মার্কিন ডলারের বিপরীতে ভারতীয় মুদ্রা রুপির মান সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে গেছে। গতকাল দিন শেষে মার্কিন ডলারের বিপরীতে রুপির মান দাঁড়ায় ৮৩ দশমিক ২৮। ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই) রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করেও রুপির দরপতন ঠেকাতে পারেনি।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার সংবাদে বলা হয়েছে, ইসরায়েল–হামাস সংকটের প্রভাবে ভারতীয় মুদ্রা রুপির দরপতন হয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এ সংকটে আশপাশের দেশগুলো জড়িয়ে পড়বে। সে কারণে অপরিশোধিত তেলের দাম যেমন বাড়ছে, তেমনি মার্কিন মুদ্রা ডলারও শক্তিশালী হচ্ছে।
ভারতের বিদেশি মুদ্রাবিশেষজ্ঞ কে এন দে টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেন, মুদ্রাবাজারে ইসরায়েল-হামাস সংকটের প্রভাব পড়েছে এবং সেই সংকটে অন্যান্য দেশ যদি জড়িয়ে পড়ে আর তা পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের রূপ নেয়, তাহলে তেলের দাম বেড়ে যাবে।
কে এন দে আরও বলেন, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এক সপ্তাহে দুবার ইসরায়েল সফর করেছেন এবং আগামী সপ্তাহে সৌদি আরবে অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো–অপারেশনের জরুরি বৈঠক হচ্ছে—এসব ঘটনাপ্রবাহ থেকে বোঝা যায়, সময় অস্থির।
এই মুদ্রাবিশেষজ্ঞের মত, এখন ভারতীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারে কতটা হস্তক্ষেপ করে, তার ওপর রুপির ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে। অর্থাৎ আরবিআই তার মজুত থেকে ডলার বিক্রি বন্ধ করে দিলে রুপির আরও দরপতন হবে—প্রতি ডলারের দর ৮৪ রুপিতে উঠে যেতে পারে।
মাঝে এক বছর রুপির দর অনেকটা স্থিতিশীল ছিল। এর আগে ২০২২ সালের অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের নীতি সুদহার বৃদ্ধির জেরে ডলারের বিপরীতে রুপির দর প্রথমবারের মতো ৮৩ ছাড়িয়ে যায়।
এদিকে বাজারে ডলারের সরবরাহ বৃদ্ধিতে গত বছর আরবিআই বেশ কিছু মুদ্রা বিনিময়ের চুক্তি করেছিল। বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, এসব চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো না গেলে বাজারে ডলারের সংকট আরও বাড়তে পারে।
তবে বিশ্লেষকেরা এ–ও বলছেন, ভারতের সামষ্টিক অর্থনীতির মৌলিক ভিত্তিগুলো অতীতের তুলনায় শক্তিশালী। অর্থাৎ গত বছর যখন মুদ্রা বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়, সেই সময়ের তুলনায় এবার ভারতের অর্থনীতির মৌল ভিত্তি আরও বেশি শক্তিশালী। সেপ্টেম্বরে ভারতের বাণিজ্যঘাটতি পাঁচ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন ১৯ দশমিক ৫ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৯৫০ কোটি ডলারে নেমে এসেছে।
এ ছাড়া জেপি মর্গ্যানের ইমার্জিং মার্কেট বন্ড সূচকে ভারত অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কারণে দেশটির ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। ফলে বিদেশি বিনিয়োগের দিক থেকে ভারতের অবস্থানের উন্নতি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।