দাম যতই বাড়ুক, জিডিপিতে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির অবদান নগণ্য

কয়েক মাস পরপর গ্যাস, বিদ্যুৎ পানির দাম যতই বাড়ুক, দেশের জিডিপিতে এ খাতের অবদান সবচেয়ে কম। কিছুদিন পরপর গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির জন্য দেশের মানুষকে বাড়তি অর্থ খরচ করতে হলেও দেশের অর্থনীতিতে তার প্রত্যক্ষ অবদান খুব বেশি নয়।

মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপিতে এ খাতের অবদান সবচেয়ে কম। শতাংশের হিসাবে জিডিপিতে এ খাতের অবদান মাত্র ১ দশমিক ১৭ শতাংশ। দেশের জিডিপিতে সবচেয়ে বেশি অবদান উৎপাদন খাতের। দেশের মোট জিডিপিতে এ খাতের অবদান প্রায় ২৩ শতাংশ। অর্থাৎ দেশের মোট জিডিপির প্রায় এক–চতুর্থাংশই উৎপাদন খাতের দখলে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) চলতি ২০২৩–২৪ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের জিডিপির যে পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে, তাতে এ তথ্য পাওয়া গেছে। গত বছরের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর সময়কালের জিডিপিতে চলতি মূল্যে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি সরবরাহ খাতের মূল্য সংযোজন ছিল ১৪ হাজার ৬৪০ কোটি টাকার, শতাংশের হিসাবে যা ১ দশমিক ১৭। আর এ তিন মাসে টাকার অঙ্কে উৎপাদন খাতের মূল্য সংযোজন ছিল ২ লাখ ৮৫ হাজার ৫২১ কোটি টাকার।

জিডিপি হচ্ছে দেশের অভ্যন্তরে একটি নির্দিষ্ট সময়ে নির্ধারিত পণ্য ও সেবার বাজারের সামষ্টিক মূল্য। চলতি মূল্যে জিডিপির হিসাব বলতে বোঝায় নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট খাতটিতে যে পণ্য বা সেবা উৎপাদিত হয়েছে, বাজারমূল্যে তার দাম। বিবিএস বর্তমানে প্রান্তিক ভিত্তিতে জিডিপির হিসাব প্রকাশ করে থাকে। সে হিসাবে দেশের অভ্যন্তরে এ তিন মাসে কোন খাতে কত টাকার পণ্য বা সেবা উৎপাদিত হয়, তার তথ্য পাওয়া যায়। বিবিএস শিল্প, সেবা ও কৃষি খাতের মোট ১১টি উপখাতের হিসাবের ভিত্তিতে ত্রৈমাসিক জিডিপির এ হিসাব করে থাকে। খাতগুলো হলো কৃষি, বন ও মৎস্য; খনি ও খনন শিল্প; উৎপাদন খাত; বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি সরবরাহ; নির্মাণশিল্প; পাইকারি–খুচরা ব্যবসা, মোটরগাড়ি মেরামত; পরিবহন, খাদ্য সরবারহ, তথ্য ও যোগাযোগ সেবা; আর্থিক ও বিমা কার্যক্রম; আবাসন, পেশাদার ও প্রশাসনিক সেবা খাত; লোকপ্রশাসন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাত এবং শিল্প–সংস্কৃতি ও অন্যান্য সেবা।

বিবিএসের শেষ ত্রৈমাসিক জিডিপির হিসাব অনুযায়ী, গত অক্টোবর–ডিসেম্বর সময়ে দেশে টাকার অঙ্কে চলতি মূল্যে প্রায় ১৩ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকার পণ্য ও সেবা উৎপাদিত হয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে অর্থাৎ জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর সময়কালে চলতি মূল্যে টাকার অঙ্কের জিডিপির আকার ছিল ১১ লাখ ৮৭ হাজার ৪৭০ কোটি। সেই হিসাবে তিন মাসের ব্যবধানে টাকার অঙ্কে জিডিপির আকার বেড়েছে ১ লাখ ২২ হাজার ৪২৫ কোটি।

সবচেয়ে কম অবদান যে পাঁচ খাতের
শতাংশের হিসাবে জিডিপিতে সবচেয়ে কম অবদান বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি সরবরাহ খাতের। এরপর দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে খনি ও খনন খাত; আর্থিক ও বিমা কার্যক্রম; শিল্প–সংস্কৃতি ও বিনোদন এবং আবাসন, পেশাদার ও প্রশাসনিক সেবা খাতের। শতাংশের হিসাবে চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের জিডিপিতে খনি ও খনন খাতের অবদান ছিল ১ দশমিক ৭২ শতাংশ, আর্থিক ও বিমা কার্যক্রম খাতের ৩ দশমিক ১৬ শতাংশ, শিল্প–সংস্কৃতি ও বিনোদন খাতের ৪ দশমিক ৮৫ শতাংশ এবং আবাসন, পেশাদার ও প্রশাসনিক সেবা খাতের অবদান ছিল ৯ দশমিক ০২ শতাংশ।

বিবিএসের হিসাব অনুযায়ী, এসব খাতের পণ্য ও সেবার বাজারমূল্য জিডিপির আকারের তুলনায় খুব বেশি নয়। শতাংশের হিসাবে চলতি অর্থবছরের জিডিপিতে উল্লেখিত পাঁচ খাতের সম্মিলিত অবদান ছিল এক–পঞ্চমাংশের কম।

এবার দেখে নেওয়া যাক, গত অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর সময়কালে এসব খাতে টাকার অঙ্কের কী পরিমাণ পণ্য ও সেবা উৎপাদিত হয়েছে। বিবিএসের হিসাবে, এ তিন মাসে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি সরবরাহ খাতের উৎপাদিত পণ্যের বাজারমূল্য ছিল ১৪ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা, খনি ও খনন শিল্পে উৎপাদিত হয়েছে ২১ হাজার ৬৩৮ কোটি টাকার পণ্য, আর্থিক ও বিমা কার্যক্রমের সেবার বাজারমূল্য ছিল ৩৯ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা, শিল্প–সংস্কৃতি ও বিনোদন খাতের সেবার বাজারমূল্য ছিল ৬০ হাজার ৯১১ কোটি টাকা এবং আবাসন, পেশাদার ও প্রশাসনিক খাতের সেবার বাজারমূল্য ছিল ১ লাখ ১৩ হাজার ২৫৮ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে এ পাঁচ খাতের উৎপাদিত পণ্য ও সেবার সম্মিলিত বাজারমূল্য ছিল প্রায় আড়াই লাখ কোটি টাকা।

বেশি অবদান যে পাঁচ খাতের
শতাংশ ও টাকার অঙ্কে জিডিপিতে সর্বোচ্চ অবদান শিল্পের উৎপাদন খাতের। চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের তিন মাসে এ খাতে উৎপাদিত পণ্যের বাজারমূল্য ছিল ২ লাখ ৮৫ হাজার ৫২১ কোটি টাকা। এরপরের অবস্থানে ছিল পাইকারি–খুচরা ব্যবসা, গাড়ি ও মোটরসাইকেল মেরামত খাতের। এ খাতের সেবার বাজারমূল্য ছিল ১ লাখ ৮৩ হাজার ৪২৯ কোটি টাকা, শতাংশের হিসাবে তিন মাসের জিডিপিতে এ খাতের অবদান ১৪ দশমিক ৬০। তৃতীয় অবস্থানে ছিল কৃষি, বন ও মৎস্য খাতের। গত বছরের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর তিন মাসে এ খাতের উৎপাদিত পণ্যের বাজারমূল্য ছিল ১ লাখ ৫৫ হাজার ১১৫ কোটি টাকা। শতাংশের হিসাবে তিন মাসের জিডিপিতে এ খাতের অবদান ১২ দশমিক ৩৫। চতুর্থ অবস্থানে ছিল নির্মাণশিল্প খাত। এ খাতের উৎপাদিত পণ্যের তিন মাসের বাজারমূল্য ছিল ১ লাখ ৫০ হাজার ১৬৫ কোটি টাকা। শতাংশের হিসাবে তিন মাসের জিডিপিতে এ খাতের অবদান প্রায় ১২। শতাংশ ও টাকার অঙ্কে পঞ্চম অবস্থানে ছিল লোকপ্রশাসন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাত। এ খাতের উৎপাদিত সেবার তিন মাসের বাজারমূল্য ছিল ১ লাখ ১৭ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা। শতাংশের হিসাবে তিন মাসের জিডিপিতে এ খাতের অবদান ৯ দশমিক ৩৪।