চলতি রমজান মাসে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ফলের বাজার বেশ চড়া। আমদানি করা ফলের দাম আগে থেকেই বেড়েছিল। আর উৎপাদন খরচ বেশি পড়ায় দেশীয় ফলের বাজারও কিছুটা বাড়তি। তাতে ইফতারের প্লেটে ফল উঠছে কম। দাম চড়া থাকায় ফলের বেচাকেনাও আশানুরূপ হচ্ছে না।
গতকাল সোমবার রাজধানীর আগারগাঁও, তালতলা, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া ও মিরপুর–১০ নম্বর এলাকা ঘুরে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজারে ফলের সরবরাহে বড় কোনো ঘাটতি নেই। তবে দাম বাড়তি। নিত্যপণ্যের বাজার চড়ে থাকায় মানুষ এমনিতেই চাপে আছেন। তাই তাঁরা ফল কিনছেন কম।
আগারগাঁওয়ের তালতলা বাজারের বিসমিল্লাহ ফল স্টোরের স্বত্বাধিকারী আরিফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত রোজায় প্রথম দিনে বেচাকেনা ছিল লাখ টাকার ওপরে। এবার সেটা নেমে এসেছে ৪০ হাজারে। তা–ও ভালো ছিল। এখন অবস্থা আরও খারাপ। রোববার ১৫ হাজার টাকার ফল বিক্রি করেছি। আজ (সোমবার) বিকেল পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে মাত্র ৫ হাজার টাকা।’
আলাপকালে কয়েকজন ক্রেতা প্রথম আলোকে জানান, সামগ্রিকভাবে বাজারে সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম চড়ে আছে। মূল্যস্ফীতির চাপে তাঁরা হিমশিম খাচ্ছেন। তাই খরচ কাটছাঁট করে চলার চেষ্টা করছেন। তারই অংশ হিসেবে খরচ বাঁচাতে তাঁরা ইফতারে ফলের ব্যবহার কমিয়েছেন। এ কারণে আশানুরূপ বিক্রি হচ্ছে না বলে জানান বিক্রেতারা।
মিরপুর–১০ নম্বরের ফল বাজারের দোকানগুলোয় দেশি ফলের পাশাপাশি বিদেশি নানা ধরনের ফলও বিক্রি হয়ে থাকে। সেখানে সোমবার বেলা ৩টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত দেখা গেছে, অধিকাংশ ক্রেতা ফল কেনার সময় দরদাম করে কিনছেন। বিক্রেতাদের অনেকেই আবার অতিরিক্ত দামাদামিতে অসন্তুষ্ট হয়েছেন। অফিস শেষে বাড়ির ফেরার সময় ক্রেতাদের অনেকেই কম পরিমাণে ফল কিনেছেন। দাম নিয়ে সব ক্রেতার মধ্যেই অসন্তোষ দেখা গেছে। কেউ কেউ তো দাম বেশি বলে ফল না কিনেই চলে যান।
স্থানীয় মসজিদ রোডের বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব আমিরুল ইসলাম এসেছিলেন ইফতারের ফল কেনার জন্য। তাঁর কাছে প্রতিটি বড় আকারের আনারসের দাম চাওয়া হয় ৬০ টাকা। আর ৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছিল পেয়ারা। আমিরুল ইসলাম বলেন, তাহলে তো একটা আনারস না কিনে এক কেজি পেয়ারা কেনাই ভালো। এ সময় তিনি প্রথম আলোর এক প্রশ্নের উত্তরে জানান, দাম বেশি হওয়ায় এবার রমজানে ইফতারে বিদেশি ফলের ব্যবহার কমিয়ে তাঁর পরিবারে দেশি ফল বেশি খাওয়া হচ্ছে।
কিছুক্ষণ পরে কথা হয় পাশের ভাই ভাই ফলের দোকানের মালিক সাগর ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে যেসব ক্রেতা আসেন, তার বেশির ভাগ পরিচিত। তাঁরা আগের চেয়ে ফল কম কিনছেন। তাতে গত রোজার চেয়ে এবার বেচাকেনা ৩০ শতাংশের মতো কমেছে।’ ফলের বর্তমান যে দাম তা খুব বেশি নয় বলে মনে করেন তিনি।
রাজধানীর ফল আমদানিকারকেরা বলছেন, গত বছরজুড়ে দেশে ডলারের বাজারে চরম অস্থিরতা ছিল। এতে ফল আমদানি বেশ বাধাগ্রস্ত হয়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় আমদানির ক্ষেত্রে জাহাজভাড়াসহ পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে। সব মিলিয়ে আমদানি করা ফলের বাজারে একধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়। এখন অস্থিরতা কমতে শুরু করেছে।
ঢাকার বাজারে এখন প্রতি কেজি সবুজ আপেল ৩০০ থেকে ৩২০ টাকায়, লাল আপেল ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কমলার কেজি ২০০ থেকে ২৫০ টাকার মধ্যে। সবুজ আঙুর ২০০ থেকে ২২০ টাকা ও লাল আঙুর ৩৫০ থেকে ৩৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মাল্টার কেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকা। নাশপাতি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। আনার ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
দেশি ফলের মধ্যে পেয়ারার কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা। মাঝারি ও বড় আকারের প্রতিটি আনারসের দাম ৩০ থেকে ৬০ টাকা। তরমুজের কেজি রাখা হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪৫ টাকার মধ্যে। সবরী কলার দাম বেশ চড়া। প্রতি ডজন সবরী কলা ১১০ থেকে ১২০ টাকায় চলছে। সাগর কলার দামও প্রায় কাছাকাছি, ৯০ থেকে ১০০ টাকা ডজন। দেশি কলার ডজন ৮০ থেকে ১০০ টাকা।
বাজারে এখন দেশি স্ট্রবেরি, আতা ও সফেদার মতো ফলও পাওয়া যাচ্ছে। মাঝারি মানের প্রতি কেজি স্ট্রবেরির দাম ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। এক কেজি আতা ফলের দাম রাখা হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা। আর সফেদার কেজি ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা। বিদেশি খেজুরের দাম এবার বেশ বাড়তি। মোটামুটি মানের খেজুর কিনতে গেলেও প্রতি কেজি ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা গুনতে হয় ক্রেতাদের।
আমদানি ভালো হলেও এবার খেজুরের দাম কমার সম্ভাবনা কম উল্লেখ করে ঢাকা মহানগর ফল আমদানি-রপ্তানিকারক ও আড়তদার ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম শেখ বলেন, দেশের কিছু স্থানে ঝড়বৃষ্টি হওয়ায় তরমুজের ক্ষতি হয়েছে। তাতে দাম একটু বাড়তি। আর খেজুর আমদানিতে খরচ বেশি হয়েছে। তাই দাম এবার খুব একটা কমবে না।