রাশিয়ায় মাখন চুরি ব্যাপকভাবে বেড়েছে। দেশটিতে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি ও পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মধ্যে অনেকেই মাখন চুরি করছেন। রাশিয়ার অর্থনীতি যে বড় সংকটের মধ্যে পড়েছে, এই চুরি তাকেই প্রতিফলিত করছে।
কোনো কোনো গণমাধ্যম বলছে, সাধারণ মানুষ অতিরিক্ত দামের কারণে মাখন কিনতে পারছেন না, ফলে তাঁরা তা চুরি করছেন। কিছু দোকান চুরি ঠেকাতে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, নিরাপত্তা–সংবলিত বাক্সের মধ্যে মাখনের প্যাকেট ঢুকিয়ে তা বিক্রি করা। ব্রিটিশ গণমাধ্যম এক্সপ্রেস এ খবর দিয়েছে।
রাশিয়ার রাজধানী মস্কো থেকে প্রকাশিত মস্কোভস্কি কমসোমোলেতস সংবাদপত্রে মাখন চুরি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘কিছ সুপারমার্কেটে দুগ্ধজাত পণ্য বিক্রির এলাকা থেকে মাখন সরিয়ে নিয়ে তা ক্যাভিয়ার বিক্রি করার বিশেষ ফ্রিজে রাখা হয়েছে। ওই ফ্রিজগুলো দোকানের বিল গ্রহণকারীর পাশে রাখা হয়।’
মস্কোভস্কি কমসোমোলেতস সংবাদপত্রে আরও বলা হয়েছে, কোনো কোনো চেইন শপে চুরি প্রতিরোধক বিশেষ বাক্সে মাখন রাখা হচ্ছে। একজন সুপারমার্কেট কর্মী সংবাদপত্রটিকে জানিয়েছে, মাখনের চুরি এখন বেশ অনেকটা বেড়ে গেছে। কখনো কখনো প্রতি ঘণ্টায় ১০–১৫ প্যাকেট মাখনও চুরি হয়ে যাচ্ছে।
আরেকটি রুশ সংবাদপত্র নেজাভিসমায়া জানিয়েছে, ডলারের বিপরীতে রাশিয়ার মুদ্রা রুবলের দাম অনেকটা কমে গেছে। মূলত যুক্তরাষ্ট্র নতুন দফার যেসব নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, সে কারণেই ডলারের এই মূল্যপতন হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে রুবল বেশ দুর্বল হয়েছে এবং একপর্যায়ে প্রতি ডলারের দাম দাঁড়ায় ১১৫ রুবলে। তবে গত কয়েক দিনে রুবলের দাম সামান্য বেড়েছে।
গণমাধ্যম কমারসান্ত জানিয়েছে, ক্রেমলিনের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়েছে যে রাশিয়ার রেলওয়েতে বিনিয়োগ কমে গেছে। ২০২৫ সালে রেলওয়ে খাতে বিনিয়োগ এক–তৃতীয়াংশ কমতে পারে বলে তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
গত সপ্তাহে রাশিয়ার আর্থিক খাতে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে মার্কিন অর্থ বিভাগ। বেশ কিছু ব্যাংক এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছে, যার মধ্যে রয়েছে বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠান গাজপ্রমব্যাংক।
রাশিয়ার সরকারি সংবাদপত্রগুলো সতর্ক করে দিয়ে বলেছে যে দেশটিতে সুদের হার আরও বাড়ানো হতে পারে। রুশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক এরই মধ্যে সুদের হার ২১ শতাংশে উঠিয়েছে, যা দেশটিতে সুদের হারের একটি রেকর্ড। সংবাদপত্রের খবরে বলা হয়েছে, চলতি ডিসেম্বরে সুদের হার ২৩ শতাংশে উন্নীত করা হতে পারে।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে রাশিয়ায় মূল্যস্ফীতি বেশ অনেকটা বেড়েছে। ফলে বেড়েছে অনেক খাদ্যপণ্যের দাম। স্তানিস্লাভ নামে মস্কোর একজন বাসিন্দা সিএনবিসিকে বলেন, ‘তিন বছর ধরেই মৌলিক খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ছে। প্রতিদিনই পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে, দাম বাড়ছে। বিশেষ করে চলতি বছরে মূল্য পরিস্থিতি বেশি খারাপ হয়েছে।’
মস্কোর ওই বাসিন্দা আরও বলেন, ‘অবশ্য পণ্যের দাম কমেছেও। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বাজরার দাম কমেছে। কোভিড মহামারির সময় ২০২০ সালে এই শস্যের দাম আরও অনেক বেশি ছিল। এখন এর দাম সেই সময়ের তুলনায় তিন গুণ কম। কিন্তু দাম কমার এটি একমাত্র উদাহরণ। অন্য সব খাবারের দাম বেড়ে চলেছে। আমার মনে হয়, প্রতিবছর ১০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত দাম বাড়ছে।’
রাশিয়ার রাজনৈতিক বিশ্লেষক আন্তন বারবাশিন বলেন, খাদ্য মূল্যস্ফীতির মানে হলো ‘রাশিয়ার অর্ধেক মানুষ আক্ষরিক অর্থে তাদের আয়ের বেশির ভাগই খাবার কেনার পেছনে ব্যয় করছে। সে কারণে মূল্যস্ফীতির চাপ তাঁরাই বেশি অনুভব করছে।’
আন্তন বারবাশিন আরও বলেন, পণ্যের মূল্যস্ফীতিই এখন সার্বিক মূল্যস্ফীতিকে বেশি অবদান রাখছে। সে কারণে মৌলিক পণ্য, খাদ্য ও ব্যক্তিগত ব্যবহার্য পণ্যের দাম বেশি বাড়ছে। এখন পর্যন্ত বেশির ভাগে রুশ নাগরিক যে কৌশল নিয়েছেন তা হলো ভোগ কমানো, নিম্ন মানের পণ্য কেনা এবং দীর্ঘ মেয়াদে কোনো পণ্য না কেনা।
এই রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতে, মূল্যস্ফীতির এই চাপ সব জায়গায় সমানভাবে অনুভব করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘মস্কোতে এই চাপ খুব একটা টের পাওয়া যাচ্ছে না। ছোট শহর ও গ্রামীণ এলাকার মানুষ বেশি কষ্টে আছে।’