এ বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত জর্জিয়ায় ১২ হাজার ৯৩টি নতুন রুশ কোম্পানি নিবন্ধিত হয়েছে, যা ২০২১ সালের চেয়ে ১৩ গুণের বেশি।
রাশিয়ার দক্ষিণ সীমান্তের একটি ছোট ককেশাস জাতি জর্জিয়া। আয়তন ৬৯ হাজার ৭০০ বর্গকিলোমিটার, জনসংখ্যাও মাত্র ৩৭ লাখের মতো। ছোট্ট দেশটির ভাগ্য বদলে দিচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। কারণ, রাশিয়ার প্রচুর মানুষ যুদ্ধের কারণে অভিবাসী হয়ে জর্জিয়ায় পাড়ি জমাচ্ছেন। যাওয়ার সময় দেশ থেকে তাঁরা নিজেদের সমুদয় অর্থকড়ি তথা অস্থাবর সম্পদ নিয়ে যাচ্ছেন।
জর্জিয়ার জাতীয় পরিসংখ্যান অফিসের (এনএসও) তথ্য অনুযায়ী, এ বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত জর্জিয়ায় ১২ হাজার ৯৩টি নতুন রুশ কোম্পানি নিবন্ধিত হয়েছে, যা ২০২১ সালে নিবন্ধিত মোট প্রতিষ্ঠানের তুলনায় ১৩ গুণের বেশি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ জর্জিয়ার পাশাপাশি আর্মেনিয়া, তুরস্কসহ বেশ কয়েকটি ককেশাস অর্থনীতিকেও সমৃদ্ধ করছে।
রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধে জর্জিয়া, আর্মেনিয়া ও তুরস্কের মোট দেশজ উৎপাদনকে চাঙা করে তুলছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পূর্বাভাস অনুযায়ী ২০২২ সালের শেষে জর্জিয়ার জিডিপি বেড়ে ১০ শতাংশে উন্নীত হবে। গত এপ্রিলে সংস্থাটি জর্জিয়ায় এ বছর জিডিপিতে ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিল। আইএমএফ বলছে, ‘অভিবাসন ও যুদ্ধের ফলে আর্থিক প্রবাহের ঢেউ’ তুরস্কেও পৌঁছে গেছে। বদৌলতে সেই দেশে এ বছর জিডিপি বেড়ে হবে ৫ শতাংশ। একইভাবে ‘বাহ্যিক আয়, মূলধন ও শ্রমের বৃহৎ প্রবাহের’ ফলে আর্মেনিয়ায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হবে ১১ শতাংশ।
জর্জিয়ায় এ বছর বৈদেশিক মূলধনপ্রবাহে নাটকীয় প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তবে বিদেশি এই মূলধনপ্রবাহের তিন-পঞ্চমাংশ বা ৫৯ দশমিক ৬ শতাংশই গেছে রাশিয়া থেকে। জর্জিয়ার ন্যাশনাল ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী গত ফেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবরের মধ্যে রুশরা জর্জিয়ায় ১৪১ কোটি মার্কিন ডলার স্থানান্তর করেছেন, যা ২০২১ সালের ৩১ কোটি ৪০ লাখ ডলারের চেয়ে সাড়ে ৪ গুণ বেশি। আর ফেব্রুয়ারি-সেপ্টেম্বর সময়ে রাশিয়া থেকে যাওয়া অভিবাসীরা জর্জিয়ার ব্যাংকগুলোতে ৪৫ হাজারের বেশি অ্যাকাউন্ট বা হিসাব খুলেছেন।
বলা হচ্ছে, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের প্রভাবে অনেক অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে। কারণ, রুশ অভিবাসীরা অন্য দেশে যাওয়ার সময় নিজেদের সঙ্গে থাকা অস্থাবর সম্পদও নিয়ে যাচ্ছেন। এতে ওই সব দেশ অর্থনৈতিকভাবে উপকৃত হচ্ছে।
রাশিয়ার দক্ষিণ সীমান্তে অবস্থিতি জর্জিয়াও একসময় ইউক্রেনসহ আরও বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রেরই অংশ ছিল। গত শতকের নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকে ১৯৯১ সালের ২৬ ডিসেম্বর সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গেলে এসব দেশ স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ হিসেবে আবির্ভূত হয়।
একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে অভিযান শুরু করার পরপরই প্রায় ৪৩ হাজার রুশ নাগরিক জর্জিয়ায় অভিবাসী হন। সেপ্টেম্বরে দ্বিতীয় দফায় প্রচুর রুশ নাগরিক স্বেচ্ছায় দেশান্তরি হন। এ সংখ্যা নির্ধারণ করা কঠিন ছিল বলে কেউ কেউ মনে করেন।
পোনারস ইউরেশিয়া নামের একটি গবেষণা গ্রুপের পরিচালিত এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাশিয়া থেকে বেরিয়ে যাওয়া অভিবাসীদের প্রায় এক–চতুর্থাংশ, অর্থাৎ ২৩ দশমিক ৪ শতাংশ জর্জিয়ায় ঠাঁই নেন। অবশিষ্ট রুশ অভিবাসীদের অধিকাংশই পাড়ি জমান তুরস্কে, যা শতকরা হিসাবে ২৪ দশমিক ৯ শতাংশ। এ ছাড়া আর্মেনিয়ায় ১৫ দশমিক ১ শতাংশ ও অন্যান্য দেশে পালিয়ে গেছেন ১৯ শতাংশ রুশ নাগরিক।
রুশ অভিবাসীদের আগমন জর্জিয়ার অর্থনীতিতে বাহ্যিক প্রভাব ফেলেছে। এতে ভিড–১৯–এর জেরে স্থবির হয়ে পড়া অর্থনীতি আবার চাঙা হয়ে উঠছে। এ বছর এখন পর্যন্ত মার্কিন ডলারের বিপরীতে জর্জিয়ান মুদ্রা লারির বিনিময় হার ১৫ শতাংশ বেড়েছে।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী তুরস্ক এ বছর ১ লাখ ১৯ হাজার রুশকে সেসব দেশে বসবাসের অনুমতি দিয়েছে। সিএনবিসি সংবাদমাধ্যম রাশিয়া থেকে ব্যক্তিদের সংখ্যা ও সম্পদ ক্রয়সংক্রান্ত তথ্য চাইলেও আর্মেনিয়ান সরকার তা দেয়নি।
রুশ নাগরিকদের আগমনের বড় প্রভাব পড়েছে জর্জিয়ার আবাসন মার্কেটে। জর্জিয়ান ব্যাংক টিবিসি জানায়, রাজধানী তিবিলিসিতে গত সেপ্টেম্বরে আগের বছরের একই মাসের তুলনায় আবাসনের দাম ২০ শতাংশ ও লেনদেন ৩০ শতাংশ বেড়েছে। একই সময়ে বাড়িভাড়া বেড়েছে ৭৪ শতাংশ। সূত্র: সিএনবিসি