মিয়ানমারের পতাকা
মিয়ানমারের পতাকা

বিপর্যস্ত মিয়ানমারের অর্থনীতি, এক ডলারে পাওয়া যাচ্ছে ৬০০০ কিয়াত

গৃহযুদ্ধে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে মিয়ানমারের অর্থনীতি। এ অবস্থায় কিনা দেশটিতে মূল্যস্ফীতির হার দ্রুত বাড়ছে এবং স্থানীয় মুদ্রা কিয়াতের মানও পড়ে গেছে। সব মিলিয়ে মিয়ানমারের সাধারণ মানুষ বড় ধরনের চাপে পড়েছেন।

গত সপ্তাহে মিয়ানমারের কালোবাজারে প্রতি মার্কিন ডলার বিক্রি হয় ৭ হাজার ৫০০ কিয়াত, যা মাসের শুরুতে ছিল ৫ হাজার কিয়াত। দেশটির মুদ্রাবাজার–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সরকার বিপুল পরিমাণে মুদ্রা (কিয়াত) ছাপানোর কারণেই মূলত এটির ব্যাপক দরপতন ঘটেছে। খবর রয়টার্সের

মিয়ানমারের প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ডের এক মুদ্রা ব্যবসায়ী বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, মানুষ অনেকটা পাগলের মতো কিয়াত বিক্রি করে থাই বাথ কিনছেন। যাঁরা দেশে অর্থাৎ মিয়ানমারে অর্থ পাঠাচ্ছেন, তাঁরা বাথ বিক্রি করে কিয়াত কিনছেন। এতে অবশ্য কিয়াতের দর কিছুটা বেড়েছে।

কালোবাজারে এখন প্রতি মার্কিন ডলারে প্রায় ৬ হাজার কিয়াত পাওয়া যাচ্ছে। যদিও দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারত দর হলো ২ হাজার ১০০ কিয়াত। অনলাইনে প্রতি ডলার বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৪০০ কিয়াত। এদিকে দেশটিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমছে না।

কিয়াতের ব্যাপক দরপতনের কারণে মিয়ানমারে পরিবহন ব্যয়সহ সব পণ্যের দাম বেড়েছে। দেশটির ছয় নাগরিক রয়টার্সকে বলেছেন, এক মাস আগেও পরিবারের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে মাসে ২৫ হাজার কিয়াত লাগত। কিন্তু এখন তা ৪০ হাজার কিয়াতের মতো লাগে।

এ বিষয়ে রয়টার্স মিয়ানমারের সামরিক সরকারের এক মুখপাত্রকে প্রশ্ন করলেও তিনি কোনো সাড়া দেননি।

একসময় উদীয়মান বাজার হিসেবে মিয়ানমার বেশ প্রতিশ্রুতিশীল ছিল। কিন্তু ২০২১ সালে সামরিক বাহিনী নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতায় এলে দেশটিতে নানা ধরনের জটিলতা শুরু হয়। সেই ঘটনার পর বিনিয়োগকারীরা মিয়ানমার ছেড়ে যেতে শুরু করেন। বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলো বিভিন্ন ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। দেশব্যাপী বিক্ষোভ শুরু হয় এবং সশস্ত্র বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে। তার জেরে মিয়ানমারের অর্থনীতি এখন রীতিমতো খাবি খাচ্ছে।

গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর মিয়ানমারের সামরিক সরকার দেশের বড় অংশের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। এমনকি চীন ও থাইল্যান্ডের সঙ্গে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছে। এখন অর্থনীতির পালে হাওয়া লাগাতে গলদঘর্ম হচ্ছে মিয়ানমার।

এদিকে বিশ্বব্যাংক বলছে, মিয়ানমারে ছয় বছর আগের তুলনায় দারিদ্র্য অনেকটা বেড়েছে। এ ছাড়া চলতি অর্থবছরে দেশটির অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি হতে পারে ১ শতাংশ।

গত জুনে বিশ্বব্যাংক এক প্রতিবেদনে বলেছে, মিয়ানমারে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের আয় কমেছে। অন্যদিকে বেড়ে গেছে বেকারত্ব। ফলে দেশটির বিপুলসংখ্যক মানুষ বড় ধরনের চাপের মুখে আছেন।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, মিয়ানমারে এখন বিশৃঙ্খলা চলছে। সামরিক সরকারের অর্থনৈতিক নীতি ও ভুল সিদ্ধান্তের কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তারা এখন কঠোরভাবে অর্থনীতি ও মুদ্রা স্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে।

স্থানীয় মুদ্রার দরপতন ঠেকাতে জুন থেকে জান্তা সরকার মোট ৫৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এর মধ্যে আছেন স্বর্ণ ব্যবসায়ী, মুদ্রা ব্যবসায়ী ও আবাসন খাতের এজেন্টরা।

দেশীয় মুদ্রার দরপতনের প্রভাবে মিয়ানমারে ভোজ্যতেলের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে। এই তেল মূলত থাইল্যান্ড থেকে আমদানি করা হয়। এ ছাড়া জ্বালানি তেলের স্বল্পতার কারণে পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তেলের পাম্পে মানুষের দীর্ঘ সারি তৈরি হচ্ছে। পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধির কারণে বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়ে দ্বিগুণ, এমনকি তিন গুণ পর্যন্ত হয়েছে।

বিশেষ করে ওষুধের দাম বেড়েছে। ডায়াবেটিসের রোগীরা রক্তের শর্করা মাপার জন্য যে স্ট্রিপ ব্যবহার করেন, সেটির দাম গত এক মাসে ১০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। আবার বাড়তি দাম দিয়েও অনেক ওষুধ বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ, সীমান্ত এলাকায়ও সংঘাত ছড়িয়ে পড়ায় চাহিদা অনুযায়ী ওষুধ আসছে না।

দেশটির সাবেক সংসদ সদস্য ও সামরিক বাহিনীর সমন্বয়ে যে জাতীয় ঐকমত্যের সরকার গঠিত হয়েছে তারা বলছে, অর্থনীতি নিয়ে সামরিক বাহিনীর সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই। তারা শুধু নোট ছাপিয়ে যাচ্ছে। এতে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে ও অর্থনৈতিক সংকট ঘনীভূত হচ্ছে, আগে যা দেখা যায়নি।