গতকাল ইরানের প্রেসিডেন্টের মৃত্যুর খবরে বিশ্ববাজারে তেলের দাম সকালে কিছুটা বেড়েছিল; কিন্তু আজ সকালে তেলের দাম কমেছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, আজ বাজারের মৌলিক কারণেই দাম কমেছে। যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতির হার ও নীতি সুদহার দীর্ঘদিন ঊর্ধ্বমুখী থাকবে আর তার প্রভাবে চাহিদা কমবে—এমন আশঙ্কা থেকে আজ মঙ্গলবার সকালে বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমেছে।
জানা গেছে, ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ১২ সেন্ট বা শূন্য দশমিক ১ শতাংশ কমে ৮৩ দশমিক ৩৪ ডলারে নেমে এসেছে। এ ছাড়া ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট ক্রুডের দাম ৮ সেন্ট বা শূন্য দশমিক ১ শতাংশ কমে ব্যারেলপ্রতি ৭৯ দশমিক ৭২ ডলারে নেমে এসেছে।
ইরানের প্রেসিডেন্টের মৃত্যু নিয়ে সৃষ্ট অনিশ্চয়তায় গতকাল সকালে তেলের দাম বাড়লেও পরে তা ১ শতাংশ কমে যায়। মূলত ফেডারেল রিজার্ভের কর্মকর্তাদের কথায় এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ফেডের কর্মকর্তারা গতকাল পরিষ্কার করেই বলেছেন, মূল্যস্ফীতির সূচক নিম্নমুখী হচ্ছে—পরিষ্কারভাবে এমন ইঙ্গিত পাওয়ার পরই তারা নীতি সুদহার কমানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
গতকাল সোমবার ফেডারেল রিজার্ভের ভাইস চেয়ারম্যান ফিলিপ জেফারসন বলেছেন, এপ্রিল মাসে মূল্যস্ফীতির হার সামান্য কমেছে; কিন্তু সেই ধারা যে দীর্ঘমেয়াদি হবে, তা এখনই বলার সময় হয়নি। আরেক ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইকেল বার বলেছেন, নিয়ন্ত্রণমুখী নীতি কার্যকর হতে আরও সময় লাগবে। ফেডারেল রিজার্ভ আটলান্টার ভাইস প্রেসিডেন্ট রাফায়েল বোস্টিক বলেছেন, মূল্যস্ফীতির ধারা দীর্ঘ মেয়াদে কমতে শুরু করেছে, এ বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী হতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আরও কিছুটা সময় লাগবে।
নীতি সুদহার বাড়ানোর অর্থ হলো ঋণ নিতে নিরুৎসাহিত করা; অর্থাৎ সমাজে অর্থের সঞ্চালন হ্রাস করা। এরপর সমাজে বা অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার করতে হলে নীতি সুদহার হ্রাস করা হয়; এতে সমাজে অর্থের সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়।
বিশ্লেষক ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিশ্ববাজারে একদিকে চাহিদা কম, আরেক দিকে সরবরাহ বেশি, সে কারণে বাজার দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। এতে তেলের দাম আরও পড়ে যেতে পারে। সুখবর হলো, তেল উৎপাদনকারী অঞ্চলে বড় ধরনের ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা থাকলেও বাজারে এখনো বিশেষ প্রভাব পড়েনি।
গতকাল ইরানের প্রেসিডেন্টকে বহনকারী হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়া এবং সৌদি আরবের বাদশাহর স্বাস্থ্যগত কারণ দেখিয়ে সিংহাসনের উত্তরাধিকারী যুবরাজের জাপান সফর বাতিল করার পর তেলের দাম কিছুটা বেড়ে যায়। প্রায় সাত মাস ধরে ইসরায়েল-হামাস সংঘাতের জেরেও তেলের বাজার অতটা প্রভাবিত হয়নি।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ইরানের প্রেসিডেন্টের মৃত্যুর খবরে তেলের বাজারে তাৎক্ষণিকভাবে বিশেষ প্রভাব পড়েনি। নিকট ভবিষ্যতে কেমন প্রভাব পড়বে, তা এখনো পরিষ্কার নয়।
এ পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীরা ওপেক ও সহযোগী দেশগুলোর সরবরাহের দিকে তাকিয়ে আছে। আগামী ১ জুন তাদের বৈঠক হওয়ার কথা। বিশেষ করে তারা যে স্বেচ্ছায় দৈনিক ২২ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন হ্রাসের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তার মেয়াদ আরও বাড়ানো হয় কি না, তা তেলের বাজারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
বিষয়টির সঙ্গে সম্পৃক্ত সূত্রগুলো রয়টার্সকে বলেছে, বাজারে চাহিদা না বাড়লে ওপেক ও সহযোগী দেশগুলো হয়তো এই উৎপাদন হ্রাসের সিদ্ধান্তে অটল থাকতে পারে।