তিনটি ছাড়া অধিকাংশ বড় খাতের রপ্তানি কমে যাওয়ায় সামগ্রিক পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধির হার ৫ শতাংশের নিচে।
বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের বড় দুই উৎসের মধ্যে প্রবাসী আয় আসা কমলেও পণ্য রপ্তানি ইতিবাচক ধারায় রয়েছে। গত ডিসেম্বর থেকে টানা চার মাস পণ্য রপ্তানি ৫০০ কোটি ডলারের ওপরে রয়েছে। তার মধ্যে মার্চে রপ্তানি হয়েছে ৫১০ কোটি ডলারের পণ্য। এই রপ্তানি গত বছরের মার্চের তুলনায় ৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ বেশি।
মার্চে প্রবৃদ্ধি হওয়ায় সামগ্রিকভাবে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধির হার কিছুটা বেড়েছে। ৯ মাসে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ। এ সময় রপ্তানি হয়েছে ৪ হাজার ৩৫৫ কোটি ডলারের পণ্য। অবশ্য এই রপ্তানি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ কম।
ইইউর দেশগুলো শ্রম অধিকার ও মানবাধিকার বিষয়ে বেশ কিছু নতুন নিয়মনীতি নিয়ে আসতে যাচ্ছে। ফলে এসব বিষয়ে উদ্যোক্তাসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে সচেতন হতে হবে। না হলে আগামী দিনগুলোয় চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়তে হবে।খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, গবেষণা পরিচালক, সিপিডি
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) রপ্তানি আয়ের এই হালনাগাদ পরিসংখ্যান গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশ করেছে। গত অর্থবছরে ৫ হাজার ৫৫৬ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল। চলতি অর্থবছরে সরকার ৬ হাজার ২০০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে শীর্ষ রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক ইতিবাচক ধারায় আছে। সেই সঙ্গে রপ্তানি বেড়েছে কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য ও প্লাস্টিক পণ্যের। অন্যদিকে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইল, হিমায়িত খাদ্য প্রকৌশল পণ্যসহ অধিকাংশ খাতে রপ্তানি কমেছে। মূলত এ কারণেই সামগ্রিক পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধির হার ৫ শতাংশের নিচে।
চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসে ৩ হাজার ৭২০ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ বেশি।
তৈরি পোশাকশিল্পমালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ জানায়, শুধু মার্চে ৪৩৪ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১১ দশমিক ৭১ শতাংশ বেশি।
জানতে চাইলে নিট পোশাকশিল্পমালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিদেশি ক্রেতাদের কাছ থেকে ক্রয়াদেশের অনুসন্ধান আগের চেয়ে কিছুটা বাড়ছে। বর্তমানে আমার নিজের কারখানার উৎপাদন সক্ষমতার ৫০ শতাংশ ব্যবহৃত হচ্ছে। ক্রয়াদেশ কিছুটা বৃদ্ধি পাওয়ায় ঈদের পর সেটি বেড়ে ৬০ শতাংশে দাঁড়াবে। তবে কিছু কারখানা পূর্ণ সক্ষমতায় উৎপাদন চালাচ্ছে। সব মিলিয়ে শিগগিরই তৈরি পোশাক রপ্তানি ভালোভাবে ঘুরে দাঁড়াবে, এমনটা বলা যাচ্ছে না।’
চামড়া ও চামড়া খাতের রপ্তানি এখনো ইতিবাচক ধারায় ফেরেনি। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ৭৯ কোটি ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ কম। একইভাবে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানিতেও সুখবর নেই। এই খাতে রপ্তানি কমেছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসে পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি হয়েছে ৬৬ কোটি ডলার।
জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রথম আলোকে বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সংকটের সময় পণ্য রপ্তানিতে ৪ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অবশ্যই ইতিবাচক। যদিও আগের বছরগুলোর বিবেচনায় এই প্রবৃদ্ধি কম। রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতে সাম্প্রতিক ওঠানামা আরও কিছুদিন থাকবে। তার কারণ, বাংলাদেশের পণ্যের বড় বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলো বিভিন্ন অনিশ্চয়তায় রয়েছে। ফলে চলতি বছর শেষে রপ্তানিতে প্রত্যাশিত প্রবৃদ্ধি না–ও হতে পারে।
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম আরও বলেন, ‘ইইউর দেশগুলো শ্রম অধিকার ও মানবাধিকার বিষয়ে বেশ কিছু নতুন নিয়মনীতি নিয়ে আসতে যাচ্ছে। ফলে এসব বিষয়ে উদ্যোক্তাসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে সচেতন হতে হবে। না হলে আগামী দিনগুলোয় চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়তে হবে।’