মাসব্যাপী ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ২০তম দিবসে গতকাল ৬০ হাজারের বেশি টিকিট বিক্রি হয়েছে, যা এবারের সর্বোচ্চ।
বরাবরের মতো ছুটির দিনে গতকাল শুক্রবারও ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় (ডিআইটিএফ) ক্রেতা-দর্শনার্থীর উপচে পড়া ভিড় হয়েছে। এদিন মেলায় সর্বোচ্চসংখ্যক ক্রেতা-দর্শনার্থী এসেছেন। বিক্রেতারাও সেই চাপ সামলেছেন হাসিমুখে।
নারায়ণগঞ্জের পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্রে (বিবিসিএফিইসি) অনুষ্ঠানরত মাসব্যাপী বাণিজ্য মেলার ২০তম দিবসে গতকাল সকাল থেকেই ক্রেতা-দর্শনার্থীর সমাগম শুরু হয়, যা বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। তাতে বিক্রেতাদেরও ব্যস্ততা বাড়ে। বিকেলে তো মেলা প্রাঙ্গণ ছাড়িয়ে আশপাশের এলাকাও জনারণ্যে পরিণত হয়। বিশেষ করে মেলায় নারী ও শিশুদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। কেনাকাটার পাশাপাশি অনেককেই মেলা প্রাঙ্গণে ছবি ও সেলফি তুলতে দেখা যায়।
গতকাল দিনভর প্রায় সব স্টলেই ক্রেতাদের কমবেশি ভিড় লেগেই ছিল। গৃহস্থালিতে ব্যবহার্য জিনিসের পাশাপাশি প্রসাধনী, গয়না, জামা, জুতা ও শিশুদের খেলনার স্টলগুলোয় ভিড় বেশি ছিল। এ ছাড়া ভিড় ছিল ইলেকট্রনিক ও খাবারের স্টলে। বিক্রেতারা হাসিমুখে ক্রেতাদের উপচে পড়া চাপ সামলেছেন।
রাজধানীর গাবতলী থেকে আসা নারী উদ্যোক্তা সালমা হকের সঙ্গে মেলা প্রাঙ্গণে প্রথম আলোর কথা হয়। তিনি জানান, প্রতিবছর পরিবার নিয়ে মেলায় আসেন। কেনাকাটার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের পণ্য ও ব্যবসা সম্পর্কে ধারণা নেন। এবার কারুপণ্যের স্টল ঘুরে ঘর সাজানোর জন্য বেতের তৈরি পণ্য কিনেছেন।
মেলার তৃতীয় শুক্রবারে এসে ক্রেতা বেড়েছে। তবে তা অন্যান্য বছরের তুলনায় কম। এ জন্য ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়বেন। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আমরা মেলার সময় অন্তত পাঁচ দিন বাড়ানোর দাবি জানিয়েছি।মাহবুব আলম, সাধারণ সম্পাদক মেলায় অংশগ্রহণকারী ব্যবসায়ী সমিতি
জিনিয়া লেদার হাউসে কথা হয় দুই বন্ধু সিনথিয়া ও হাফসান মাহবুবের সঙ্গে। জানালেন, চামড়ার ব্যাগ ও জুতা কিনতে তাঁরা মেলায় এসেছেন। প্রথমে পুরো মেলা ঘুরে দেখবেন, পরে কেনাকাটা করবেন। জিনিয়া লেদারের স্বত্বাধিকারী মাইনুল ইসলাম জানালেন, এবার মেলা শুরুর পর গতকালই সবচেয়ে বেশি ক্রেতা এসেছেন। মেলার বাকি দিনগুলো নিয়েও তিনি খুব আশাবাদী। বিক্রি কেমন হয়েছে, জানতে চাইলে একগাল হেসে জবাব দিলেন, বেশ ভালো।
ভারতের কাশ্মীর থেকে শাল নিয়ে মেলায় আসা বিক্রেতা বেলাল কুমার মনে করেন, মাসের শুরুতে লোকজনের হাতে টাকাপয়সা রয়েছে। তাই তাঁদের বিক্রিও বাড়ছে। বেলাল জানান, মেলার শেষ সময়ে এসে পণ্যে নানা ধরনের ছাড় দিয়ে তাঁরা ক্রেতা ধরার চেষ্টা করছেন। ছাড় দিয়ে ক্রেতা টানার চেষ্টা দেখা গেছে, অন্য স্টলগুলোতেও।
মেলার টিকিট ইজারাদার আবদুল্লাহ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী রূপগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছালাউদ্দিন ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, মেলার প্রথম শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) ৪৪ হাজার, দ্বিতীয় শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) ৫২ হাজার টিকিট বিক্রি হয়। আজ (গতকাল) সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত ৮৩ হাজারের মতো টিকিট বিক্রি হয়েছে, যা এবারের মেলায় সর্বোচ্চ। তবে সব মিলিয়ে মেলায় প্রবেশ করেছেন লক্ষাধিক মানুষ। তিনি বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার মেলার প্রথম ১৯ দিন কম ক্রেতা এসেছেন। গতবার মেলার দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে ৩১ হাজার টিকিট বিক্রি হয়েছিল। এবার দ্বিতীয় সপ্তাহে গড়ে ২৬ হাজার টিকিট বিক্রি হয়েছে। তবে শেষ ১০ দিন মেলায় আশানুরূপ লোকসমাগম হবে বলে তিনি আশাবাদী।
সাধারণত বছরের প্রথম দিন থেকে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা শুরু হয়। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে এবার প্রায় তিন সপ্তাহ পিছিয়ে ২১ জানুয়ারি মেলা শুরু হয়। নানা কারণে এবারের মেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থী কম এসেছেন বলে দাবি অংশগ্রহণকারীদের। এবার দেশ-বিদেশের ৩৫১টি স্টল তাদের পণ্য প্রদর্শন ও বিক্রি করছে।
এদিকে মেলায় অংশগ্রহণকারী ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলম বলেন, ‘মেলার তৃতীয় শুক্রবারে এসে ক্রেতা বেড়েছে। তবে তা অন্যান্য বছরের তুলনায় কম। এ জন্য ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়বেন। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আমরা মেলার সময় অন্তত পাঁচ দিন বাড়ানোর দাবি জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, মাসের শেষে মেলা শুরু হয়েছে। তখন লোকজনের হাতে টাকা ছিল না। ফেব্রুয়ারি তো বই মেলার মাস। তার ওপর টঙ্গীতে ইজতেমা হয়েছে এবং সোনারগাঁয়ে লোকজ মেলা চলছে। এসব কারণে লোকজন বাণিজ্য মেলায় আসার তেমন সুযোগ পাচ্ছেন না। আয়োজকদের অব্যবস্থাপনা, বৈচিত্র্যময় পণ্যের অভাব ও যানজটের কারণে দর্শনার্থীরা দ্বিতীয়বার মেলায় আসছেন না বলেও তিনি মনে করেন।
জেলা পুলিশের হিসাবে, শুক্রবার বাণিজ্য মেলা এলাকায় প্রায় দেড় লাখ মানুষের সমাগম হয়েছে। যানজটে বসে থেকে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে মেলায় আসা লোকজনকে। গতকাল সকাল থেকেই কাঞ্চন সেতুর পূর্ব পাশ থেকে মেলা প্রাঙ্গণ পর্যন্ত এশিয়ান হাইওয়ে সড়কে (ঢাকা বাইপাস) তীব্র যানজট ছিল। দুপুরে কাঞ্চন টোল প্লাজা থেকে শুরু হওয়া যানজট শেখ হাসিনা সরণি পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। পরে টোল আদায় বন্ধ করে দিলে যানজট কিছুটা কমে।
এ ছাড়া প্রতিদিনের মতো রূপগঞ্জের ভুলতা হয়ে মেলায় যাতায়াত করা লোকজনকেও যানজটের ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। এ সময় যানজট ও ক্রেতাসমাগমের সুযোগ নেন স্থানীয় পরিবহনচালক ও শ্রমিকেরা। শুক্রবার মেলা শেষে অন্যান্য সময়ের তুলনায় চার-পাঁচ গুণ বেশি ভাড়ায় বাড়িতে ফিরতে হয়েছে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের।