গৌতম আদানির কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ওঠা শেয়ার কারসাজির অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত শেষ করেছে ভারতের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড (সেবি)। গত শুক্রবার সেই প্রতিবেদন দেশটির সুপ্রিম কোর্টের কাছে জমা দিয়েছে সংস্থাটি। তদন্ত প্রতিবেদনে মোট ২৪টি লেনদেন হিসাবের মধ্যে ২২টির বিষয়ে চূড়ান্ত ফলাফল উপস্থাপন করা হয়। তবে তদন্তে কী ধরনের তথ্য পাওয়া গেছে, সে বিষয়ে সেবি কিছু জানায়নি।
সেবিকে উদ্ধৃত করে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইকোনমিক টাইস জানিয়েছে, তদন্তের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ২৯ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টে এই বিষয়ে পরবর্তী শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
গত জানুয়ারি মাসে আর্থিক বিষয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিনডেনবার্গের একটি প্রতিবেদন প্রকাশের পর ভারতের সুপ্রিম কোর্ট দেশটির শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো তদন্তের নির্দেশ দেন। হিনডেনবার্গের প্রতিবেদনে আদানির বিরুদ্ধে জালিয়াতি ও কারসাজির অভিযোগ আনা হয়। যদিও আদানি গোষ্ঠী অভিযোগগুলোকে অসত্য বলে নাকচ করেছে।
আদানি গোষ্ঠীর ১৩টি লেনদেনসহ সুবিধাভোগী লেনদেন বা ইনসাইডার ট্রেডিংয়ের নিয়ম লঙ্ঘনের পাঁচটি অভিযোগের বিষয়েও সেবি তদন্ত করেছে।
হিনডেনবার্গ রিপোর্ট প্রকাশের আগে ও পরে শেয়ারবাজারে আর্থিক লেনদেনে কথিত কারসাজি নিয়ে দুটি অভিযোগের তদন্ত করে সেবি। সংস্থাটি আর্থিক প্রতিবেদনে কোনো ধরনের ভুল উপস্থাপনা বা ভুল বিবরণী দেওয়া, প্রবিধান লঙ্ঘনের চেষ্টা ও অবৈধ লেনদেন করে আদানি গোষ্ঠী আইন ভঙ্গ করেছে কি না, তা নিয়েও তদন্ত করেছে।
সেবি ২০০৫ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত আদানি গোষ্ঠীর ৩৩ হাজার নথিপত্র ও ১ হাজার ই–মেইল যাচাই করে এবং ব্যক্তিগত উপস্থিতির জন্য ৯০টি সমন জারি করে। সংস্থাটি আদানি এন্টারপ্রাইজ, আদানি ইনফ্রা, আদানি মাইনিং এবং আদানি এস্টেটসের আর্থিক লেনদেন নিয়ে তদন্ত চালায়।
নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগে আদানি গোষ্ঠীর শেয়ারহোল্ডার ১৩টি বিদেশি সংস্থাকেও তদন্তের আওতায় আনা হয়।
সংস্থাটি বলেছে যে তারা পাঁচটি বিদেশি আদালত থেকে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করেছে। এ ছাড়া বাইরের সংস্থার সহায়তা চেয়ে সেবি ৯০টি চিঠি পাঠিয়েছে, নথি তৈরির জন্য ১০০টি সমন জারি করেছে এবং প্রায় ১২ হাজার পৃষ্ঠার নথি পরীক্ষা করেছে।
২০২১ সালের ২৮ জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ১৫ অক্টোবরের মধ্যে আদানি পাওয়ার, আম্বুজা সিমেন্টস ও আদানি গ্রিন এনার্জির শেয়ারগুলোর অভ্যন্তরীণ লেনদেন হয়েছিল কি না, তা নিয়েও তদন্ত করছে ভারতের সংস্থাটি।
সেবি আদানি গোষ্ঠীর সাতটি কোম্পানির শেয়ার মূল্যের হেরফের সম্পর্কিত তথ্য নিয়ে একটি সামগ্রিক বিশ্লেষণ করেছে। এগুলো হচ্ছে আদানি এন্টারপ্রাইজ, আদানি পোর্টস ও এসইজেড, আদানি গ্রিন এনার্জি, আদানি ট্রান্সমিশন, আদানি পাওয়ার, আদানি টোটাল গ্যাস এবং আদানি উইলমার।
সেবি ২০২২ সালের ১ মার্চ থেকে ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর সময়কালে আদানি গোষ্ঠীর সাতটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের ওপর করা তিনটি বিদেশি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ বিশ্লেষণ করেছে। এ ছাড়া হিনডেনবার্গের প্রতিবেদনে উল্লেখিত বিদেশি সংস্থাগুলোর শেয়ার বাজারের কারসাজি নিয়ে উত্থাপিত অভিযোগগুলোকেও খতিয়ে দেখছে তারা।