বাংলাদেশের জন্য বাজেট সহায়তা হিসাবে ৫০ কোটি ডলারের একটি ঋণ প্রস্তাব ২৭ এপ্রিল বিশ্বব্যাংকের বোর্ড সভায় অনুমোদনের জন্য উঠছে। ফলে আগামী সপ্তাহে এ–সংক্রান্ত সুখবর পেতে পারে বাংলাদেশ।
বাজেট সহায়তার এই অর্থ আসতে পারে বিশ্বব্যাংকের গ্রিন অ্যান্ড ক্লাইমেট রেসিলিয়েন্ট ডেভেলপমেন্ট কর্মসূচির আওতায়। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী জুন মাসের মধ্যে বাজেট সহায়তার অর্থ বাংলাদেশ হাতে পাবে। এ ক্ষেত্রে এক কিস্তিতেই পুরো অর্থ আসবে। অর্থ মন্ত্রণালয় ও অন্যান্য দায়িত্বশীল সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, ২৭ এপ্রিল বিশ্বব্যাংকের বোর্ড সভায় অনুমোদন হলে বাজেট সাপোর্ট নিয়ে সরকারের সঙ্গে ঋণচুক্তি করবে বিশ্বব্যাংক। আগামী ১ মে বিশ্বব্যাংকের ওয়াশিংটন সদর দপ্তরে এক অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই দিন বাজেট সহায়তার ঋণচুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে।
প্রতিটি দাতা সংস্থা ও দেশের পক্ষ থেকে বাজেট সহায়তা দেওয়ার সময় কিছু শর্ত দেওয়া হয়। সেসব শর্ত পালন করলেই কেবল বাজেট সহায়তার অর্থ ছাড় করে এসব ঋণদাতা। বিশ্বব্যাংকও এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নয়। তবে এবারের শর্তগুলো তুলনামূলক সহজ বলে জানা গেছে।
শর্তগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো সবুজ প্রবৃদ্ধির জন্য একটি কৌশল প্রণয়ন করা। ইতিমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় এ নিয়ে কাজ শুরু করেছে। আরেকটি শর্ত হলো সবুজ প্রবৃদ্ধি হচ্ছে কি না, তা দেখার জন্য একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন। এ ছাড়া কিছু নিয়ন্ত্রণমূলক সংস্কার করার শর্তও আছে।
এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর প্রথম আলোকে বলেন, ‘অর্থনীতির বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় আমাদের বাজেট সহায়তা দরকার। আবার সবুজ প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করাও দরকার। তবে এবার বিশ্বব্যাংক যেসব শর্ত দিয়েছে, তা তুলনামূলক সহজ। চাইলে যেকোনো সময় শর্ত পূরণ করা সম্ভব।’
বাংলাদেশ এরই মধ্যে ডেভেলপমেন্ট পলিসি ক্রেডিটের (ডিপিসি) আওতায় ৫০ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা পাচ্ছে। প্রথম কিস্তির ২৫ কোটি ডলার ছাড় হয়ে গেছে। প্রথম কিস্তির অর্থ পেতে রপ্তানি খাতে ভর্তুকি কমানোর শর্ত ছিল। গত জুন মাসে বাজেট ঘোষণার সময় পোশাকসহ রপ্তানি খাতে কমিয়ে রাখা করহার বাড়িয়ে ১ শতাংশ করা হয়েছে।
তবে গত ফেব্রুয়ারি মাসে কিস্তির অর্থ ছাড় হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ ছাড়ের প্রধান শর্ত হলো নতুন ব্যাংক কোম্পানি আইন চালু করা। এটি এখন প্রক্রিয়াধীন। যখনই ব্যাংক আইন হবে, তখনই এই কিস্তির অর্থ ছাড় করবে বিশ্বব্যাংক। শর্ত পূরণ হলে সঙ্গে সঙ্গে অর্থ ছাড়, এটাই বিশ্বব্যাংকের বাজেট সহায়তার অর্থ ছাড়ের নিয়ম।
অবশ্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪৭০ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা পাওয়ার অন্যতম শর্ত হলো নতুন ব্যাংক কোম্পানি আইন চালু করা। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে এটি করতে হবে। তাই বিশ্বব্যাংকের শর্তও একই হওয়ায় এখন অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
বিশ্বব্যাংকের আইডিএ থেকে নমনীয় ও কম সুদে ঋণ পায় গরিব ও নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশগুলো। প্রতি তিন বছর পরপর এসব দেশের জন্য তিন বছর মেয়াদি ঋণ কর্মসূচি ঘোষণা করে আইডিএ। সর্বশেষ আইডিএ-২০–এর মেয়াদ ২০২২ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের জুন মাস পর্যন্ত। এর আওতায় ৬১০ কোটি ডলার মিলবে আইডিএ থেকে।
এবারের আইডিএ-২০ থেকে চার শ্রেণিতে ঋণ পাওয়া যাবে। একদম কম সুদে ও সহজ শর্তে ‘কোর আইডিএ’ থেকে সবচেয়ে কম সুদে ঋণ মিলবে। এর পরিমাণ হতে পারে ২৫০ কোটি ডলার। অর্থনীতিতে গতি আনবে এমন রূপান্তরমূলক বড় প্রকল্পে লন্ডন ইন্টার ব্যাংক লেনদেনের সুদহার বা লাইবর রেটে ঋণ পাবে। সেখানে মিলতে পারে আরও ২০০ কোটি ডলার।
এ ছাড়া রিজওনাল উইন্ডো (আরডব্লিউ) থেকে আরও প্রায় ১০০ কোটি ডলার মিলবে। আইডিএ-২০এ এবার নতুন আরেকটি শ্রেণি স্কেলআপ উইন্ডো-শর্টার টার্ম ম্যাচিউরিটি লোন (এসইউডব্লিউ-এসএমএল) থেকে বিনা সুদের ১২ বছর মেয়াদি ঋণ মিলবে। এতে বাংলাদেশের বরাদ্দ থাকতে পারে ৬০ কোটি ডলার।