ডলার
ডলার

ভারতের প্রবাসী আয় ১৬০ বিলিয়ন ডলারে উঠবে

ভারত বিশ্বের সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় পাওয়া দেশ। এ ক্ষেত্রে তাদের আরও সুদিন আসছে বলেই বলে মনে করছে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই)। সম্প্রতি তাদের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৯ সাল নাগাদ ভারতে বার্ষিক রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় ১৬০ বিলিয়ন ডলার বা ১৬ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছাবে।

প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে দ্য হিন্দু সংবাদপত্রে বলা হয়েছে, বিশ্বের মোট রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ের ১৩ দশমিক ৫ শতাংশই আসে ভারতে। দেশটির উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন মানুষেরা বিশ্বের বিভিন্ন বহুজাতিক সংস্থায় উচ্চপদে কর্মরত; তাঁদের কারণে প্রবাসী আয় পাওয়ার ক্ষেত্রে ভারতের এই বাড়বাড়ন্ত।

সেই সঙ্গে ভবিষ্যতে শ্রম সরবরাহের ক্ষেত্রে ভারত বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দেশ হতে যাচ্ছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। সে জন্য দেশটি একরকম প্রস্তুত। ২০৪৮ সাল পর্যন্ত ভারতে কর্মজীবী জনসংখ্যা বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অর্থাৎ তরুণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যাধিক্যের সুযোগ তারা পাচ্ছে। এর বিপরীতে উন্নত দেশগুলোয় কর্মক্ষম মানুষ কমছে। এই বাস্তবতায় শ্রম সরবরাহে ভারতের ভবিষ্যৎ আরও উজ্জ্বল হবে বলেই ধারণা।

গত বছর প্রবাসী ভারতীয়রা ১১ হাজার ৫০০ কোটি ডলার প্রবাসী আয় পাঠিয়েছেন। দেশটির জিডিপিতে প্রবাসী আয়ের অনুপাত তাই বেড়েছে। ২০০০ সালে এই অনুপাত ছিল ২ দশমিক ৮ শতাংশ; গত বছর তা বেড়ে ৩ দশমিক ২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ভারতের জিডিপি অনুপাতে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) প্রবাহের তুলনায় প্রবাসী আয়ের হিস্যা বেশি। ২০২৩ সালে এফডিআইয়ের অনুপাত ছিল ১ দশমিক ৯ শতাংশ। জিডিপিতে প্রবাসী আয়ের হিস্যা বৃদ্ধিতে ভারতের বাহ্যিক খাত শক্তিশালী হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার জন্য এ প্রতিবেদন তৈরিতে কাজ করেছে দেশটির ডিপার্টমেন্ট অব ইকোনমিক অ্যান্ড পলিসি রিসার্চ (ডিইপিআর) ও অন্যান্য সংস্থা। বলা হয়েছে, ভারতীয়দের দক্ষতা প্রমাণিত। ভবিষ্যতে সারা বিশ্বেই ভারতীয় অভিবাসী কর্মীর চাহিদা বাড়বে। এতে যেমন ভারতের বৈশ্বিক ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে, তেমনি রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ের প্রবাহ বাড়বে।

২০২৩ সালে বৈশ্বিক রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ের প্রবাহ ৮৫ হাজার ৭৩০ কোটি ডলারে উঠেছে। সবার ওপরে আছে ভারত। বাকি দেশগুলোর সঙ্গে ভারতের আয়ের পার্থক্যও অনেক। তালিকায় পরের অবস্থানে থাকা মেক্সিকো, চীন ও ফিলিপাইন প্রবাসী আয় পেয়েছে যথাক্রমে ৬ হাজার ৬২০ কোটি, ৪ হাজার ৯৫০ কোটি ও ৩ হাজার ৯১০ কোটি ডলার।

জনসংখ্যার অনুপাতে দেখা যাচ্ছে, ২০২০ সালে ভারতের ১ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষ অভিবাসী হিসেবে বিশ্বের অন্য কোনো দেশে ছিল। ২০২১ সালে ভারতের অর্ধেকেরও বেশি প্রবাসী আয় এসেছে উপসাগরীয় অঞ্চল থেকে; একই সময়ে উত্তর আমেরিকা থেকে এসেছে ২২ শতাংশ।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় পাঠানোর খরচ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কমেছে। আর্থিক ব্যবস্থাপনায় ডিজিটালাইজেশনের সুফল হিসেবে ব্যয় কমছে। ভারতের ক্ষেত্রে রেমিট্যান্স প্রাপ্তির গড় খরচ চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) ৫ দশমিক শূন্য ১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। আগের প্রান্তিকের (অক্টোবর-ডিসেম্বর) চেয়ে যা কিছুটা কম। কিন্তু টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) ঘোষিত হার থেকে থেকে এখনো বেশি। এসডিজি অনুযায়ী, প্রতি ২০০ ডলার রেমিট্যান্স পাঠাতে খরচ হওয়ার কথা ৩ শতাংশ।

জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইএমওর হিসাবে, বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৩ দশমিক ৪ শতাংশ অভিবাসী। তাদের উপার্জিত অর্থ বৈশ্বিক জিডিপিতে বড় অবদানও রাখছে, যার হার ৯ দশমিক ৪ শতাংশ।

সংস্থাটি বলেছে, সব মিলে বিশ্বের ১৪ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনোভাবে প্রবাসী আয়ের সঙ্গে যুক্ত; যাদের মধ্যে কেউ পাঠাচ্ছে, আবার কেউ গ্রহণ করছে।

বিশ্বব্যাংকের হিসাবে, মোট প্রবাসী আয়ের ৬০ থেকে ৯৫ শতাংশ নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোয় যায়। অর্থাৎ ৪০টি ধনী দেশে কাজ করে শ্রমিকেরা অন্তত ১২৫টি দেশে পরিবার ও স্বজনের কাছে প্রবাসী আয় পাঠান। বাংলাদেশসহ এসব দেশের গ্রামীণ অর্থনীতিতে প্রবাসী আয়ের বড় ভূমিকা আছে।

প্রবাসী আয় পাওয়ার ক্ষেত্রে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম।