দেশের অর্থনীতিকে ভবিষ্যতে স্মার্ট অর্থনীতিতে রূপান্তর করতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) প্রতিষ্ঠানের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানো প্রয়োজন। এই খাতে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়লে গ্রাহকের ভোগান্তি ও ব্যয় কমবে, পাশাপাশি সেবার মান বৃদ্ধি পাবে। তবে এ জন্য সহায়ক নীতিমালা প্রণয়ন ও প্রয়োজনীয় সংস্কার আনা জরুরি।
রাজধানীর মতিঝিলে আজ শনিবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘স্মার্ট এসএমইদের জন্য তথ্যপ্রযুক্তি’ শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) সচিব মো. সামসুল আরেফিন। ঢাকা চেম্বারের সভাপতি সামীর সাত্তারের সভাপতিত্বে সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক মুখ্য সচিব মো. আবুল কালাম আজাদ এবং বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) চেয়ারম্যান মুহ. মাহবুবর রহমান।
আইসিটি বিভাগের সচিব মো. সামসুল আরেফিন বলেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে স্মার্ট সরকারের পাশাপাশি স্মার্ট অর্থনীতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকারি সংস্থাগুলোতে প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি পেলে গ্রাহকের ভোগান্তি ও ব্যয় কমবে। এতে সেবার মানও বৃদ্ধি পাবে। এসএমই উদ্যোক্তারা আমাদের অর্থনীতি ও মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) সবচেয়ে বেশি অবদান রাখছেন। এ জন্য তাঁদের উন্নয়নে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।’
এসএমই উদ্যোক্তাদের তথ্যপ্রযুক্তি সক্ষমতা বাড়ানো গেলে অর্থনীতিতে আমূল পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে বলে মনে করেন সাবেক মুখ্য সচিব মো. আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, ‘এসএমই উদ্যোক্তারা নানা প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে ব্যবসায়িক কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন। ফলে তাঁদের উন্নয়নে সরকারি-বেসরকারিভাবে যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এর মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরির পথে আমরা এগিয়ে যাব।’
ঢাকা চেম্বারের সভাপতি মো. সামীর সাত্তার বলেন, দেশের এসএমই খাতে প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানো, সহায়ক নীতিমালা প্রণয়ন ও প্রয়োজনীয় সংস্কার বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ভবিষ্যতে স্মার্ট অর্থনীতিতে রূপান্তরে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।
সামীর সাত্তার জানান, দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরিতে এসএমইগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। প্রায় ৯০ লাখ এসএমই উদ্যোক্তা কৃষি, পণ্য উৎপাদনসহ বিভিন্ন খাতে ২ কোটি ৪৫ লাখ লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করেছেন। সে জন্য তাঁদের প্রযুক্তিগত উন্নয়নে বিশেষভাবে জোর দিতে হবে।
মূল প্রবন্ধে জিবিএল ফিনটেক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাইফুর রহমান জানান, বাংলাদেশ বৈশ্বিক এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ডেভেলপমেন্ট সূচকে ৮৪তম এবং গ্লোবাল ইনোভেশন সূচকে ১০৫তম অবস্থানে রয়েছে। ফলে এই দুই সূচকে দেশের অবস্থান উন্নয়নের বিকল্প নেই। প্রযুক্তিগত ও আর্থিক সহায়তার সীমাবদ্ধতা এবং দক্ষতার অভাবকে এসএমই খাতের উন্নয়নে অন্যতম প্রতিবন্ধকতা বলে উল্লেখ করেন তিনি।
সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক বি মাইনুল হাসান, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হক, সেবা প্ল্যাটফর্ম লিমিটেডের সহপ্রতিষ্ঠাতা ইলমুল হক প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে বক্তারা এসএমইদের ঋণের সুদের হার কমানো, ঋণ পাওয়ার শর্তাবলি সহজ করা, সরকারি সংস্থাসমূহের মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধি, এসএমইর জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় গঠন ও কর-শুল্ক বিষয়ে সহায়ক নীতিমালা প্রণয়নের ওপর জোর দেন।