জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান

পণ করেছি, আর কর অব্যাহতি দেব না: এনবিআর চেয়ারম্যান

কর অব্যাহতির সংস্কৃতি থেকে বের হওয়ার কথা আবারও জানালেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মো. আবদুর রহমান খান। তিনি বলেন, ‘আমরা পণ করেছি যে আর কর অব্যাহতি দেব না। কর অব্যাহতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছি।’

আজ সোমবার ঢাকার আগারগাঁওয়ে এনবিআর কার্যালয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ, অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ লিমিটেড (এবিবি), ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ), বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ) এবং বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) সঙ্গে অনুষ্ঠিত প্রাক্‌-বাজেট আলোচনায় সংস্থাটির চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন।

স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষ থেকে পুঁজিবাজারে কর অব্যাহতির দাবি জানানো হলে এনবিআর চেয়ারম্যান তখন বলেন, ‘সারা জীবনই তো কর অব্যাহতি দিলাম। ফল তো আসে না। সবকিছুর আগে কেন কর অবকাশ লাগবে? কর অব্যাহতির সংস্কৃতিতে আর থাকতে চাই না। আমাদের বদনাম হয়ে গেছে যে রাজস্ব যা আদায় করি-এর সমপরিমাণ অব্যাহতি দিয়ে দিই।’

১৫ থেকে ২০ বছর ধরে পুঁজিবাজারে যাঁরা বিনিয়োগ করেছেন, তাঁরা ৭ থেকে ১৫ শতাংশ পুঁজি হারিয়েছেন, এমন মন্তব্য করে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, এযাবৎ পুঁজিবাজারে যত সুবিধা দেওয়া হয়েছে, বাজারে তার সুবিধা পাওয়া যায়নি।

এনবিআর ২০২৩-২৪ সময়ে শুল্ক-কর ছাড়ের বিষয়ে তিনটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে এনবিআর। প্রতিবেদনগুলো পর্যালোচনায় উঠে আসে—আয়কর, ভ্যাট, সম্পূরক শুল্ক, আমদানি শুল্ক ও আবগারি শুল্ক মিলিয়ে এক অর্থবছরে ২ লাখ ৭৩ হাজার ৪১০ কোটি টাকার ছাড় দেওয়া হয়েছে।

দুই স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষ থেকে লভ্যাংশ আয়ের ওপর কর কমানো ও চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হিসেবে বিবেচনা করা এবং তালিকাভুক্ত বন্ড থেকে অর্জিত আয় বা সুদের ওপর কর অব্যাহতির প্রস্তাব করা হয়।

এ ছাড়া লভ্যাংশ করের ওপর দ্বৈত করের বিধান প্রত্যাহার করে লভ্যাংশ আয়কে করমুক্ত করা, তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করহারের ব্যবধান কোনো ধরনের শর্ত ছাড়া ১০ শতাংশ করা, নির্ধারিত বার্ষিক মোট নগদ ব্যয় ও বিনিয়োগের সীমা ৩৬ লাখ টাকার বদলে মোট ব্যবসায়িক লেনদেনের (টার্নওভার) ১০ শতাংশ করা, ক্ষুদ্র ও মাঝারি পর্যায়ের (এসএমই) প্রতিষ্ঠান ও অলটারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডের (এডিবি) তালিকাভুক্তির প্রথম তিন বছরের জন্য কর অব্যাহতি দেওয়া এবং ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের করমুক্ত আয়ের সীমা ৫ লাখ টাকা করার প্রস্তাব দেয় স্টক এক্সচেঞ্জ।

ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ) মূলধনি আয়ের ওপর করহার ১৫ শতাংশের পরিবর্তে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব দেয়। এবিবি ভ্যাট সফটওয়্যারের বাস্তবায়ন, ঋণ হিসাব ও ক্রেডিট কার্ড হিসাবের ওপর আবগারি শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি জানায়। বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ) তালিকাভুক্ত কোম্পানির ভ্যাটের হার কমিয়ে ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব করে।

স্বাস্থ্যবিমার ওপর কর কর্তন রহিত করা এবং অনলাইনভিত্তিক বিমা প্রিমিয়ামের ওপর ভ্যাট ও করপোরেট কর বাতিলের প্রস্তাব জানায় বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ)।

এনবিআর চেয়ারম্যান বিমা খাত নিয়ে বলেন, উন্নত দেশের মতো বিমা কোম্পানিগুলোর ‘হেলথ কার্ডে’র প্রচলন করতে হবে। স্বাস্থ্যবিমা ভালোভাবে দিতে পারলে হুমড়ি খেয়ে পড়বে দেশের মানুষ।