ভারতের জাতীয় পতাকা
ভারতের জাতীয় পতাকা

ভারতে পারিবারিক ব্যবসার যত দ্বন্দ্ব–সংঘাত

ভারতের অর্থনীতিতে পারিবারিক মালিকানায় থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিশেষ ভূমিকা আছে। ম্যাককিনসে রিসার্চের তথ্যানুসারে, ভারতের মোট জিডিপির ৭৫ শতাংশ জোগান দেয় এসব পারিবারিক মালিকানাধীন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। যেসব দেশে পারিবারিক মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা বেশি, এর মধ্যে ভারত অন্যতম।

২০২৭ সালে এসব প্রতিষ্ঠানের হিস্যা আরও বেড়ে ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশে উঠতে পারে। ভারতের জিডিপিতে এসব প্রতিষ্ঠানের হিস্যা ২০১৭ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে ২ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়েছে, অন্যান্য কোম্পানির তুলনায়। খবর ইকোনমিক টাইমসের

এ পরিসংখ্যান চিত্তাকর্ষক হলেও বাস্তবতা এতটা মসৃণ বা সুখকর নয়। এসব পারিবারিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দ্বন্দ্ব–সংঘাত প্রায়ই আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়। এ ধরনের খবর বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও আতঙ্ক তৈরি করে। দেখে নেওয়া যাক, চলতি ২০২৪ সালে ভারতের কোন কোন পারিবারিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে কী ধরনের দ্বন্দ্ব-সংঘাত হয়েছে।

কে কে মোদি পরিবার

২০২৪ সালে ভারতের পারিবারিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সংঘাতের মধ্যে আছে কে কে মোদি পরিবারের সংঘাত। মূলত সম্পদ, উত্তরাধিকার ও উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিয়ে এ সংঘাত। এ সংঘাতের মূলে আছে অশীতিপর বৃদ্ধ বীণা মোদি, যিনি ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম তামাক কোম্পানি গডফ্রে ফিলিপস ইন্ডিয়ার চেয়ারপারসন। এ কোম্পানির বাজারমূল্য ১১ হাজার কোটি রুপি। ঘরের বাইরের কেউ নয়, নিজের দুই সন্তান সমীর মোদি ও ললিত মোদির সঙ্গে তাঁর দ্বন্দ্ব।

২০১৯ সালে পরিবারের কর্তা কে কে মোদির মৃত্যুর পর দ্বন্দ্বের সূত্রপাত। মৃত্যুর আগে কে কে মোদি যে উইল রেখে গিয়েছিলেন, সেই উইল থেকেই দ্বন্দ্বের সূত্রপাত। উইলে ছিল, তাঁর স্ত্রী ও তিন সন্তান সম্পদের সমান ভাগীদার হবেন। কিন্তু ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ললিত মোদি মায়ের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেন। অভিযোগ, তাঁদের মা উইলের বরখেলাপ করেছেন এবং পারিবারিক ব্যবসা পরিচালনায় অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন।

সেপ্টেম্বর মাসে গডফ্রে ফিলিপস কোম্পানির চেয়ারপারসন পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন ৮০ বছরের বীণা। ৬ সেপ্টেম্বর ছিল কোম্পানির বার্ষিক সাধারণ সভা। সেখানে ৭৫ শতাংশ মালিকানা পেয়েছেন বীণা। সেই সভাতেই বোর্ড সদস্যপদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে সমীরকে। ললিত ও সমীরের মালিকানা এখন বীণার নামে রয়েছে। যদিও তিনি সন্তানদের সেই মালিকানা দেবেন বলে জানিয়েছেন। বীণা বলেন, ‘উইল অনুযায়ী প্রত্যেকে ২৫ শতাংশ করে পাবে। সমীর ও ললিতকে ওদের ভাগ দিয়ে দেওয়া হবে কিন্তু আমি বেঁচে থাকতে কোম্পানি বিক্রি হবে না। যদি অন্য কোনোভাবে এই সমস্যার সমাধান করা যায়, তাহলে আমার কোনো আপত্তি নেই।’

ওবেরয় পরিবার

ধনী পরিবারের দ্বন্দ্ব-বিবাদের মূল কারণ সম্পত্তির উত্তরাধিকার। ভারতের বিখ্যাত ওবেরয় পরিবারের ঝামেলাও এই সম্পত্তি নিয়ে। ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে পৃথ্বীরাজ ওবেরয়ের মৃত্যুর পর এই ঝামেলা শুরু হয়। অন্যান্য পরিবারের মতো এই পরিবারের দ্বন্দ্বও শেষমেশ আদালতে গড়িয়েছে।

পৃথ্বীরাজ ওবেরয়ের উইল নিয়ে এই পরিবারের দ্বন্দ্ব-সংঘাতের সূত্রপাত। ১৯৯২ ও ২০২১ সালে এই দুটি উইল করা হয়। দ্বিতীয় সংসারের সন্তানদের মধ্যে আনাসতাসিয়া ওবেরয়ের ভাষ্য, ২০২১ সালের উইল ও ২০২২ সালের কোডিসিল পৃথ্বীরাজের মূল উইল। বিক্রমজিৎ ও অর্জুন ওবেরয়ের ভাষ্য, ১৯৯২ সালের উইল প্রকৃত উইল।

চলতি বছরের নভেম্বর মাসে কোম্পানির বার্ষিক সাধারণ সভার আগে আনাসতাসিয়া ওবেরয় দিল্লি হাইকোর্টে এক পিটিশন দাখিল করেন। তিনি এজিএমের বেশ কয়েকটি এজেন্ডায় স্থগিতাদেশ চান, বিশেষ করে তাঁর সৎভাই বিক্রমজিৎ, নাতাশা ও চাচাতো ভাইয়ের নিয়োগের বিষয়ে আপত্তি তোলেন। এরপর হাইকোর্ট রুল দিলে আনাসতাসিয়া এজিএমে অংশ নিতে সক্ষম হন। সভায় তাঁর সৎভাই–বোনেরা নিশ্চয়তা দেন, তিনি ওবেরয় হোটেলস অ্যান্ড প্রোপার্টিজের পরিচালক হিসেবে পুনর্নিয়োগ পাবেন। শেষমেশ পৃথ্বীরাজের পরিবারের চার সদস্য, অর্থাৎ আনাসতাসিয়া, বিক্রমজিৎ, নাতাশা ও অর্জুন—সবাই পরিচালক নির্বাচিত হন। উত্তরাধিকার সমস্যার সাময়িক সমাধান হলেও মূল সমস্যার এখনো সমাধান হয়নি।

এসব আলোচিত ঘটনা ছাড়াও ২০২৪ সালে ভারতের মুরুগাপ্পা ও কল্যাণী পরিবারেও ব্যবসায়িক বিরোধ হয়েছে।