যুক্তরাজ্যে রপ্তানির বড় সুযোগ

বড় সম্ভাবনা থাকলেও বাড়ছে না বাজার। মান সনদ পাওয়া থেকে শুরু করে পদে পদে জটিলতার কথা বলছেন রপ্তানিকারকেরা।

আগামী ২০২৬ সালে বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণের পরও যুক্তরাজ্যের বাজারে ২০২৯ সালের নভেম্বর পর্যন্ত সব ধরনের পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা মিলবে। এ ক্ষেত্রে দেশটির বাজারে হালকা প্রকৌশল খাতের (বাইসাইকেল, বৈদ্যুতিক পণ্য—সকেট, সুইচ, লাইট, লেড ব্যাটারি প্রভৃতি) রপ্তানি আয় বাড়ানোর বড় সুযোগ রয়েছে বলে মনে করে গবেষণা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (র‍্যাপিড)।

গতকাল বুধবার রাজধানীর হোটেল শেরাটনে র‍্যাপিড আয়োজিত ‘যুক্তরাজ্যের বাজারে রপ্তানি বৃদ্ধি: হালকা প্রকৌশল পণ্য’ শীর্ষক এক সভায় এসব কথা বলা হয়েছে। সভায় হালকা প্রকৌশল খাতের শীর্ষস্থানীয় রপ্তানিকারকেরা উপস্থিত ছিলেন। রপ্তানিকারকেরা পণ্য রপ্তানিতে মান সনদ পাওয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরেন। এর মধ্যে রয়েছে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা গড়ে তুলতে সুনামের অভাব, ছোট রপ্তানিকারকদের কাঁচামাল আমদানিতে বৈষম্যের শিকার হওয়া, অশুল্ক বাধা প্রভৃতি।

বাংলাদেশ ইলেকট্রিক্যাল মার্চেন্ডাইজ ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আফতাব জাবেদ বলেন, কাঁচামাল আমদানি করতে গেলে রাজস্ব কর্মকর্তাদের দ্বারা হয়রানির শিকার হতে হয়। এটা বন্ধ করতে হবে। আর রপ্তানি বাড়াতে গেলে কাঁচামাল আমদানিতে শুল্কহার শূন্য শতাংশ করা প্রয়োজন।

বাইসাইকেল রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান মেঘনা গ্রুপের প্রধান নির্বাহী এম এম এ তানভীর তিতাস বলেন, ইউরোপে বাইসাইকেলের ভালো রপ্তানি বাজার আছে। ইলেকট্রিক বাইকের চাহিদাও ভালো। এ জন্য সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।

র‌্যাপিডের চেয়ারম্যান এম এ রাজ্জাক বলেন, ‘কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশ থেকে ১ হাজার ১০৪ ধরনের হালকা প্রকৌশল পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা সাম্প্রতিক কালে কমে ৫৮২টিতে নেমে এসেছে। সর্বশেষ ২০২১-২২ অর্থবছরে এ খাতের রপ্তানি বাজার ছিল ৭৯ দশমিক ৬ কোটি ডলারের, যা আমাদের মোট রপ্তানির মাত্র দেড় শতাংশ। আর বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যের বাজারে যায় মাত্র ৫ দশমিক ৬ কোটি ডলারের পণ্য। এর মধ্যে ৫ দশমিক ১ শতাংশ আসে বাইসাইকেল থেকে। দেশটির মোট বাইসাইকেল আমদানির মাত্র শূন্য দশমিক শূন্য ২ শতাংশ বাংলাদেশ থেকে যায়।’

এম এ রাজ্জাক আরও বলেন, ‘যুক্তরাজ্য ২০২৯ সাল পর্যন্ত যে সুবিধা আমাদের মতো দেশের জন্য দিয়েছে, তা কাজে লাগাতে পারলে হালকা প্রকৌশলশিল্পে ভালো করা সম্ভব। বিশেষ করে আমাদের বাইসাইকেলের মতো পণ্যের কদর যুক্তরাজ্যে দিন দিন বাড়ছে।’

এদিকে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথমার্ধে হালকা প্রকৌশল পণ্যের রপ্তানি কমেছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে ২৬ কোটি ডলারের প্রকৌশল পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৪১ দশমিক ২৪ শতাংশ কম। অথচ ২০২১-২২ অর্থবছরে তার আগের বছরের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেশি রপ্তানি হয়েছিল।

বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প মালিক সমিতির সদস্যসংখ্যা ৩ হাজার ২০০। এর বাইরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে হাজার হাজার প্রতিষ্ঠান। সব মিলিয়ে সারা দেশে অর্ধলক্ষাধিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে বলে মনে করা হয়, যদিও ৯০ শতাংশ কারখানাই যন্ত্রপাতি মেরামত করে। বাকি ১০ শতাংশ খুচরা যন্ত্রাংশ উৎপাদন করছে।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আবদুর রহিম খান ও র‌্যাপিডের নির্বাহী পরিচালক এম আবু ইউসুফ। উপস্থিত ছিলেন পান্না গ্রুপের প্রধান নির্বাহী মো. আবু সাঈদ, কিট্টি ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদ মাহমুদ, সাইফ পাওয়ারটেকের করপোরেট বিক্রয় ও রপ্তানি বিভাগের প্রধান এ টি এম খালেদ নুর, সুপার স্টার গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন প্রমুখ।