ডলারের তেজ কাঁচা মরিচের ঝাঁজে

ভারতে কাঁচা মরিচের দাম বেশি। আবার আনুষঙ্গিক খরচও বাড়তি। তাতে স্বাভাবিকভাবেই আমদানি খরচ বেড়েছে।

কাঁচা মরিচ

দেশে জুলাই থেকে অক্টোবর—এই চার মাসে কাঁচা মরিচের উৎপাদন কমে আসে। মূলত আবহাওয়ার কারণে এ সময় কাঁচা মরিচের ফলন ভালো হয় না। তাতে নভেম্বর মাসে নতুন কাঁচা মরিচ ওঠার আগপর্যন্ত আমদানির ওপর নির্ভর করতে হয়। এবার গত তিন বছরের তুলনায় আমদানি করা কাঁচা মরিচের দাম বেশ বাড়তি দেখা যাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারতে কাঁচা মরিচের দাম বেশি। এ ছাড়া ডলারের বিনিময় হারের কারণেও দাম বেড়ে যাচ্ছে। আমদানিকারকদের দাবি, খুচরা বাজারে দাম মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধির জন্য স্থানীয় ব্যবসায়ীরা দায়ী।

২০২০ সাল থেকে দামের তথ্য যাচাই করে দেখা গেছে, জুলাই-আগস্ট মাসে কাঁচা মরিচের দাম গড়ে প্রতি কেজি ১৫০ থেকে ২৫০ টাকার মধ্যে ছিল। এর মধ্যে দেশের কোথাও কোথাও প্রতি কেজি ৩০০ বা ৪০০ টাকা দাম ওঠার রেকর্ড হলেও সামগ্রিকভাবে এত মূল্যবৃদ্ধি পায় না। এবার প্রতি কেজি সর্বোচ্চ দাম ওঠে ৭০০ টাকা পর্যন্ত।

কাঁচা মরিচের মূল্যবৃদ্ধির যৌক্তিক কিছু কারণ আছে। যেমন বৃষ্টি, ঈদের সময় পরিবহন সমস্যা, ছুটির জন্য স্থলবন্দর বন্ধ থাকা ইত্যাদি। কিন্তু তারপরও কাঁচা মরিচের মূল্য যে হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, তার কোনো যৌক্তিকতা নেই।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান

আমদানিকারকেরা বলছেন, এবার ভারতেই কাঁচা মরিচের দাম বেশি। দেশের আনতে গিয়ে এর সঙ্গে যোগ হচ্ছে পরিবহন, শ্রমিক ও শুল্ক খরচ, যা আগের চেয়ে বেড়েছে। গত বছরের তুলনায় ২০ শতাংশের ওপরে বেড়েছে ডলারের দাম। আমদানিতে ডলারের দাম এখন ১০৯ টাকা। তবে এর থেকেও বেশি দামে ডলার কিনতে হচ্ছে।

দেশের বাজারে কাঁচা মরিচের দাম এবার প্রতি কেজি ৩০০ টাকা ছাড়িয়ে গেলে আমদানির সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। তখন ঈদের ছুটির কারণে স্থলবন্দর বন্ধ ছিল। ফলে এ সুযোগে দাম চড়ে যায়। সরকারের বিভিন্ন সংস্থা বাজারে অভিযান চালানো শুরু করে। সে সময় আমদানিকারকেরা কয়েক দিন আবার আমদানি বন্ধ রাখে। পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলেও আমদানি ব্যাহত হয়েছে। সব মিলিয়ে বাজারে কাঁচা মরিচের দাম এখনো নিয়ন্ত্রণে আসছে না।

আমদানিকারক মো. কামরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, এখন নিয়মিত কাঁচা মরিচ আমদানি করা হচ্ছে। তবে এবার ভারতে কাঁচা মরিচের দাম বেশি। আবার আনুষঙ্গিক খরচও বাড়তি। তাতে স্বাভাবিকভাবেই দাম বেশি পড়ছে।

আমদানিকারকদের ভাষ্য, গতকাল সোমবার ভারত থেকে এক কেজি কাঁচা মরিচ আমদানিতে খরচ পড়েছে ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকা। বর্ডার পেরিয়ে বিক্রি হয়েছে ১৭০ থেকে ১৭৫ টাকায়। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে গতকাল এক কেজি কাঁচা মরিচের পাইকারি দাম পড়েছে ২৪০ থেকে ২৮০ টাকা। আমদানি করা এই কাঁচা মরিচ খুচরায় প্রতি কেজির দাম পড়ছে ৪০০ টাকা। গত বছর এ সময়ে বাজারে কাঁচা মরিচের দাম ছিল ২০০ টাকার আশপাশে।

সরকারি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান রোববার তাঁর দপ্তরে এক সভায় বলেন, কাঁচা মরিচের মূল্যবৃদ্ধির যৌক্তিক কিছু কারণ আছে। যেমন বৃষ্টি, ঈদের সময় পরিবহন সমস্যা, ছুটির জন্য স্থলবন্দর বন্ধ থাকা ইত্যাদি। কিন্তু তারপরও কাঁচা মরিচের মূল্য যে হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, তার কোনো যৌক্তিকতা নেই।

ভারত থেকে এক কেজি কাঁচা মরিচ আমদানিতে খরচ পড়েছে ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকা। বর্ডার পেরিয়ে বিক্রি হয়েছে ১৭০ থেকে ১৭৫ টাকায়। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে গতকাল এক কেজি কাঁচা মরিচের পাইকারি দাম পড়েছে ২৪০ থেকে ২৮০ টাকা। আমদানি করা এই কাঁচা মরিচ খুচরায় প্রতি কেজির দাম পড়ছে ৪০০ টাকা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ দিনে (১ জুলাই থেকে ৯ জুলাই) দেশে আমদানি হয়েছে ৮৪৩ টন কাঁচা মরিচ। যেখানে গত অর্থবছরে (২০২২-২৩) পুরো সময়ে কাঁচা মরিচ আমদানি হয়েছিল ২ হাজার ২১ টন। এর আগের অর্থবছরে (২০২১-২২) আমদানি হয়েছিল ৭ হাজার ৪৬৭ টন কাঁচা মরিচ। গত অর্থবছরে আমদানি অনুমতি দেওয়া হয়েছিল ৪৫ হাজার ৮৮৬ টন। চলতি অর্থবছরে আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে ৫২ হাজার ৬৮০ টন। চলতি বছর আমদানি গত বছরের তুলনায় বাড়বে বলে মনে করেছেন সংশ্লিষ্টরা।