বিদ্যুতের মূল্য হিসাবে আদানি পাওয়ার বাংলাদেশের কাছে যে অর্থ পায়, তা দ্রুত পরিশোধ করতে ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার। বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে ভারতীয় কোম্পানিটি ৭ নভেম্বরের যে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে, তার আগেই বাংলাদেশ এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে দুজন সরকারি কর্মকর্তা জানিয়েছেন। বিদ্যুৎ বিক্রি বাবদ বাংলাদেশের কাছে আদানির ৮০ কোটি ডলার পাওনা হয়েছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, আদানি বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রপ্তানি অর্ধেক কমিয়ে দিয়েছে। ঝাড়খান্ড রাজ্যের গড্ডায় অবস্থিত ১৬০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার কেন্দ্র থেকে আদানি পাওয়ার বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রপ্তানি করে। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বকেয়া অর্থ পরিশোধের জন্য ৭ নভেম্বরের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে দিয়েছে আদানি।
বিষয়টি সম্পর্কে জানে এমন তিনটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় কয়লা আমদানি করতে আদানি পাওয়ার সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, আদানি আগে ১ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশে রপ্তানি করলেও চলতি মাসে তা ৭০০–৮০০ মেগাওয়াটে নামিয়ে এনেছে।
এই কর্মকর্তারা তাঁদের নাম প্রকাশ করতে চাননি। কারণ, তাঁরা বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে কথা বলার জন্য অনুমতিপ্রাপ্ত না। অন্যদিকে বকেয়া পরিশোধের সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চাইলেও আদানি পাওয়ার রয়টার্সের অনুরোধে সাড়া দেয়নি। এই কোম্পানির মালিক ভারতীয় শতকোটিপতি গৌতম আদানি।
এদিকে ভারতীয় গণমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া গতকাল জানিয়েছে, আদানির বাংলাদেশে বিদ্যুতের সরবরাহ কমিয়ে দেওয়ার পর বকেয়া পরিশোধের বিষয়টি নিষ্পত্তি করার জন্য চলতি মাসের ৭ তারিখ পর্যন্ত সময় দিয়েছে। এ সময়সীমার মধ্যে বিষয়টি নিষ্পত্তি না হলে বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের কাছে আদানির পাওনা দাঁড়িয়েছে ৮৫ কোটি ডলার বা ৭ হাজার ২০০ কোটি রুপি। এই পাওনা কবে পরিশোধ করা হবে, সে ব্যাপারে একটি পরিষ্কার ধারণা চায় আদানি গোষ্ঠী।
বিদেশি দায় পরিশোধ নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে সমস্যায় রয়েছে বাংলাদেশ। ২০২২ সালে রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা করার পর জ্বালানি ও বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়। গত আগস্টে যে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেন, তা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফওজুল কবির খান রয়টার্সকে বলেন, ‘গত মাসে আমরা ৯৬ মিলিয়ন (৯ কোটি ৬০ লাখ) ডলার পরিশোধ করেছি। চলতি মাসে আমরা অতিরিক্ত ১৭০ মিলিয়ন (১৭ কোটি) ডলারের একটি ঋণপত্র খুলেছি।’
একটি সূত্রের উল্লেখ করে টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে বকেয়া অর্থের বিপরীতে একটি ঋণপত্র দিতে চেয়েছিল, তবে এ পদক্ষেপ বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির শর্তের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না। অন্যতম কারণ হিসেবে ডলারের সংকটের কথা বলা হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
রয়টার্স জানতে পেরেছে যে গত মাসে বাংলাদেশের কর্মকর্তারা আদানি পাওয়ারের সঙ্গে করা চুক্তিটি খতিয়ে দেখেছে। ভারতের অন্যান্য বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তুলনায় আদানি উৎপাদিত বিদ্যুতের জন্য বাংলাদেশকে ২৭ শতাংশ অতিরিক্তি দাম দিতে হচ্ছে।
গত সপ্তাহে আয়সংক্রান্ত একটি বৈঠকে আদানি পাওয়ারের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা দিলীপ কুমার ঝা বলেছেন, বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করার ক্ষেত্রে কোনো ইস্যু নেই। তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করছি, বকেয়া নিয়ে পরিস্থিতির আর কোনো অবনতি হবে না।’
ঝাড়খন্ডের কেন্দ্র থেকে যে বিদ্যুৎ বাংলাদেশে সরবরাহ করা হয়, তার প্রতি ইউনিটের দাম ১০–১২ টাকা (৭–৮ দশমিক ৫০ রুপি)। বিদ্যুতের মূল্য মূলত নির্ভর করে ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ায় কয়লার দামের ওপর।