যুক্তরাষ্ট্র থেকে সংবাদ প্রত্যাহারের হুমকি দিল ফেসবুক

ফেসবুক
 রয়টার্স

সংবাদ প্রচার নিয়ে আবারও ঝামেলায় জড়িয়েছে ফেসবুক। এবার তাদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের। বিষয়টি হচ্ছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নতুন এক আইনের প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে, যেখানে ফেসবুকে শেয়ার হওয়া সংবাদ প্রতিবেদনের বিনিময়ে রাজস্ব নির্ধারণে সংবাদপ্রতিষ্ঠানগুলোকে বেশি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
এর আগে অস্ট্রেলিয়াতেও একই ধরনের এক আইন করা হয়েছিল, যারা জেরে ফেসবুক অস্ট্রেলিয়াতে কিছু সময়ের জন্য সংবাদ শেয়ার বন্ধ রেখেছিল।

ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান মেটার দাবি, বিশ্বের সংবাদপ্রতিষ্ঠানগুলো নানা কারণে ধুঁকছে, বরং তাদের কল্যাণে সংবাদপ্রতিষ্ঠানগুলো পাঠক পাচ্ছে। তারা বলছে, সংবাদ প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের লাভের জন্যই ফেসবুকে কনটেন্ট শেয়ার করছে।

এই আইনের নাম জার্নালিজম কমপিটিশন অ্যান্ড প্রিজারভেশন অ্যাক্ট (জেসিপিএ)। দেশটির অঙ্গরাজ্য মিনেসোটার সিনেটর অ্যামি ক্লোবুচার কংগ্রেসে এই আইন পেশ করেছেন। মেটার শঙ্কার কারণ হলো, ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিক উভয় দলই এই আইনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে।

গত কয়েক বছর ধরেই ফেসবুকের সঙ্গে সংবাদপ্রতিষ্ঠানগুলোর এই লড়াই চলছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিজে কনটেন্ট তৈরি করে না। তবে ব্যবহারকারী ও সংবাদপ্রতিষ্ঠানগুলোর সংবাদ প্রতিবেদন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার হয়। এই শেয়ার হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিজ্ঞাপনের উৎস। এই লড়াই ফর্ম ও কনটেন্টের। অর্থাৎ যে আধেয় তৈরি করছে গুরুত্ব তার বেশি, নাকি যে আধারে (মাধ্যম) তা প্রচারিত হচ্ছে, তার গুরুত্ব বেশি? বাস্তবতা হলো, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এই বাড়বাড়ন্তের যুগে আধেয়র চেয়ে এখন আধারই বেশি ক্ষমতাশালী হয়ে উঠেছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত এই আইনে প্রকাশক ও সম্প্রচারকারীদের যৌথভাবে দর–কষাকষির অধিকতর ক্ষমতা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সংবাদ প্রচারের মাধ্যমে যে রাজস্ব আয় হয়, তার ভাগ নির্ধারণে দর-কষাকষির বেশি সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

মিডিয়া কোম্পানিগুলোর ভাষ্য, নিজের প্ল্যাটফর্মে সংবাদ শেয়ার হওয়ার মধ্য দিয়ে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় করে মেটা। মহামারির সময় দেশে দেশে সংবাদমাধ্যম বিপুল ক্ষতির শিকার হলেও মেটা বড় অঙ্কের মুনাফা করেছে।

তবে মেটার ভাষ্য হচ্ছে, গণমাধ্যমের এই দাবি ঠিক নয়; বরং মেটা পাঠকদের সংবাদমাধ্যমের দিকে ধাবিত করে।

মেটার মুখপাত্র অ্যান্ডি স্টোন বলেন, ‘কংগ্রেস জাতীয় নিরাপত্তার অংশ হিসেবে সাংবাদিকতাসংক্রান্ত এই আইন পাস করলে আমরা ফেসবুকের প্ল্যাটফর্ম থেকে সংবাদ সরিয়ে নিতে বাধ্য হব।’

গত বছর যখন অস্ট্রেলিয়ায় একই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, তখন মেটার মুখপাত্র বলেছিলেন, ‘সংবাদ শেয়ার হওয়া থেকে ফেসবুক খুব বেশি রাজস্ব আয় করে না। আমাদের নিউজফিডে যত কনটেন্ট শেয়ার হয়, তার মাত্র ৪ ভাগ আসে সংবাদ থেকে।’

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত দেশগুলো বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানির রাশ টানার চেষ্টা করছে। তার অংশ হিসেবেই এই আইনের খসড়া প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে। আইনের সমর্থকেরা আবার বলছেন, এই আইন না হলে ফেসবুক কার্যত স্থানীয় সংবাদপত্রে পরিণত হবে।