ভারতের কয়লা খাতের কেলেঙ্কারি নিয়ে নতুন তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস। তাদের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আদানি গ্রুপ রাষ্ট্রীয় একটি বিদ্যুৎ প্রতিষ্ঠানের কাছে খারাপ মানের কয়লা গছিয়ে দিয়েছিল। যদিও এ ক্ষেত্রে বেশি দামের ভালো মানের কয়লা সরবরাহ করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়।
ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস বলেছে, অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট (ওসিসিআরপি) এ–সংক্রান্ত প্রমাণপত্র সংগ্রহ করেছে এবং তারা এসব পরীক্ষা করে দেখেছে। এর ফলে ভারতীয় এই শিল্পগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির যে অভিযোগ রয়েছে, তার একটি পরিবেশগত দিক রয়েছে বলে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে।
এসব প্রমাণপত্র দেখে ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস বলেছে, আদানি গোষ্ঠী সম্ভবত বায়ুমানের ক্ষতিসাধন করে প্রতারণামূলকভাবে বিপুল মুনাফা করেছে। কারণ, খারাপ কয়লা ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করলে বেশি পরিমাণ কয়লা পোড়াতে হয়।
ক্রয় রসিদ পরীক্ষা করে দেখা গেছে, ২০১৪ সালে আদানি ইন্দোনেশিয়া থেকে প্রতি কেজি সাড়ে ৩ হাজার ক্যালরি ক্ষমতার এক জাহাজ কয়লা কিনেছিল। কিন্তু ওই কয়লাই কোম্পানিটি তামিলনাড়ু জেনারেশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির কাছে বিক্রি করেছিল ৬ হাজার ক্যালরির কয়লা হিসেবে। এটা অন্যতম দামি কয়লা। পরিবহন খরচ বাদ দিয়ে আদানি দ্বিগুণের বেশি অর্থ বানিয়েছিল বলে দেখা গেছে।
ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস ২০১৪ সালের আরও ২২টি চালানের কাগজপত্র পরীক্ষা করে দেখেছে। সবগুলো ক্ষেত্রেই এই দুই পক্ষ জড়িত ছিল। সব মিলিয়ে ১৫ লাখ টন কয়লা সরবরাহ করা হয়েছে এবং এসব ক্ষেত্রে কয়লার মান বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে।
আদানি ইন্দোনেশিয়ার যে খনি থেকে কয়লা কেনে, সেটি খারাপ মানের কয়লা সরবরাহ করে বলে পরিচিত। খনিটি দামও রাখে কম। ভারতীয় বিদ্যুৎ কোম্পানিটি ভালো মানের কয়লা কেনার পরিকল্পনা করলেও আদানি তাদের খারাপ মানের কয়লা গছিয়ে দেয়।
২০২২ সালে করা ল্যানসেটের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ঘরের বাইরের বায়ুদূষণের কারণে ভারতে প্রতিবছর ২০ লাখের বেশি মানুষ মারা যায়। অন্য গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব বিদ্যুৎকেন্দ্র কয়লা ব্যবহার করে, তার আশপাশের কয়েক শ মাইলের মধ্যে শিশুমৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।
দিল্লিভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ারের বিশ্লেষক সুনীল দাহিয়া বলেন, ভারতে বিদ্যুৎ খাতের স্বার্থের কারণে জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি গুরুত্ব পায় না।
এর আগে ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস এমন সংবাদ প্রকাশ করেছিল যে ২০২১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে বাজারদরের চেয়ে বেশি দামে কয়লা আমদানি করতে দালালদের ৫০০ কোটি ডলারের বেশি দিয়েছে আদানি গোষ্ঠী। এই খবর প্রকাশিত হওয়ার পর বিরোধী রাজনীতিবিদেরা আদানির বিরুদ্ধে তদন্ত চালানোর দাবি জানান।
আদানির বিরুদ্ধে সর্বশেষ অভিযোগ এমন সময়ে এসেছে, যখন ভারতীয় এই শিল্পগোষ্ঠী নিজেদের নবায়নযোগ্য জ্বালানির বড় খেলোয়াড় হিসেবে পরিচিত করাতে চাইছে। পাকিস্তান সীমান্তের কাছে খাভদা এলাকায় তারা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বায়ু ও সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি করতে কাজ করছে।
ভারতে যেসব কোম্পানি সবচেয়ে বেশি কয়লা আমদানি করে, আদানি তাদের একটি। তারা কয়লা আমদানিতে দুর্নীতির অভিযোগ নাকচ করেছে।
আদানি গোষ্ঠীর মালিক গৌতম আদানির যে ক্ষমতা ও প্রভাব রয়েছে, তা নিয়ে ভারতে প্রায়ই রাজনৈতিক বিতর্ক হয়। চলতি নির্বাচনের সময় তাঁর নাম আর সম্পদের বিষয়টি আবারও আলোচিত হয়েছে। ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের এই প্রতিবেদন ওই বিতর্ককে আরও উসকে দেবে বলে মনে করা হচ্ছে।