বাংলাদেশ থেকে রেকর্ডসংখ্যক শিক্ষার্থী ২০২২–২৩ শিক্ষাবর্ষে পড়াশোনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন। ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস জানিয়েছে, এ সময় ১৩ হাজার ৫৬৩ জন শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন, যে সংখ্যা আগের শিক্ষাবর্ষের তুলনায় ২৮ শতাংশ বেশি। সার্বিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশি শিক্ষার্থী যাওয়ার দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩তম।
২০২৩ সালের ওপেন ডোরস রিপোর্টের উদ্ধৃতি দিয়ে মার্কিন দূতাবাস বলছে, ২০২২–২৩ শিক্ষাবর্ষে যেসব দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী গেছেন, বাংলাদেশ তার মধ্যে অন্যতম। এ বছর সব মিলিয়ে ১০ লাখের বেশি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি বিদেশি শিক্ষার্থী গেছেন চীন ও ভারত থেকে। মোট শিক্ষার্থীর ৫৩ শতাংশই গেছেন এই দুই দেশ থেকে। এর মধ্যে চীন থেকে গেছেন ২ লাখ ৮৯ হাজার ৫২৬ জন, আর ভারত থেকে ২ লাখ ৬৮ হাজার ৯২৩ জন। চীন থেকে যাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২০২২–২৩ সালে সামান্য কমেছে, তবে এ সময় ভারতের ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৫ শতাংশ। বেশ কয়েক বছর ধরে ভারত থেকে বেশি সংখ্যায় শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন।
চলতি শিক্ষাবর্ষে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি ঘটেছে স্নাতক বা সমপর্যায়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যায়, ৫০ শতাংশের বেশি। আড়াই হাজার শিক্ষার্থী এই পর্যায়ের শিক্ষা নিতে যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন। উচ্চশিক্ষা পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থী। সারা পৃথিবী থেকে যত দেশের গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২০২২–২৩ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হয়েছেন, সেই তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম।
মার্কিন দূতাবাস জানিয়েছে, গত এক দশকে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ব্যাপক হারে বেড়েছে। ২০১১–১২ শিক্ষাবর্ষে ৩ হাজার ৩১৪ জন শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন। ফলে ২০২২–২৩ সালে শিক্ষার্থীর সংখ্যায় প্রবৃদ্ধি ঘটেছে ৩০০ শতাংশের বেশি।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্যুরো অব এডুকেশনাল অ্যান্ড কালচারাল অ্যাফেয়ার্স এবং ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশন প্রতিবছর যৌথভাবে ওপেন ডোরস রিপোর্ট প্রকাশ করে থাকে। এই প্রতিবেদনে প্রতিবছর কতসংখ্যক আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হন, তা উল্লেখ করা হয়।
কোভিড মহামারির সময় যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশি ছাত্রের সংখ্যা কমে গেলেও ২০২২–২৩ শিক্ষাবর্ষে এই সংখ্যা প্রায় আগের পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। গত চার দশকের মধ্যে এবারই শিক্ষার্থী যাওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
বেশির ভাগ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিসংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন। প্রায় আড়াই লাখ শিক্ষার্থী গণিত ও কম্পিউটার বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। এরা মোট শিক্ষার্থীর ২৩ শতাংশ। তাদের পরই রয়েছেন প্রকৌশল বিষয়ে পড়া শিক্ষার্থীরা। তাঁদের সংখ্যা ছিল ২ লাখের কিছু বেশি বা মোট শিক্ষার্থীর ১৯ শতাংশ। এর পরের পছন্দের বিষয় ছিল ব্যবসা ও ব্যবস্থাপনা (১৫ শতাংশ), সামাজিক বিজ্ঞান (৮ শতাংশ), ভৌত ও জীববিজ্ঞান (৮ শতাংশ) এবং চারু ও ফলিত কলা (৫ শতাংশ)।