বিশ্ববাজারে সোনার দাম বাড়ছে। মাঝে বছর দুয়েক মার্কিন ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধির কারণে সোনার দামে সেভাবে বাড়েনি। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ নীতি সুদহার হ্রাস করবে—বাজারে এমন খবর ছড়িয়ে পড়ার পর বিশ্ববাজারে সোনার দাম এখন দ্রুত বাড়ছে।
এসব কারণ ছাড়াও বাজারের আর কোন কোন ঘটনা সোনার মূল্যবৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলছে, তা দেখে নেওয়া যাক।
হিন্দুস্তান টাইমসের সংবাদে বলা হয়েছে, বিশ্ববাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভারতের বাজারেও সোনার দাম রেকর্ড উচ্চতায় উঠেছে। খাদহীন ১০ গ্রাম সোনার দাম দেশটির বাজারে ৬৫ হাজার ২৯৮ রুপি পর্যন্ত উঠেছে। কেবল চলতি মাসের প্রথম ১০ দিনে প্রতি ১০ গ্রাম সোনার দাম ২ হাজার ৭০০ রুপি করে বেড়েছে। এ পরিস্থিতিতে সোনা বিক্রিতে ভাটা পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিশ্ববাজারে সোনার দাম হঠাৎ তরতর করে বৃদ্ধির মূল কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে ডলার সূচকের মান পড়ে যাওয়া। বিশ্বের ছয়টি প্রধান মুদ্রার সাপেক্ষে ডলারের মান কত, তা নির্ধারণ করতে যে ডলার ইনডেক্স বা সূচক তৈরি করা হয়েছে, সেই সূচকের মান গত মাসে কমেছে। এ মাসে ডলার সূচকের মান ১০৪-এর নিচে নেমে এসেছে, এখন তার মান ১০৩ দশমিক ৮০।
ডলারের বিনিময় হার বাড়লে সোনার দাম কমে। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে সোনার দাম পড়েছে, যার অন্যতম কারণ ছিল ইনডেক্স সাপেক্ষে ডলার শক্তিশালী হওয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রে ১০ বছরের বন্ডের সুদহার ১৬ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ওপরে উঠে যাওয়া।
সোনার ব্যবহার কেবল অলংকার তৈরির মধ্যে সীমিত নয়; বরং বিনিয়োগের মাধ্যম হিসেবে সোনা আরও গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাংকের সুদহার বাড়লে বা শেয়ারবাজার শক্তিশালী হলে বিনিয়োগকারীরা এসবের মধ্যে বিকল্প বিনিয়োগের মাধ্যম খুঁজে পান। তখন সোনার চাহিদা কমে। সে কারণে ২০২২ ও ২০২৩ সালে বিনিয়োগকারীরা ডলারভিত্তিক বন্ডে বিনিয়োগ করেছেন। এখন ফেডারেল রিজার্ভ নীতি সুদহার হ্রাস করলে বন্ডের সুদহারও কমে যাবে, সে জন্য বিনিয়োগকারীরা আগেভাগে স্বর্ণে বিনিয়োগ করছেন।
তবে ফেব্রুয়ারি মাসে সামগ্রিকভাবে বিশ্ববাজারে সোনার দাম কমেছে; প্রতি আউন্স সোনার দাম গত মাসে শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ কমে ২ হাজার ৩২ ডলারে নেমে আসে। ভারতের বাজারেও গত মাসে সোনার দাম শূন্য দশমিক ৬৭ শতাংশ কমেছে।
এ ছাড়া কয়েক বছর ধরে বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর সোনা কেনা বাড়ছে, যদিও ২০২৩ সালে আগের বছরের চেয়ে কিছুটা কম সোনা কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো। গত বছর তারা সব মিলিয়ে ১ হাজার ৩৭ টন সোনা কিনেছে।
সোনার দাম বাড়ার সঙ্গে মূল্যস্ফীতির বিশেষ সম্পর্ক নেই বলেই গবেষকেরা মনে করেন। সোনার দাম বাড়ার মূল কারণ হলো ভয় ও আতঙ্ক। সেই ১৯৩০ সালের মহামন্দার সময় থেকেই দেখা যাচ্ছে, সংকট এলেই সোনার দাম বাড়তে থাকে। গোল্ড প্রাইজ ডটকমের তথ্যানুসারে, ১৯৭০ সালের সংকটের সময় সোনার দর আউন্সপ্রতি ৩৫ ডলার বেড়ে ৫২৫ ডলার হয়েছিল; ১৯৮০ সালে সেই দর হয় ৬১৫ ডলার। ১৯৯০ সালে সেটি অনেক কমে ৩৮৩ ডলারে নেমেছিল।
কিন্তু ২০০৮ সালে আবার অর্থনৈতিক সংকট দেখা দেওয়ার পর ২০১১ সালে সোনার দর অনেকটা বেড়ে যায়; তখন দাম ওঠে ১ হাজার ৯০০ ডলারে। মাঝে অবশ্য ২০১৫ সালের দিকে সোনার দাম ১ হাজার ৪৯ ডলারে নেমে এলেও বেশি দিন সেই দামে থাকেনি। এর পর থেকে দাম কেবল বেড়েছেই।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বলছে, মহামারির পর চলতি বছর সবচেয়ে কম হারে প্রবৃদ্ধি হবে। সেই সঙ্গে ফেডারেল রিজার্ভ নীতি সুদহার কমাবে—মূলত এ দুই কারণেই এখন হঠাৎ সোনার দাম বাড়ছে বলে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন।