রাজধানীর বেইলি রোডে গ্রিন কোজি কটেজ নামের একটি সাততলা ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৪৬ জনের মৃত্যুতে সেখানকার ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে রয়েছে। ফলে প্রথম রোজায় বেইলি রোডের ঐতিহ্যবাহী ইফতারির বাজার অনেকটা ক্রেতাশূন্যই দেখা গেছে। কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, করোনা মহামারির মধ্যেও তাঁরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যবসা করতে পেরেছিলেন। কিন্তু এখন তা পারছেন না। ওই এলাকায় ইফতারি বাজারে এমন অবস্থা সর্বশেষ কবে দেখা গিয়েছিল, সেটি তাঁদের কেউ মনে করতে পারছেন না।
আজ মঙ্গলবার বেলা দুইটা থেকে চারটা পর্যন্ত সরেজমিনে বেইলি রোড ঘুরে দেখা গেছে, অন্যবারের মতো এবার সেখানে ইফতারি বিক্রির রমরমা আয়োজন নেই। কিছু দোকানপাট খুললেও হাঁকডাক দিয়ে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টাও করছেন না কেউ। কয়েকটি রেস্তোরাঁ সিলগালা করেছে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা। অন্যরা ভয়ে রেস্তোরাঁ খুলছেন না। ফলে অধিকাংশ রেস্তোরাঁ এখনো বন্ধ রয়েছে। যেসব রেস্তোরাঁ খোলা রয়েছে, তাঁরা ভয়ে ভয়ে দোকান পরিচালনা করছেন। কারণ সেখানে এখনো পুলিশি তৎপরতা চলে।
জ্যাগেরি রেস্তোরাঁর সামনে হালিম বিক্রি হচ্ছিল। পুলিশ প্রশাসনের লোকজন এসে হালিমের ডেকচি রেস্তোরাঁর ভেতরে নিতে বলে যান। রেস্তোরাঁটির ব্যবস্থাপক নাজমুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিয়মকানুন মেনেই দোকান খুলেছি। কিন্তু ক্রেতাদের মধ্যে আতঙ্ক কাটেনি। এ জন্য অনেকেই এখনো এদিকে আসছেন না। আর অনেক রেস্তোরাঁ এখনো বন্ধ। তাই জমজমাট অবস্থা নেই। অন্য রেস্তোরাঁগুলো বন্ধ থাকায় কিছু ক্রেতা মিলছে।’ তবে দ্রুত বেইলি রোডের ব্যবসা–বাণিজ্য স্বাভাবিক হওয়ার আশায় আছেন তিনি।
এখনো বেইলি রোড দিয়ে যাওয়ার সময় পুড়ে যাওয়া ভবনটির সামনে থামছেন অনেক পথচারী। সেখানে পুলিশের অবস্থানও দেখা গেছে। ব্যবসায়ীদের অস্বস্তি কাটেনি। খোলা দোকানগুলোর বেশির ভাগই বেকারি পণ্য বিক্রি করে থাকে। শপিং মলগুলোতে পোশাকের দোকান খুলেছেন কেউ কেউ। তবে বেইলি রোডে ফখরুদ্দীন বিরিয়ানি, ক্যাফে জেলাটেরিয়া, নবাবী ভোজ, সেশিয়েট ও বার্গার এক্সপ্রেসের মতো ১৮ থেকে ২০টি মতো রেস্তোরাঁ বন্ধ রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকেরা বেশ বিপাকে পড়েছেন।
সিলগালা হওয়া রেস্তোরাঁ নবাবী ভোজের স্বত্বাধিকারী কামরুল হাসান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্যবসায়ের জন্য প্রয়োজনীয় সনদ থাকার পরেও দ্বারে দ্বারে ঘুরে রেস্তোরাঁ খুলতে পারছি না। ইফতারির বাজারের বেচাকেনা দিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন–ভাতার পাশাপাশি ঈদের সময় বোনাসও দেওয়া হয়। ব্যবসা না করতে পারায় ১৩০ জন লোক এখন বেকার হয়ে পড়েছে।’ তিনি যেকোনো শর্তে বন্ধ থাকা রেস্তোরাঁ খুলে দেওয়ার জন্য সরকারকে অনুরোধ জানান।
রোজার প্রথম দিনে বেইলি রোডে ইফতারির বাজারে অন্যবারের মতো ব্যাপক হারে মানুষের সমাগম দেখা যায়নি। হাতে গোনা যে কয়জন ক্রেতা এসেছেন, তাঁদের একজন রিফাত হাসান। রাজধানীর মালিবাগ এলাকার এই বাসিন্দা প্রথম আলোকে বলেন, ‘রোজায় বেইলি রোডের ইফতারি কেনা আমাদের পরিবারের রীতি। বাড়ির মুরব্বি থেকে শুরু করে ছোট বাচ্চারা সবাই এখানকার ইফতারি পছন্দ করেন। জায়গাটি বাসার কাছে হওয়ায় সপ্তাহে কয়েক দিন এখান থেকেই ইফতারি কিনি। আজ (গতকাল) বাজার সেভাবে জমেনি। দোকানপাট খুললে পরে আবার আসব।’
বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনের অকুপেন্সি সার্টিফিকেট ছিল না। এই ভবনে গত ২৯ ফেব্রুয়ারি আগুনে পুড়ে ৪৬ জনের মৃত্যুর পর রমনা থানায় পুলিশ যে মামলা করেছে তাতে বলা হয়েছে, রাজউকের দোকান-পরিদর্শকদের ‘ম্যানেজ’ করে সেখানে রেস্তোরাঁ ব্যবসা চলছিল। এর মধ্যে আটটি রেস্তোরাঁ, চা-কফিসহ বিভিন্ন ধরনের দোকান।
বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান প্রথম আলোকে বলেন, বেইলি রোডসহ পুরো ঢাকায় রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীদের হয়রানি বন্ধ করে দ্রুত ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে। এমনও আছে কোনো কারণ ছাড়াই দোকান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ভোক্তাদের পাশাপাশি ব্যবসায়ীরাও আতঙ্কে আছেন। শিল্প বাঁচিয়ে রাখতে সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান তিনি।