বাজারে সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় গরুর মাংস কেনা কমিয়ে দিয়েছেন মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত ও স্বল্প আয়ের মানুষ। তাতে বাজারে গরুর মাংসের চাহিদা কমে গেছে। এ জন্য অনেকটা বাধ্য হয়ে কম লাভে হলেও মাংস বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। ফলে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে গরুর মাংসের দাম বাজারভেদে ৫০ থেকে ১৮০ টাকা পর্যন্ত কমেছে।
রাজধানীর মালিবাগ, মগবাজার, রামপুরা, নিউমার্কেট কাঁচাবাজার ও কারওয়ান বাজারে এক সপ্তাহের ব্যবধানে ৫০-৬০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৭২০ থেকে ৭৫০ টাকায়। তবে রাজধানীর শনির আখড়া, রায়েরবাগ, মুজাহিদনগর, মেরাজনগর, জুরাইন, লালবাগ, হাজারীবাগ ও কাপ্তানবাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংসের দাম দুই মাসের ব্যবধানে ১৫০-১৮০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকায়। তবে কম দামি মাংসে চর্বির পরিমাণ একটু বেশি থাকে।
বিক্রেতারা বলছেন, রাজধানীর যেসব এলাকায় সীমিত আয়ের মানুষ বেশি থাকেন, সেসব এলাকায় গরুর মাংসের দাম বেশি কমেছে। এর আগে গত মার্চে গরুর মাংসের দাম বেড়ে প্রতি কেজি সর্বোচ্চ ৮০০ টাকায় উঠেছিল। তাতে গরুর মাংস সীমিত আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যায়। বিক্রি কমে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হন। এখন দাম কমিয়ে দেওয়ায় বিক্রি কিছুটা বেড়েছে।
রাজধানীর রায়েরবাগের বিসমিল্লাহ গোশতের দোকানের বিক্রেতা সায়েম হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাংসের দাম যখন ৮০০ টাকায় উঠেছিল, তখন দিনে ৫০ কেজি মাংস বিক্রি করতেই হিমশিম খেতে হয়েছিল। দুই মাস ধরে ৬০০ টাকা কেজিতে গরুর মাংস বিক্রি করছি। দাম কমানোর ফলে বেচাবিক্রি আগের তুলনায় প্রায় চার গুণ বেড়েছে।’
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) গত শনিবারের বাজারদরের তালিকা অনুযায়ী, রাজধানীতে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৭৩০ থেকে ৭৫০ টাকা। এক সপ্তাহ আগে এ দাম ছিল ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকা। আর এক বছর আগে দাম ছিল প্রতি কেজি ৬৬০ থেকে ৭০০ টাকা।
রাজধানীর জুরাইনের বাসিন্দা অটোরিকশাচালক আলী হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘কয়েক মাস ধরে বেশি দামের কারণে গরুর মাংস কেনা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। দাম কিছুটা কমে আসায় এক সপ্তাহ আগে ৩০০ টাকায় আধা কেজি মাংস কিনেছি।’
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে মাংসের উৎপাদন ছিল ৮৭ লাখ টন। ওই বছর দেশের বাজারে মাংসের চাহিদা ছিল ৭৬ লাখ টন। ফলে চাহিদার তুলনায় ১১ লাখ টন বেশি মাংস উৎপাদিত হয়েছে। উৎপাদন বেশি হওয়া সত্ত্বেও বাজারে দাম ছিল বেশি। কিন্তু মানুষ মাংস কেনা কমিয়ে দেওয়ায় দামও কমতে শুরু করেছে।
বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মোর্তুজা প্রথম আলোকে বলেন, দেশে গরুর উৎপাদন ভালো। তাতে ৬ মাস আগের তুলনায় গরুর দাম ২৫ শতাংশের মতো কমেছে। এ ছাড়া মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে আসার ফলে চাহিদাও অনেক কমে গিয়েছিল। তাতেও বাজারে গরুর মাংসের দাম কমেছে। গরুর মাংসের দাম আরও কমানোর সুযোগ আছে বলে মনে করেন তিনি।
গত জুলাইয়ে বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশন (বিডিএফএ) গরুর মাংসের দাম কেজিতে ৫০ টাকা কমানোর ঘোষণা দেয়। তবে তাতে বাজারের দামে খুব বেশি হেরফের হয়নি। এখন চাহিদা কমে যাওয়ায় দাম কমতে শুরু করেছে।
এ বিষয়ে বিডিএফএর সাধারণ সম্পাদক শাহ ইমরান প্রথম আলোকে বলেন, গরুর উৎপাদন আগের মতোই আছে। তবে পরিস্থিতি এমন হয়েছে, খামারিরা নিজেরাও গরু জবাই করে বিক্রি করছেন। খামার থেকে কয়েক দফা হাতবদল না হলে ক্রেতাদের চড়া দামে গরুর মাংস খেতে হতো না বলে মনে করেন তিনি।