ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান মেটা ভুয়া তথ্য ঠেকাতে নতুন উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। তারা জানিয়েছে, রাজনৈতিক প্রচারকেরা এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার আওতাধীন শিল্পের বিজ্ঞাপনদাতারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই–সংবলিত বিজ্ঞাপনী পণ্য ব্যবহার করতে পারবে না।
রয়টার্স জানিয়েছে, ফেসবুকের মাধ্যমে নির্বাচনের সময় অনেক ভুল তথ্য ছড়ানোর অভিযোগ আছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতারা বারবার সতর্কবাণী দিয়েছেন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আগমনের কারণে সেই আশঙ্কা আরও বেড়েছে। আগের সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বিজ্ঞাপনে প্রচারিত তথ্যের সত্যাসত্য নির্ধারণে ফেসবুক সচেষ্ট হলেও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে ফেসবুকের সুনির্দিষ্ট নিয়মকানুন ছিল না।
মেটা জানিয়েছে, গৃহায়ণ, কর্মসংস্থান, ঋণ, সামাজিক বিষয়াদি, নির্বাচন, রাজনীতি, স্বাস্থ্য ও আর্থিক সেবা খাতের বিজ্ঞাপনদাতারা অ্যাডস ম্যানেজার থেকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাচালিত বিজ্ঞাপন তৈরির সফটওয়্যার ব্যবহার করতে পারবে না।
সংবেদনশীল বিষয়ে বিজ্ঞাপন সম্প্রচারের ক্ষেত্রে জেনারেটিভ এআই ব্যবহার সীমিত করার নীতি গ্রহণ করা হয়েছে বলে মেটা জানিয়েছে। তাদের বিশ্বাস, সম্ভাব্য ঝুঁকির চরিত্র বোঝা ও তা প্রশমনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে এটি। তবে কিছুদিন আগেই আরেক ঘোষণায় মেটা বিজ্ঞাপনের প্রেক্ষাপট তৈরি, ছবি সমন্বয় ও টেক্সটের ভিত্তিতে বিজ্ঞাপনের কপি তৈরি করতে পারে—এমন ক্ষমতাসম্পন্ন এআইভিত্তিক বিজ্ঞাপনী সফটওয়্যার ব্যবহারের সীমা বাড়িয়েছিল।
সেই সফটওয়্যার প্রাথমিকভাবে শুধু বিজ্ঞাপনদাতাদের একটি ছোট গোষ্ঠীর জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছিল। আগামী বছরের মধ্যে বিশ্বের সব বিজ্ঞাপনদাতার জন্য তা উন্মুক্ত করা হবে বলেও জানিয়েছিল মেটা।
গত বছর চ্যাটজিপিটি নামক চ্যাট বটের আত্মপ্রকাশে যে উন্মাদনা তৈরি হয়, তার প্রতিক্রিয়ায় মেটা ও অন্যান্য প্রযুক্তি কোম্পানি জেনারেটিভ এআই–সংবলিত বিজ্ঞাপনী পণ্য ও ভার্চ্যুয়াল সহকারী চালু জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করে। চ্যাটজিপিটি অনেকটা মানুষের মতোই লিখিত প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে।
রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে, এআই ব্যবহারের নিরাপত্তা সম্পর্কে কোম্পানিগুলো এখন পর্যন্ত তেমন কোনো নির্দেশনা দেয়নি। ফলে মেটা রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন প্রচারের ক্ষেত্রে যে নির্দেশনা দিল, তা এখন পর্যন্ত এআই–সংক্রান্ত সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ।
মেটার শীর্ষ নীতি নির্বাহী নিক ক্লেগ গত মাসে বলেছিলেন, রাজনৈতিক বিজ্ঞাপনে জেনারেটিভ এআইয়ের ব্যবহার ‘স্পষ্টতই এমন একটি ক্ষেত্র, যেখানে আমাদের নিয়ম হালনাগাদ করতে হবে।’
যুক্তরাজ্যে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এআই–বিষয়ক সুরক্ষা সম্মেলনের আগে নিক ক্লেগ সরকার ও প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোকে সতর্ক করেছিলেন যে ২০২৪ সালের নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করার জন্য প্রযুক্তি যে ব্যবহার করা হবে, সে বিষয়ে তাদের প্রস্তুত থাকা উচিত। বিশেষ করে নির্বাচনসম্পর্কিত সেসব বিষয়বস্তুতে তিনি জোর দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন, যা এক প্ল্যাটফর্ম থেকে আরেক প্ল্যাটফর্মে ঘুরে বেড়ায়।
মেটা অবশ্য সব ধরনের কনটেন্টে এআই–সৃষ্ট ভিডিও ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, যদিও প্যারোডি ও ব্যঙ্গ রসাত্মক কনটেন্টের ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হয়েছে।
মেটার স্বাধীন পর্যালোচনা পর্ষদ বলেছে, এই সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা করা হবে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে নিয়ে বানানো একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পরিপ্রেক্ষিতে তারা এমনটা ভাবছে। সেই ভিডিও এআই দ্বারা তৈরি নয় বলে মেটা তা অনলাইনে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।