মার্চ মাসে সে দেশের অর্থনীতি শূন্য দশমিক ১ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে। এরপর এপ্রিল মাসেও অর্থনীতি সংকুচিত হয়।
কিছুদিন আগেই খবর এল, বছরের প্রথম দুই প্রান্তিকে অর্থাৎ বছরের অর্ধেক সময় যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি সংকুচিত হয়েছে। এবার যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিবিদদের ওপর পরিচালিত এক জরিপ থেকে জানা গেল,বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে অর্থাৎ এপ্রিল-জুন সময়ে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি শূন্য দশমিক ২ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে।
চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি–মার্চ) যুক্তরাজ্যের প্রবৃদ্ধি হয়েছে শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ, কিন্তু প্রথম প্রান্তিকের শেষ অর্থাৎ মার্চ মাসে সে দেশের অর্থনীতি শূন্য দশমিক ১ শতাংশ সংকুচিত হয়। এরপর এপ্রিল মাসেও অর্থনীতি সংকুচিত হয়। তখনই ধারণা করা হয়েছিল, বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি অনেকাংশে সংকুচিত হবে।
যুক্তরাজ্যের জাতীয় পরিসংখ্যান সংস্থা অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিসটিকস (ওএনএস) বলেছে, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে সে দেশের মানুষ দৈনন্দিন ব্যয় কমিয়ে দিয়েছে। সেই সঙ্গে জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষ ভ্রমণও কমিয়ে দিয়েছে। বর্তমানে দেশটির মানুষ একদম প্রয়োজনীয় নয়, এমন সব ব্যয়ও কমিয়ে দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বছরের শেষ ভাগে নতুন করে দেশটিতে আবারও মন্দার আশঙ্কা করা হচ্ছে। অর্থনীতিবিদেরা বলেন, পরপর দুই প্রান্তিকে অর্থনীতি সংকুচিত হলে তাকে মন্দা হিসেবে ধরা হয়। খবর দ্য গার্ডিয়ানের।
* জুন মাসে ক্রেডিট কার্ডে ঋণের পরিমাণ গত প্রায় ১৭ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। * ক্রেডিট কার্ডে ঋণ বার্ষিক ১২ দশমিক ৫ শতাংশ হারে বেড়েছে।
তবে যুক্তরাজ্যের সরকারি পরিসংখ্যান সংস্থা ওএনএস এখনো দ্বিতীয় প্রান্তিকের পরিসংখ্যান প্রকাশ করেনি। আগামী শুক্রবার তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে পরিসংখ্যান প্রকাশের কথা।
এদিকে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড সম্প্রতি বলেছে, যুক্তরাজ্যের মূল্যস্ফীতি আগামী অক্টোবর মাসে ১৩ শতাংশে উন্নীত হতে পারে। এতে পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি হবে বলেই আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকেরা।
জুন মাসে ব্রিটেনের রানির ক্ষমতারোহণের ৭০ বছর পূর্তি উপলক্ষে দেশটিতে অতিরিক্ত ছুটি ছিল। এর প্রভাব যেমন পড়েছে, তেমনি উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণেও অর্থনৈতিক কার্যক্রম গতি হারাচ্ছে।
ব্রিটেনে এখন একধরনের রাজনৈতিক শূন্যতা বিরাজ করছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন পদত্যাগ করেছেন, নতুন প্রধানমন্ত্রী আসতে প্রায় এক মাস সময় লেগে যাবে। লিজ ট্রাস বা ঋষি সুনাক যে–ই প্রধানমন্ত্রী হোক না কেন, তাঁর প্রথম কাজ হবে মূল্যস্ফীতির প্রভাব প্রশমন করা; যদিও এখন পর্যন্ত তাঁদের অর্থনৈতিক বিতর্ক কর হ্রাস বা লন্ডনের বাইরের কর্মীদের মজুরি হ্রাস কেন্দ্র করে ঘুরপাক খাচ্ছে।
যুক্তরাজ্যের মানুষের সবচেয়ে বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে জ্বালানির মূল্য। বিভিন্ন সংস্থার পূর্বাভাস, আসছে শীতে দেশটির মানুষের পরিবারপ্রতি জ্বালানি ব্যয় ৩ হাজার ৬০০ ডলারে উঠতে পারে। এই পরিস্থিতিতে সে দেশের অনেক মানুষ জ্বালানি দারিদ্র্যের কবলে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন সম্প্রতি এক কলামে জরুরি ভিত্তিতে জ্বালানি বাজেট ঘোষণার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, পরিস্থিতি নির্মম, অনস্বীকার্য। বিষয়টি হলো ছয় মাসের মধ্যে যুক্তরাজ্যে দ্বিতীয়বার জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি করার কারণে দেশের সব পরিবার ধাক্কা খেয়েছ আর তাতে লাখ লাখ মানুষ খাদে পড়ে গেছে।
ক্রেডিট কার্ডে রেকর্ড ঋণ
এদিকে জীবনযাত্রার উচ্চ ব্যয়ের বাস্তবতায় যুক্তরাজ্যে ক্রেডিট কার্ডে লেনদেনের পরিমাণ বেড়ে চলেছে। চলতি বছরের জুন মাসে তা রেকর্ড স্পর্শ করেছে। সম্প্রতি ব্যাংক অব ইংল্যান্ড জানিয়েছে, চলতি বছরের জুন মাসে ক্রেডিট কার্ডে ঋণের পরিমাণ গত প্রায় ১৭ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। যুক্তরাজ্যে ক্রেডিট কার্ডে ঋণ বার্ষিক ১২ দশমিক ৫ শতাংশ হারে বেড়েছে। এর আগে ২০০৫ সালের নভেম্বরে এত দ্রুতগতিতে ক্রেডিট কার্ডে ঋণ বৃদ্ধির রেকর্ড হয়েছিল। খবর দ্য গার্ডিয়ানের।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ঋণ বৃদ্ধি ও সঞ্চয় হ্রাস—এই দুটি সূচক থেকে বোঝা যায়, যুক্তরাজ্যের পরিবারগুলো জীবনযাত্রার উচ্চ ব্যয়ের সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না। দেশটিতে মূল্যস্ফীতির হার এখন গত চার দশকের সর্বোচ্চ। রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে খাদ্য ও জ্বালানির দাম অব্যাহতভাবে ঊর্ধ্বমুখী। এর প্রভাব পড়েছে দেশটির মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয়ের ওপর।
এদিকে যুক্তরাজ্যের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুসারে, দেশটির মানুষের বাড়ি কেনার হার নিম্নমুখী। এটি মূলত ভবিষ্যতে ঋণ নেওয়ার একটি সূচক। মে মাসে বাড়ি কেনার অনুমোদন নেওয়া হয়েছিল ৬৫ হাজার ৭০০টি, জুনে তা কমে দাঁড়ায় ৬৩ হাজার ৭০০।
এদিকে কয়েক মাস ধরে মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে লড়াই করছে আমেরিকার অর্থনীতি। অর্থনীতিবিদদের একাংশের দাবি, গত চার দশকে সে দেশে এমন মূল্যস্ফীতি দেখা যায়নি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টানা কয়েকবার নীতি সুদহার বৃদ্ধি করেছে শীর্ষ ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ। এরপরও যেভাবে জিডিপি সংকুচিত হচ্ছে, তাতে নাগরিকদের একাংশ মনে করছেন, মন্দার দিকেই এগোচ্ছে অর্থনীতি, যার সরাসরি প্রভাব পড়তে পারে এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থানে।