যদিও সভাপতি কে হচ্ছেন, তা ভোটের আগেই চূড়ান্ত হয়ে যায়। ফলে চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সভাপতি মো. মাহবুবুল আলম বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রথমে পরিচালক ও পরে সভাপতি নির্বাচিত হন। যদিও ভোটে বিরোধী প্যানেল হিসেবে পরিচিত সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ ২৩ পরিচালক পদের মধ্যে ১৫টিতে জয়ী হয়। সভাপতি মাহবুবুল আলম আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক উপকমিটির সদস্য। জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন বাংলাদেশ পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ ও বিপণন সমিতির প্রতিনিধি মো. আমিন হেলালী।

ছয়জন সহসভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন সুনামগঞ্জ চেম্বারের সভাপতি ও জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক খাইরুল হুদা, গাজীপুর চেম্বারের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের শিল্প-বাণিজ্যবিষয়ক উপকমিটির সদস্য আনোয়ার সাদাত সরকার, বাংলাদেশ চেম্বারের প্রতিনিধি ও ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ যশোদা জীবন দেবনাথ, ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শমী কায়সার, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরীর ছেলে রাশেদুল হোসেন চৌধুরী এবং এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি ও আওয়ামী লীগের শিল্প-বাণিজ্যবিষয়ক উপকমিটির সদস্য মুনির হোসেন। এঁদের মধ্যে শুধু শমী কায়সার ও রাশেদুল হোসেন চৌধুরী নির্বাচনে সরাসরি ভোটে পরিচালক নির্বাচিত হন। বাকিরা মনোনীত ও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত পরিচালক।

ব্যবসায়ী সংগঠনের ক্ষমতায় পছন্দের বা নিজেদের লোক বসানোর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডা হাসিল করা। এর মাধ্যমে ক্ষমতার সঙ্গে ব্যবসার গভীর যোগসূত্র তৈরি হয়েছে।
ইফতেখারুজ্জামান, নির্বাহী পরিচালক, টিআইবি

মাহবুবুল আলম সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ায় এফবিসিসিআইয়ে মো. জসিম উদ্দিনের মেয়াদ শেষ হয়। ২০২১ সালে তিনি ভোট ছাড়াই সভাপতি হন। তার আগে শেখ ফজলে ফাহিম একইভাবে সভাপতি হন। অবশ্য ২০১৭ সালে আংশিক পদে ভোট হয়েছিল। সে সময় সভাপতি হন শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন। তিনি বর্তমানে ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য।

শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিনসহ এফবিসিসিআইয়ের সর্বশেষ ১১ জন সভাপতির ৮ জনই বর্তমানে সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। সদ্য বিদায়ী সভাপতি জসিম উদ্দিন আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক উপকমিটির সদস্য, তাঁর আগে সভাপতির দায়িত্বে থাকা শেখ ফজলে ফাহিম যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য। সাবেক সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য, ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন কুমিল্লা–৩ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য। আরেক সাবেক সভাপতি সালমান এফ রহমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা। সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ আওয়ামী লীগ থেকে আগামী সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়া চেষ্টা করছেন। অন্যদিকে আবদুল আউয়াল মিন্টু বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা।

এ ছাড়া প্রয়াত আনিসুল হক আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন।

২০১৫ সাল থেকে শরীয়তপুর চেম্বারের সভাপতি সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হকের ভাই এ কে এম ইসমাইল হক। তিনিও বিনা ভোটে সভাপতি পদে আছেন। ইসমাইল হক জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও নড়িয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান।

জেলা চেম্বারে দলীয় নেতারা

এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি ও সহসভাপতির পদ পেতে সরকারের আশীর্বাদ লাগে। এ ক্ষেত্রে সরাসরি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরাই এগিয়ে থাকেন। জেলা চেম্বারের নেতা হতেও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের সুদৃষ্টির প্রয়োজন হচ্ছে। অবশ্য নিজে আওয়ামী লীগের নেতা হলে ভোট ছাড়াই নেতা হওয়া যাচ্ছে।

দেড় যুগ ধরে গাজীপুর ও বান্দরবান জেলার চেম্বারের সভাপতি পদে আছেন যথাক্রমে আনোয়ার সাদাত সরকার ও কশৈহ্লা মারমা। আনোয়ার সাদাত কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের শিল্প-বাণিজ্যবিষয়ক উপকমিটির সদস্য এবং কশৈহ্লা মারমা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি।

এদিকে ১৩ বছর ধরে বরিশাল চেম্বারের সভাপতি পদে আছেন সাইদুর রহমান। এই লঞ্চ ব্যবসায়ী ভোট ছাড়াই সভাপতি হয়েছেন। তিনি মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। একই সঙ্গে তিনি সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানও। তাঁর মতো একই সময় ধরে খুলনা চেম্বারের সভাপতি আছেন কাজী আমিনুল হক। তিনি মহানগর আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি পদেও আছেন।

১০ বছর ধরে সভাপতি পদে আছেন বগুড়া চেম্বারের মাসুদুর রহমান, সাতক্ষীরার নাসিম ফারুক খান ও চুয়াডাঙ্গার মো. ইয়াকুব হোসেন মালিক। তাঁদের মধ্যে মাসুদুর রহমান ও নাসিম ফারুক ভোট ছাড়া সভাপতি হয়েছেন। মাসুদুর রহমান জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষের পদে আছেন। নাসিম ফারুক জেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক।

এদিকে ২০১৫ সাল থেকে শরীয়তপুর চেম্বারের সভাপতি সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হকের ভাই এ কে এম ইসমাইল হক। তিনিও বিনা ভোটে সভাপতি পদে আছেন। ইসমাইল হক জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও নড়িয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। আবার মাদারীপুর চেম্বারের সভাপতি পদে আছেন সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের ছোট ভাই হাফিজুর রহমান খান। ২০২১ সাল থেকে টানা দুই মেয়াদে বিনা ভোটে সভাপতি হয়েছেন তিনি।

পণ্যভিত্তিক সংগঠনেও ভোট উধাও

২০১০ সাল থেকে নিট পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি পদ আঁকড়ে আছেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম সেলিম ওসমান। ২০১২ সালের পর থেকে ব্যবসায়িক সংগঠনটির পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচন হচ্ছে না। সর্বশেষ জুলাইয়ে সমঝোতার ভিত্তিতে বিকেএমইএর কমিটি হয়েছে এবং যথারীতি সভাপতি পদে বসেছেন সেলিম ওসমান।

দেশের শীর্ষ রপ্তানি খাত পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর বর্তমান কমিটির মেয়াদ গত এপ্রিলে শেষ হয়। তার আগেই অবশ্য কমিটির মেয়াদ ছয় মাস বাড়িয়ে নেন বর্তমান সভাপতি ফারুক হাসান। পর্ষদের অতিরিক্ত মেয়াদ শেষ হবে অক্টোবরে, তার আগে অর্থাৎ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। আইন অনুযায়ী, নির্বাচনের ৯০ দিন আগে নির্বাচন বোর্ড গঠন এবং ৮০ দিন আগে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও বর্তমান পর্ষদ সেটি করেনি।

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আগামী পর্ষদের নির্বাচন দাবি করেছে বিজিএমইএর নির্বাচনকালীন জোট ফোরাম। আগস্টের প্রথম সপ্তাহে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সংগঠন অনুবিভাগের মহাপরিচালকের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ দেয় তারা। এতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচনপ্রক্রিয়া শুরু না করায় বর্তমান সভাপতির বিরুদ্ধে আইন লঙ্ঘনে অভিযোগ আনার পাশাপাশি আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার উদ্যোগ নিতে অনুরোধ জানান ফোরাম নেতারা।

অবশ্য এই জটিলতার মধ্যেই কমিটির মেয়াদ বাড়াতে সরকারের উচ্চ মহলে তোড়জোড় শুরু করে বর্তমান বিজিএমইএ পর্ষদ। এ জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেয়। এত দিন বাণিজ্য সংগঠনগুলোর কমিটির মেয়াদ শেষ হলে বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে ছয় মাস পর্যন্ত সময় বাড়ানোর সুযোগ ছিল। সেটি বাড়িয়ে এক বছর করা হয়েছে। গত ২৯ আগস্ট বাণিজ্য সংগঠন (সংশোধন) আইন ২০২৩-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। গত বৃহস্পতিবার তা জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে।

আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাবে আগে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটাভুটি হতো। ২০১৪ সাল ভোট ছাড়াই সভাপতি পদে আসেন আলমগীর শামসুল আলামিন। তার পরের তিন মেয়াদেও সমঝোতার মাধ্যমে সভাপতি হয়েছেন তিনি। বর্তমানে সংগঠনটির আগামী মেয়াদের নির্বাচনের প্রক্রিয়া চলছে। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ভোট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ প্লাস্টিক পণ্য প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতিতে (বিপিজিএমইএ) প্রায় এক যুগ ধরে ভোট হচ্ছে না। বর্তমান সভাপতি সামিম আহমেদ টানা তিন মেয়াদে ভোট ছাড়াই সভাপতি হয়েছেন।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান এ নিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে পেশাজীবী সংগঠনের সবগুলোতেই প্রায় একই চিত্র। সংগঠনগুলো বর্তমানে মূল লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত। নেতৃত্ব নির্বাচনে ভোটও নির্বাসিত। ব্যবসায়ী সংগঠনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সুরক্ষা, ব্যবসার টেকসই উন্নয়ন ও ব্যবসার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টিতে কাজ করা। অথচ সংগঠনগুলোতে বর্তমানে অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলছে।

ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, ব্যবসায়ী সংগঠনের ক্ষমতায় পছন্দের বা নিজেদের লোক বসানোর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডা হাসিল করা। এর মাধ্যমে ক্ষমতার সঙ্গে ব্যবসার গভীর যোগসূত্র তৈরি হয়েছে। তাতে ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃত্বে থাকা লোকজন অনৈতিক সুযোগ-সুবিধা আদায় করে নিচ্ছেন। এই সিন্ডিকেটের বাইরে থাকা ব্যবসায়ীদের মধ্যে যাঁরা সুস্থভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে চান, তাঁরা কোণঠাসা হয়ে পড়েন। তাঁদের সমস্যা সমাধানে সংগঠনগুলো সহায়ক কোনো ভূমিকাও পালন করে না। 

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন প্রথম আলোর সংশ্লিষ্ট জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধিরা]