দক্ষিণ কোরিয়ার উপকূলে রাশিয়ার সোকোল গ্রেডের অপরিশোধিত তেলবাহী ১৪টি ট্যাংকার কয়েক সপ্তাহ ধরে আটকা পড়ে আছে। মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ও অর্থ পরিশোধ–সংক্রান্ত জটিলতার কারণে তারা তেল খালাস করতে পারছে না।
এসব ট্যাংকারে ১৩ লাখ ব্যারেল তেল আছে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে। বড় মার্কিন তেল কোম্পানি এক্সনমবিলের সাখালিন-১ প্রকল্পের মাসিক যে উৎপাদন ক্ষমতা, ট্যাংকারগুলোতে তার চেয়ে বেশি তেল আছে। মস্কো ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলার শুরু করলে অন্যান্য পশ্চিমা কোম্পানির মতো এক্সনমবিল রাশিয়া ত্যাগ করে।
সাখালিন-১ প্রকল্প ছিল সোভিয়েত-উত্তর যুগের অন্যতম বড় চুক্তি—উৎপাদিত তেল ভাগাভাগির ভিত্তিতে এই চুক্তি হয়েছিল। এক্সনমবিল ২০২২ সালে রাশিয়া ত্যাগ করলে এই প্রকল্পের উৎপাদন প্রায় শূন্যের কোটায় নেমে আসে। এরপর এই প্রকল্পে উৎপাদন এখন পর্যন্ত আগের পর্যায়ে পৌঁছায়নি।
ওয়াশিংটন বলেছে, রাশিয়ার ওপর দেওয়া নিষেধাজ্ঞার উদ্দেশ্য হলো ইউক্রেনে যুদ্ধের জন্য রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের রাজস্ব আয়ের পথ সংকুচিত করা, বিশ্ববাজারে রাশিয়ার তেল সরবরাহ ব্যাহত করা এর উদ্দেশ্য নয়। গত বছর যুক্তরাষ্ট্র সোকোল তেল পরিবহনকারী বেশ কিছু জাহাজ ও কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত দক্ষিণ কোরিয়ার উপকূলে ১৪টি তেলবাহী জাহাজ আটকা পড়ে ছিল, এর মধ্যে আছে ১১টি আফ্রাম্যাক্স জাহাজ ও ৩টি অপরিশোধিত তেলবাহী বড় জাহাজ। এলএসইজি কেপলার ডেটার সূত্রে এই তথ্য দিয়েছে রয়টার্স।
এসব তেলবাহী ট্যাংকারে যে পরিমাণ তেল আছে, তা সাখলিন-১ প্রকল্পে উৎপাদিত ৪৫ দিনের সমপরিমাণ তেল।
লা বালেনা (ভিএলসিসি), নিরেতা ও নেলিসের মতো সুপার ট্যাংকারগুলো বর্তমানে দক্ষিণ কোরিয়ার ইয়োসু উপকূলের কাছে নোঙর করে আছে। ৩২ লাখ ব্যারেল তেল ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন এসব ট্যাংকারগুলো বর্তমানে রুশ তেলের ভাসমান সংরক্ষণাগার হিসেবে কাজ করছে।
রয়টার্সের আরেক সংবাদে বলা হয়েছে, ভারতের ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশন (আইওসি) রাশিয়ার সোকোল গ্রেডের তেলের মূল্য পরিশোধে সমস্যায় পড়েছে। এই তেল যে কোম্পানি বিক্রি করছে, তারা সংযুক্ত আরব আমিরাতের মুদ্রা দিরহামে মূল্য পরিশোধের জন্য হিসাব খুলেছে। রাশিয়ার সরকারি কর্মকর্তারা ভারতকে চীনা মুদ্রা ইউয়ানে মূল্য পরিষদের জন্য তাগাদা দিচ্ছেন, কিন্তু বিষয়টি ভারতের জন্য রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল। ভারতের বেসরকারি পরিশোধনাগারগুলো ইউয়ানে মূল্য পরিশোধ করলেও রাষ্ট্রীয় পরিশোধনাগারগুলো দিরহামে মূল্য পরিশোধ করছে।
এই পরিস্থিতিতে রাশিয়া থেকে ভারতের তেল কেনা কমে গেছে, বেড়েছে মধ্যপ্রাচ্য থেকে তেল কেনা।
রাশিয়ার বড় তেল কোম্পানি রনসেফটের সঙ্গে আইওসির বার্ষিক তেল ক্রয় চুক্তি আছে। এ বিষয়ে উভয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে রয়টার্স যোগাযোগ করলেও তারা কেউ সাড়া দেয়নি।