সুগন্ধি চাল রপ্তানির দুয়ার খুলল

অনুমতি দেওয়ার পর রপ্তানি হয় ৬ হাজার ৭৮৬ টন সুগন্ধি চাল। বাকি ১৮ হাজার টন রপ্তানির জন্য আগের ২৮টি প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

সুগন্ধী চাল রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে
সুগন্ধী চাল রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে

সুগন্ধি চাল রপ্তানির সুযোগ আবার উন্মুক্ত করেছে সরকার। আগে যারা এ চাল রপ্তানির সুযোগ পেয়েছিল, এ দফায় তাদেরই সুযোগ দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। চাইলে নতুন রপ্তানিকারকেরাও আবেদন করতে পারবেন। যদিও নতুনদের ব্যাপারে সরকার একটু রক্ষণশীল থাকবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

রপ্তানি নীতি আদেশ অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে সব সময়ই চাল রপ্তানি নিষিদ্ধ। তবে সরকারের অনুমতি নিয়ে সুগন্ধি চাল রপ্তানির সুযোগ রয়েছে। ২০২১ সালের জুলাইয়ে ২৮টি প্রতিষ্ঠানকে ২৫ হাজার টন সুগন্ধি চাল রপ্তানির অনুমতি দেয় সরকার। তবে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রপ্তানি বন্ধও করে দেওয়া হয়। এর মধ্যে রপ্তানি হয় ৬ হাজার ৭৫৬ টন সুগন্ধি চাল।

ফেব্রুয়ারিতে রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ার পর গত ৩০ জুলাই আবার সুগন্ধি চাল রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়। আগে অনুমোদন পাওয়া ২৮টি প্রতিষ্ঠানকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ১৮ হাজার ২৪৪ টন সুগন্ধি চাল তারা ২০২৪ সালের ৩০ জুনের মধ্যে রপ্তানি করতে পারবে।

বহির্বিশ্বে বাংলাদেশি সুগন্ধি চালের ভালো বাজার রয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে নতুন করে রপ্তানি অনুমোদন পাওয়ায় আমরা উৎসাহ বোধ করছি।
কামরুজ্জামান কামাল, পরিচালক (বিপণন), প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ

বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনুমতি দেওয়ার পর রপ্তানিও হচ্ছিল। তবে চালের দাম বাড়তে থাকায় খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে আমরা তা বন্ধ রেখেছিলাম। এখন আবার তা উন্মুক্ত করা হয়েছে। নতুন কিছু আবেদনও জমা পড়েছে, যাদের অনুমতি দিতে খাদ্য মন্ত্রণালয় একটু ধীরগতিতে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।’

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, রপ্তানিযোগ্য চাল স্বচ্ছ প্যাকেটে প্যাকেটজাত করতে হবে, শুল্ক কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পণ্যের কায়িক পরীক্ষা করাতে হবে এবং জাহাজীকরণ শেষে রপ্তানিবিষয়ক কাগজপত্র বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে দাখিল করতে হবে।

রপ্তানিকারকেরা বলছেন, বাংলাদেশ দেড় বছর ধরে মার্কিন ডলার–সংকটে রয়েছে। সুগন্ধি চাল রপ্তানির মাধ্যমে যে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হতো, নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় তা–ও বন্ধ হয়ে যায়। তাই রপ্তানিকারকেরা গত জানুয়ারি থেকে বন্ধ দুয়ার খুলে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে আসছেন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের পরামর্শে সুগন্ধি চাল রপ্তানির সুযোগ বহাল রাখা বা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। গত জানুয়ারি থেকে রপ্তানি পুনরায় চালুর জন্য রপ্তানিকারকদের আবেদন আসতে থাকলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের শরণাপন্ন হয়। খাদ্য মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত দিতে সময় নেয় পাঁচ মাস। এই ফাঁকে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনকে (বিটিটিসি) সার্বিক দিক বিবেচনা করে প্রতিবেদন তৈরির দায়িত্ব দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

সুগন্ধি চালের বড় রপ্তানিকারক প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। গ্রুপটির পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘বহির্বিশ্বে বাংলাদেশি সুগন্ধি চালের ভালো বাজার রয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে নতুন করে রপ্তানি অনুমোদন পাওয়ায় আমরা উৎসাহ বোধ করছি।’

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, দেশে বছরে গড়ে সুগন্ধি চাল উৎপাদন হয় ১৮–২০ লাখ টন। আর প্রতিবছর গড়ে রপ্তানি হয় ১০ হাজার টন। বিভিন্ন করপোরেট প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ব্রুনেই, দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিশ্বের ১৩০টির বেশি দেশে সুগন্ধি চাল রপ্তানি হয়।

২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে বাংলাদেশ সুগন্ধি চাল রপ্তানি শুরু করে। প্রথম বছর ৬৬৩ টন সুগন্ধি চাল রপ্তানি হয়। পরের বছরগুলোতে রপ্তানির পরিমাণ বাড়তে বাড়তে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১০ হাজার ৮৭৯ টনে উন্নীত হয়। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৮৬ লাখ, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৮৫ লাখ এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে ৫১ লাখ মার্কিন ডলারের সুগন্ধি চাল রপ্তানি হয়েছে।

দেশে রপ্তানিযোগ্য সুগন্ধি চালের একটি তালিকা রয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে। চালগুলো হচ্ছে কালিজিরা, কালিজিরা টিপিএল-৬২, চিনিগুঁড়া, চিনি আতপ, চিনি কানাই, বাদশাভোগ, কাটারিভোগ, মদনভোগ, রাঁধুনিপাগল, বাঁশফুল, জটাবাঁশফুল, বিন্নাফুল, তুলসীমালা, তুলসী আতপ, তুলসী মণি, মধুমালা, খোরমা, সাককুর খোরমা, নুনিয়া, পশুশাইল, দুলাভোগ ইত্যাদি।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় অনুমতিপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর কেউ আংশিক রপ্তানি করলেও কেউ একদমই পারেনি। যেমন সিটি অটো রাইস অ্যান্ড ডাল মিলস ১ হাজার টন, এইচআইএফএস অ্যাগ্রো ফুড লিমিটেড ১ হাজার টন, মারজান ফুডস লিমিটেড ৩০৮ টন, স্মরণিকা ইন্টারন্যাশনাল ৪০০ টন, অনন্ত বাংলা ইন্ডাস্ট্রিজ ৫০ টন, ডিএইচএস ইন্টারন্যাশনাল ১ হাজার টন, মক্কা কনজ্যুমারস প্রোডাক্ট ১ হাজার টন এবং মা অ্যাগ্রো ২০০ টন সুগন্ধি চাল রপ্তানির অনুমোদন নিয়েও তা করতে পারেনি।